দেশজুড়ে

নওগাঁয় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী যন্ত্র আবিষ্কার

বিদ্যুৎ দিয়ে পানি গরম করার সময় অসাবধানতার কারণে পানি বিদ্যুতায়িত হয়ে প্রতি বছরই ঘটে নানান দুর্ঘটনা। বিদ্যুৎ খরচও হয় ব্যাপক। দুর্ঘটনা, বিদ্যুৎ সাশ্রয় ও স্বল্প মূল্যে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে পানি গরম করার নতুন এক যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন নওগাঁর তরুণ উদ্ভাবক এসএম ইব্রাহীম হোসেন রাজু। পানি থেকে বিদ্যুৎ তৈরি হলেও বিদ্যুৎ ও পানি একে অপরের প্রতিরোধক। এ জন্যই রাজু দেশীয় প্রযুক্তি দিয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও বিদ্যুৎ নিরোধক এ যন্ত্রটি আবিষ্কার করেছেন। এ যন্ত্রটিতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা নেই। রাজুর মায়ের নাম অনুসারে এই যন্ত্রটির নাম দিয়েছেন `নূরজাহান বালতি`। এসএম ইব্রাহীম হোসেন রাজু জানান, বর্তমানে বাজারে ট্যাংকসহ ও ট্যাংকবিহীন ওয়াটার হিটার আছে। এই হিটারগুলো গ্যাস এবং বিদ্যুৎ দিয়ে ব্যবহার করা যায়।তিনি বলেন, শীতে ঠান্ডা পানি ব্যবহারের কষ্টকে দূর করতে গরম পানির সহজ ব্যবস্থার আরেকটি ইলেকট্রিক যন্ত্র হচ্ছে গিজার। পানি গরম করার আধুনিক মেশিন গিজার। ওয়াটার হিটার ট্যাংকের দাম বেশি হওয়ায় সবার পক্ষে কিনে ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। বিদ্যুৎ খরচও বেশি হয়, দামও সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে। আবার পানি বিদ্যুতায়ন হয়ে ঘটে নানান দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনা রোধে এবং সাধারণ মানুষদের স্বল্প মূল্যে কেনার কথা চিন্তা করে ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী করতেই প্রায় পনেরো দিন আগে তিনি এই যন্ত্রটি আবিষ্কার করেছেন।বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির যে পানি গরমের হিটার পাওয়া যায় তা নষ্ট হলে যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না। আবার এক হাজার ওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন পানি হিটারের সর্বনিম্ন দাম ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। অথচ বাজার থেকে ২০ লিটারের একটি প্লাস্টিকের বালতি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায় কিনে এবং দেশীয় প্রযুক্তি দিয়ে তার উদ্ভাবনকৃত যন্ত্রটিতে ১৯০ টাকার মতো খরচ করে তৈরি হয় `নূরজাহান বালতি`। সর্বমোট সাড়ে ৩শ টাকার মত খরচ হয়। এ যন্ত্রের কোনো যন্ত্রাংশ নষ্ট হলে নষ্ট যন্ত্রাংশটি সহজে পরিবর্তন করাও সম্ভব।শহরের হাট-নওগাঁ মহল্লার শিক্ষক আবু সুবাইব, মানিক হোসেন, মুরাদ হোসেনসহ অনেকে জানান, তাদের পরিবারে ১০দিন থেকে এই বালতি দিয়ে পানি গরম করছেন। পানিতে হাত দিলেও কোনো বৈদ্যুতিক শক করে না।তারা বলেন, সরকার যদি এই যন্ত্রের দিকে নজর দেয় তাহলে দেশে অনেক বিদ্যুৎ খরচ কম হবে। পাশাপাশি পানি গরম করতে বিদ্যুতের সাশ্রয় হবে। সাধারণ মানুষরাও স্বল্প মূল্যে পানি গরম করার এই যন্ত্রটি কিনতে পারবে। উদ্ভাবক এসএম রাজু জানান, তার এই যন্ত্রটি বাড়ি, বিভিন্ন কারখানা, গার্মেন্টসের বড় বড় ট্যাংকগুলোতে ব্যবহার করা যাবে। একশটি পরিবার ১ ঘণ্টা ব্যবহার করে তাহলে বাজারে যে সব পানি গরমের হিটার পাওয়া যায় তার চেয়ে ২৪ ইউনিট বিদ্যুৎ কম খরচ হবে। অন্যদিকে বেশি গরম পানিও পাওয়া যাবে। একইভাবে দেশের বিভিন্ন গার্মেন্টস বা কারখানা এই যন্ত্রটি ব্যবহার করতে গেলে সেভাবেই তৈরি করা সম্ভব। এতে হাজার হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ কম হবে।রাজু আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকার যদি এই যন্ত্রটি বাজারজাত করতে এগিয়ে আসে তাহলে শত শত ইউনিট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে।নতুন এই যন্ত্রটিতে ইন্ট্রিগেটর, ফিউজ, হিটার/কয়েল ব্যবহৃত হয়েছে। যন্ত্রটিতে সাড়ে ৭শ ওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন হিটার ব্যবহার করে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ লিটার পানি গরম করতে মাত্র পৌনে এক ইউনিট (শূন্য দশমিক ৭৫ ইউনিট) খরচ হয়। পানির পরিমাণ বেশি হলে প্রয়োজনের তুলনায় কিছুটা সময় কম লাগবে। অথচ বাজারে যে সব কোম্পানির সর্বনিম্ন এক হাজার ওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন হিটার পাওয়া যায় সেগুলো ঘণ্টায় এক ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়। সেখান থেকে গরম পানি পাওয়া যায় মাত্র ৫০ থেকে ৬০ লিটার। আব্বাস আলী/এফএ/এসএস/পিআর