ভৈরবে কাজে আসছে না ইউনিয়ন কৃষি আবহাওয়া তথ্য বোর্ড ও রেইনগজ মিটার। নিয়মানুযায়ী, কৃষিভিত্তিক আবহাওয়ার নানা তথ্য বোর্ডে হালনাগাদ থাকার কথা। কিন্তু কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন পরিষদে লাগানো বোর্ডগুলো অচল হয়ে পড়ে আছে।
কৃষি আবহাওয়া বিষয়ক নির্ভরযোগ্য তথ্য কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দিতে দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো ভৈরবের বিভিন্ন ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়েছিল কৃষি আবহাওয়ার তথ্য বোর্ড। বোর্ডে রয়েছে আগে ও পরের তিনদিনের কৃষিভিত্তিক আবহাওয়ার হালনাগাদ তথ্যের নানা ছক। আর ভবনের ছাদে বসানো হয়েছে রেইনগজ মিটার ও সৌরবিদ্যুতের প্যানেল। কিন্তু এসব কোনো কাজে আসছে না কৃষকদের। ব্যবহার না থাকায় অকেজো হয়ে পড়েছে তথ্য বোর্ডের যন্ত্রপাতি।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ভৈরব কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর দেশজুড়ে ‘কৃষি আবহাওয়া তথ্যপদ্ধতি উন্নতিকরণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেয়। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন উপজেলায় ৪ হাজার ৫১টি ইউনিয়নে স্বয়ংক্রিয় রেইনগজ ও কৃষি আবহাওয়া তথ্য বোর্ড, ৪৮৭টি উপজেলায় স্থাপন ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের আবহাওয়া বিষয়ক তথ্য পাঠানোর জন্য ইন্টারনেট সংযোগসহ ৬ হাজার ৬৬৪টি ট্যাব সরবরাহ করা হয়। এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ছিল ১১৯ কোটি টাকা। প্রকল্পটির প্রথম পর্যায় শেষ হয় ২০২১ সালের জুন মাসে।
প্রকল্পের আওতায় সে সময় ভৈরব উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের প্রতিটি ইউপি ভবনের ছাদে স্থাপন করা হয়েছিল স্বয়ংক্রিয় রেইনগজ মিটার ও সৌরবিদ্যুতের প্যানেল। আর ইউপি ভবনের দর্শনীয় স্থানে স্থাপন করা হয়েছিল আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার তথ্য বোর্ড। এই বোর্ডের মাধ্যমে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ, ঝড়ের পূর্বাভাস, আলোক ঘণ্টাসহ ১০টি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও তা প্রকাশের ব্যবস্থা রয়েছে। এই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মাঠপর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, আগে ও পরের তিনদিনের কৃষিভিত্তিক আবহাওয়ার নানা তথ্য এই বোর্ডে হালনাগাদ থাকার কথা থাকলেও সরেজমিনে গিয়ে সেসব বোর্ডে কোনো নিয়মিত তথ্য পাওয়া যায়নি। এর মধ্য পাঁচটি বোর্ডের যন্ত্রাংশ অচল হয়ে পড়ে আছে।
এই উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্য সাদেকপুর, কালিকাপ্রসাদ, গজারিয়া, আগানগর, শিবপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে আবহাওয়া তথ্য বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া বাকি দুটি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন না থাকায় অন্যত্র আবহাওয়া তথ্য বোর্ড স্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু বোর্ডগুলো অচল হয়ে পড়ে আছে।
