দেশজুড়ে

মিরসরাইয়ে দুই সেতু বদলে দিতে পারে ৪০ হাজার মানুষের ভাগ্য

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার সাহেরখালী এবং বামনসুন্দর খালে সেতু নির্মাণ হলে বদলে যাবে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের ভাগ্য। সেইসঙ্গে পাল্টে যাবে ওই এলাকার অর্থনীতির চিত্রও। খাল দুটির ওপর কোনো সেতু না থাকায় স্বাধীনতার পর থেকে সাঁকো দিয়ে চলাচল করছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।

জানা গেছে, উপজেলার মায়ানী ও সাহেরখালী ইউনিয়ন ঘেঁসে যাওয়া সাহেরখালী খালের দুইপাড়ে ৩০ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস। তাদের চলাচলের জন্য ওই খালের ওপর থাকা বাঁশের সাঁকোই একমাত্র ভরসা। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও একটি সেতুর মুখ দেখলো না দুই ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী অবহেলিত এই এলাকার মানুষ।

এলাকাবাসী জানান, সরকার আসে সরকার যায় কিন্তু প্রতিশ্রুতি রয়ে যায় মুখে মুখেই। জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচনের আগে সেতু করার ওয়াদা দিলেও নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে গেলে আর খবর রাখেন না। দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছর ধরে এই সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করছেন প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এতে প্রায়ই ঘটছে ছোট-খাটো দুর্ঘটনা। সাঁকো থেকে পড়ে অনেকে আহতও হয়েছেন। জেলেরা মাছ ভর্তি খাঁচা নিয়ে খালে পড়ার ঘটনা অহরহ। এছাড়া কৃষিপণ্য বহন, অসুস্থ রোগীদের নিয়ে দুর্ভোগে পড়তে হয়। আর বর্ষা আসলে এই দুর্ভোগ হয় দ্বিগুণ।

স্থানীয় সম্ভু জলদাস বলেন, সাহেরখালী কাচতালুক জলদাসপাড়া, মায়ানী জয়নগর জলদাসপাড়া, মায়ানী মির্জানগর জলদাসপাড়ার মানুষের একমাত্র যোগাযোগের সড়ক এটি। এই সাঁকোর ওপর যদি একটি ব্রিজ নির্মাণ হয় তাহলে আমাদের কষ্ট লাঘব হবে।

স্থানীয় বাহার মিয়া বলেন, ভোট এলে জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের আশ্বাস দেন। পরে আর খোঁজ রাখেন না। তাই স্বেচ্ছাশ্রম ও নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত সাঁকোই এখন ভরসা। তবে ভরা বর্ষায় সাঁকোটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তখন তাদের ঝুঁকি নিয়েই পার হতে হয়। তারা অবিলম্বে সাঁকোর স্থলে সেতু নির্মাণে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এদিকে, স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও একটি সেতু পায়নি মিরসরাইয়ের মিঠানালা ইউনিয়নের পশ্চিম মলিয়াইশ গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ। ওই গ্রামের বামনসুন্দর খালে একটি সেতুর অভাবে মৎস্য চাষ, পশুপালন ও কৃষিকাজ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সেতুর অভাবে মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। বিশেষ করে বর্ষাকালে গ্রামের মানুষকে ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পার হতে হয়। এছাড়া ছোট ছেলেমেয়েরা ভয়ে সাঁকো পার হয়ে বিদ্যালয়ে যেতে চায় না।

এলাকার বাসিন্দা হাসান সাইফ উদ্দিন বলেন, মিঠানালা ইউনিয়নের পশ্চিম মলিয়াইশ গ্রামের বামনসুন্দর খালের ওপর একটি বাঁশের সাঁকো রয়েছে। খালের পশ্চিম পাশে রয়েছে হাজার একর কৃষি জমি। চাষাবাদ ছাড়াও কয়েক হাজার একক খাস জমিতে পশু পালন করা হয়। রয়েছে মৎস্য প্রকল্প। এখানকার উৎপাদিত মাছ নিজ উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে চট্টগ্রাম শহরে সরবরাহ করা হয়। এছাড়া রয়েছে একটি গ্রাম। ওই গ্রামে হাজারো মানুষ বাস করে। সেতু না থাকায় মৎস্য চাষিদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

আলতাফ হোসেন পলাশ নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, বর্ষাকালে খালের পানি বেড়ে গেলে মানুষের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। তখন বানের পানির স্রোতে বাঁশের সাঁকো ভেঙে যায়। ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েরা বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। এক রকম বন্দি জীবনযাপন করে।

এ বিষয়ে মায়ানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির আহম্মদ নিজামী বলেন, সাহেরখালী খালের ওপর দুই বছর আগে ব্রিজ নির্মাণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন হয়ে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় গিয়েছিল। পরবর্তীকালে আর্থিক সংকট দেখিয়ে এই ব্রিজের বরাদ্দ এবং অনুমোদন বাতিল করা হয়। এরইমধ্যে পুনরায় প্রস্তাব করা হয়েছে। আশা করছি, চলতি অর্থবছরে অনুমোদন হয়ে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে।

অন্যদিকে, মিঠানালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, পশ্চিম মলিয়াইশ গ্রামের বামনসুন্দর খালের ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণ প্রয়োজন। বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

মিরসরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন বলেন, সাহেরখালী ও মিঠানালা ইউনিয়নে খালের ওপর দুটি ব্রিজ নির্মাণ খুবই জরুরি। আমরা এরইমধ্যে এ বিষয়ে সমন্বয় সভায় আলোচনা করেছি। আশা করছি, সাহেরখালী খালের ওপর ব্রিজটি কিছুদিনের মধ্যে নির্মাণের জন্য প্রক্রিয়া শুরু হবে।

এমআরআর/জিকেএস