‘ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস’- এই আপ্তবাক্যটাকে আবারও সত্যে পরিণত করলেন বাংলাদেশের তরুণ টাইগাররা। দু’দুটি ক্যাচ মিসই যুব বিশ্বকাপের স্বপ্নের ফাইনালে উঠতে দিল না বাংলাদেশকে। চতুর্থ ওভারেই মিস হয়েছিল ১৫ বলে ২৫ রানে থাকা গিডরন পোপের। তবে তার ক্যাচ মিসটা যতটা না, তার চেয়ে বেশি ভুগিয়েছে শ্যামার স্প্রিঙ্গারের ক্যাচ মিস। ৩৪তম ওভারের চতুর্থ বলে মাত্র ১৫ রানে থাকা স্প্রিঙ্গারের রিটার্ন ক্যাচটা যদি তালুতে ধরে রাখতে পারতেন সাইফুদ্দিন, তাহলে নিশ্চিত স্বপ্নের ফাইনালে ভারতের সঙ্গী হতো বাংলাদেশই।কিন্তু দু’দুটি ক্যাচ মিসই বাংলাদেশটে ছিটকে দিল সেমিফাইনাল থেকে। ১৫ রানে থাকা যে স্প্রিঙ্গারের ক্যাচ মিস হয়েছিল, সেই স্প্রিঙ্গারই শেষ পর্যন্ত ৮৮ বলে ৬২ রানে অপরাজিত থেকে জিতিয়ে দিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ২২৬ রানের লক্ষ্য দিয়ে ক্যাচ মিসের কারণে আর সেটাকে রক্ষা করতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজরা। ৮ বল বাকি থাকতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৩ উইকেটে হেরে সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হলো বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৯ দলের ক্রিকেটারদের।অথচ এই ওয়েস্ট ইন্ডিজকেই যুব বিশ্বকাপ শুরুর আগে হেসে-খেলে তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছিল মেহেদী হাসান মিরাজরা। বাংলাদেশের যুবাদের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি তারা। প্রতিটি ম্যাচেই বাংলাদেশ জিতেছিল অনেক বড় ব্যবধান হাতে রেখে। কিন্তু সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজই যুব বিশ্বকাপে এসে আমূল বদলে গেলো। গ্রুপ পর্বে ধুঁকতে থাকলেও, শেষ ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে লজ্জ্বার (ম্যানক্যার্ডি করে) জয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পরই দুর্ধর্ষ হয়ে ক্যারিবীয়রা। পাকিস্তানকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে তারা উঠেছিল সেমিফাইনালে।আগেরদিনই বাংলাদেশ দলের কোচ মিজানুর রহমান বাবুল প্রত্যাশা করেছিলেন, মিরপুরের উইকেটে আড়াইশ’ রান করা গেলেই জয় প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু পরেরদিন মাঠে নেমে কোচের প্রত্যাশাকে পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। শুরু থেকেই আত্মহত্যার মিছিলে শরিক হয়েছিল যেন তারা। তবুও অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ আর সাইফুদ্দিনের ৮৫ রানের জুটি বাংলাদেশকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেয়। প্রত্যাশার বেলুন অবশ্য তখনই ফুটো করে দিয়েছিলেন কেমু পল। একই ওভারে পরপর দুই সেট ব্যাটসম্যান মেহেদি হাসান মিরাজ এবং সাইফুদ্দিনকে ফিরিয়ে দেন কেমু পল। ওই সময়ই বাংলাদেশের বড় স্কোরের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়। অন্তত আড়াইশ’ রানের যে লক্ষ্য ছিল, তখনই তাকে শেষ করে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই পেসার। