বিশেষ প্রতিবেদন

বনানীতে এসআইয়ের গাড়ি চালকের চাঁদাবাজি

নাম মো. শহীদ। পেশায় পুলিশের বনানী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইহানের ড্রাইভার। তবে মানুষকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদা নেয়াকেই প্রথম পেশা হিসেবে নিয়েছেন শহীদ। বাদ যায়নি এলাকার মাদক সম্রাটরাও। এলাকায় মাদক ব্যবসা করতে হলে সাপ্তাহিক টাকা দিতে হয় তাদেরকেও। বস্তিবাসী ও এলাকার হিজড়ারাও তার চাঁদাবাজির আওতাভুক্ত।জাগো নিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুলিশের ড্রাইভার ও কথিত সোর্স শহীদকে ২০০৫ সালে বিস্ফোরক ও অস্ত্রসহ বনানী-২ এর হিন্দুপাড়ার বস্তি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে জামিনে বের হওয়ার পর থেকেই শহীদ পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতে থাকেন। এরপর ড্রাইভার। বনানীর আগে তিনি গুলশান থানার সোর্স ও এসআই সোহেল রানার ড্রাইভার হিসেবে কাজ করতেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, বনানীর কড়াইলের বটতলার জলিলের মাদক স্পট, শাহ আলমের মাদক স্পট, টিঅ্যান্ডটি বাজারে পাগলীর মাদক স্পট, আরশাদ নগর বস্তির জরিনার মাদক স্পট, এক নম্বর গোডাউন বস্তির ময়নার মাদকস্পটসহ বেশ কিছু জায়গা থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করেন শহীদ। তাদেরকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার নামে সাপ্তাহিক ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা নেন তিনি। সর্বশেষ গত সপ্তাহে মাদক সাম্রাজ্ঞী ময়নার মাকে পুলিশের ধরিয়ে দেয়ার নামে ৫০ হাজার টাকা আদায় করেন তিনি।শহীদের বিভিন্ন ধরনের অপকর্মের জন্য গত ১৭ ডিসেম্বর বনানীর এক নম্বর গোডাউনের বাসিন্দাদের পক্ষে মোস্তফা কামাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে একটি চিঠি দেন।অভিযোগের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বনানী এলাকার মো. শহীদ, মো. হৃদয়, মো. ইয়াসিন ও মো. উজ্জ্বল এক নম্বর রোড, ২০ নম্বর ওয়ার্ডসহ বনানী এলাকায় চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক, নারী ব্যবসাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত। শহীদ সব সময় অবৈধ অস্ত্র নিয়ে চলাচল করেন। কেউ এ সব ব্যাপারে প্রতিবাদ করলে তাকে হেনস্তা করে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। অনেক আগে শহীদ অবৈধ অস্ত্র নিয়ে র্যাবের কাছে গ্রেফতার হন। পরে জামিনে বের হওয়ার পর সে তার দল নিয়ে আবারো অপরাধ কর্মকাণ্ড করতে থাকেন। শহীদ ও তার দলের বিরুদ্ধে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিক মামলা আছে।শহীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে বনানী থানায়। তবে তার বিরুদ্ধে নেয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। শহীদের বাড়ি বনানীর টিঅ্যান্ডটি মাঠের এক নম্বর গোডাউন বস্তিতে। ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানা যায়, পুলিশের ড্রাইভার ও সোর্স হওয়ার পর থেকে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, জুয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড বেড়েই চলেছে। তার বাসায় প্রতিরাতে জুয়া খেলা হয়। কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বললেই গ্রেফতারের ভয় দেখান তিনি। সন্ত্রাসীদের থেকে শহীদকেই সবাই বেশি ভয় পায়।এসব অপকর্মের বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদ জাগো নিউজকে বলেন, আমি বনানী থানায় পুলিশের গাড়ি চালাই। যে এসব অভিযোগ দিয়েছেন তিনি মিথ্যা বলেছেন। আমিতো শুধু ড্রাইভিং করি। এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।তিনি আরো বলেন, আমি বনানী থানায় স্যারদের (পুলিশ) সঙ্গে গাড়ি চালিয়ে অনেক জায়গায় যাই বলে অনেকে সোর্স মনে করেন। কিন্তু আমি সোর্স না। আমি শুধু স্যারদের গাড়ি চালাই। শহীদের অপকর্মের বিষয়ে পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। এসব ঘটনায় কোনো পুলিশ সদস্য জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের ডিসি মো. মারুফ হোসেন সরদার জাগো নিউজকে বলেন, যদি সোর্স পরিচয়ে সাধারণ মানুষকে কেউ হয়রানি কিংবা চাঁদাবাজি করনি সেই অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।এআর/এমজেড/জেএইচ/পিআর