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের সংগ্রহ গিয়ে ঠেকলো ২২৬ রানে। এই চ্যালেঞ্জ তাড়া করতে নেমে শুরুটা ক্যরিবীয় যুবাদের ছিল দুর্দান্ত। দুই ওপেনার গিডরন পোপ আর টেভিন ইমল্যাক যেন দ্রুতই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জয় এনে দেবেন- এমন পণ করেই মাঠে নেমেছিলেন। যদিও তাদের ৫ ওভারে ৪৪ রানের জুটিতে প্রথম ধাক্কা দেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ। টেভিন ইমল্যাক এবং গিডরন পোপকে ফেরান তিনিই। ২৫ রানে ক্যাচ মিস হওয়া গিডরন শেষ পর্যন্ত ২৫ বলে করেন ৩৮ রান। মিরাজের জোড়া আঘাতের পর ক্যারিবীয় শিবিরে আঘাত হানেন সালেহ আহমেদ শাওন। ভয়ংকর হয়ে ওঠা কার্টিকে (২২) সাজঘরে ফেরান তিনি। এর মধ্য দিয়ে শিমরন হেতমায়ের আর কেচি কার্টির ৬২ রানের জুটি ভেঙ্গে টাইগার যুবাদের খেলায় ফেরাল শাওন।কার্টি আউট হয়ে গেলেও ৫৯ বলে ৬০ রান বাংলাদেশের সামনে রীতিমত আতঙ্কের নামে পরিণত হয়ে উঠছিলেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক শিমরন হেতমায়ের। ৭টি বাউন্ডারি আর ১টি ছক্কায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকেই জয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। অবশেষে হেতমায়েরকে সাজঘরের পথ দেখালেন সাইফুদ্দিন। ২৮তম ওভারের ৩য় বলটি ছিল স্লো। হেতমায়ের বিগ শটই খেলতে চেয়েছিলেন।কিন্তু বল ব্যাটের কানায় উপরে উঠে গেলেন সাইফ হাসান দুর্দান্ত এক ক্যাচে পরিণত করেন হেতমায়েরের সেই শটকে। ১৪৭ রানে পড়লো ওয়েস্ট ইন্ডিজের চতুর্থ উইকেট।এরপর পঞ্চম উইকেট জুটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধীরে ধীরে জয়ের দিকেই নিয়ে যাচ্ছিল শ্যামার স্প্রিঙ্গার এবং জিড গুলি। দু’জনের ৩০ রানের জুটি যখন বাংলাদেশের সামনে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিল, তখনই ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হলেন সালেহ আহমেদ শাওন। ৩৮তম ওভারে তার জোড়া আঘাতে সাজঘরে ফিরে গেলেন জিড গুলি এবং কেমু পল। ১৭৭ রানে গুলিকে ফেরানোর কেমু পলকে আউট করলেন ১৮১ রানের মাথায়।বাকি কাজ শেষ করতে শ্যামার স্প্রিঙ্গার সঙ্গী হিসেবে নেন মিচেল ফ্রিউকে। দু’জনের ৩৬ রানের জুটিই ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয় নিশ্চিত করে দেয়। শেষ দিকে বাংলাদেশের বোলাররা বেশ চেপে ধরেছিল ক্যরিবীয়দের। তবুও ধীরে ধীরে খেলে স্প্রিঙ্গাররা ক্যরিবীয়দের নিয়ে যান জয়ের বন্দরে। ৪৭তম ওভারের প্রথম বলে ফ্রিউকে সাইফুদ্দিন সাজঘরে ফেরালেও তাদের জয়ের পথে আর বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি মিরাজরা।সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ডবাংলাদেশ: ২২৬/১০, ৫০ ওভার (পিনাক ০, সাইফ হাসান ১০, জয়রাজ শেখ ৩৫, নাজমুল হোসেন শান্ত ১১, জাকির হাসান ২৪, মেহেদী হাসান মিরাজ ৬০, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ৩৬, সাঈদ সরকার ৩, মোসাব্বেক হোসেন ১৪, মেহেদী হাসান রানা ১০*, সালেহ আহমেদ শাওন ১; কেমু পল ৩/২০, স্প্রিঙ্গার ২/৩৬, শিমার হোল্ডার ২/৩৬, রায়ান জন ১/২৯, জোসেপ ১/৩৩)।ওয়েস্ট ইন্ডিজ: গিডরন পোপ ৩৮, টেভিন ইমল্যাক ১৪, হেতমায়ের ৬০, কার্টি ২২, স্প্রিঙ্গার ৬২*, গুলি ৯, কেমু পল ৪, ফ্রিউ ১২, রায়ান জন ২*; সালেহ আহমেদ শাওন ৩/৩৭, সাইফুদ্দিন ২/৪৬, মেহেদী হাসান মিরাজ ২/৫৭)। ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩ উইকেটে জয়ী (৮ বল হাতে রেখে)।ম্যাচ সেরা: শ্যামার স্প্রিঙ্গার।আইএইচএস/পিআর