উপজেলার ইউপি ভবনগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, ইউপি ভবনের ছাদে ড্রামাকৃতির একটি যন্ত্র বসানো আছে, সঙ্গে রয়েছে সৌরবিদ্যুতের প্যানেল। আর কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাসের জন্য তথ্য বোর্ড রয়েছে ভবনের নিচতলায়। কিন্তু কোনো বোর্ডে হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়নি। কোথাও কোথাও স্বয়ংক্রিয় রেইনগজ মিটার ও সৌরবিদ্যুতের প্যানেল অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। আবার কোথাও কোথাও সেসব যন্ত্র খোয়া গেছে। দেখভাল করার মতো কেউ নেই।
সাদেকপুর গ্রামের কৃষক মো. বাছির ভূইঁয়া বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষকদের ফসল ফলানোর সুবিধার জন্য প্রতিটি ইউনিয়ন অফিসে যে আবহাওয়ার তথ্য জানাতে বোর্ড লাগানো হয়েছে সেটা তো আমরা জানতাম না। যদি এর মাধ্যমে আবহাওয়ার খোঁজ-খবর জানতাম তাহলে জমিতে ফসল উৎপাদনে সহায়ক হিসেবে কাজ করতো।
সাদেকপুর ইউনিয়নে কর্মরত উপজেলার কৃষি বিভাগের মাঠকর্মী মো. কামাল মিয়া বলেন, তথ্য বোর্ডটি চালুর পর নিয়মিত আবহাওয়ার তিনদিন আগের ও পরের পূর্বাভাস জানানো হতো। কিন্তু দুই বছর সচল থাকার পর হঠাৎ করে বোর্ডের একটি যন্ত্র অচল হয়ে যাওয়ায় পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।
সাদেকপুর ইউপি সচিব প্রদীপ কুমার দাস বলেন, দুই বছর আগে আবহাওয়ার তথ্য বোর্ডটি চালু হয়েছে। তবে এখন আর বোর্ডের আবহাওয়ার তথ্য আপডেট করা হয় না। তবে এই তথ্য বোর্ডটি নিয়ন্ত্রণে তিনজন কৃষিবিভাগের মাঠকর্মী নিয়োজিত আছেন। তারাই এই বোর্ডের তথ্য আপডেটসহ নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন। কেন আবহাওয়ার তথ্য নিয়মিত দেওয়া হয় না সে বিষয়ে তারাই বলতে পারবেন।
শিমুলকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের নতুন ভবনের কাজ করার সময়ে উপজেলা কৃষিবিভাগের পক্ষ থেকে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানানোর জন্য তথ্য বোর্ডটি জন্য স্থাপন করা হয়েছিল। শুরুর দিকে নিয়মিত আবহাওয়ার পূর্বাভাস তথ্য বোর্ডের মাধ্যমে জানানো হতো। কিন্তু এখন সেই তথ্য বোর্ড অচল হয়ে পড়ে আছে। সেখানে কোনো তথ্য দেওয়া হয় না।
গজারিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম শাহারিয়ার বলেন, মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা রোদ-বৃষ্টির আগাম তথ্য সঠিক সময়ে পেলে ফসল ফলাতে অনেক সুবিধা হতো। কিন্তু কৃষি বিভাগের যে আবহাওয়ার তথ্য বোর্ড রয়েছে সেটা তো অচল হয়ে পড়ে আছে। তাই কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীরা আবহাওয়ার আগের ও পরের তিনদিনের তথ্য নিয়মিত দিতে পারছেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভৈরব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা বেগম বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে কৃষকদের ফসল ফলানোর সুবিধার্থে আবহাওয়ার আগের ও পরের তিনদিনের রোদ-বৃষ্টির পূর্বাভাস জানাতে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে তথ্য বোর্ড ও রেইনগজ মিটার রয়েছে। স্থাপন করার সময়ে দুটি ইউনিয়ন ভবনের নির্মাণ কাজ চলায় অন্যত্র তথ্য বোর্ড ও রেইনগজ মিটার স্থাপন করা হয়েছিল। বর্তমানে কয়েকটি ইউনিয়নের রেইনগজ মিটার ও তথ্য বোর্ডে বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে নিয়মিত তথ্য দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যার ফলে সেসব ইউনিয়নে কৃষকরা আবহাওয়ার তথ্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
তবে যে কয়টি আবহাওয়া তথ্য বোর্ড ও রেইনগজ মিটার সচল রয়েছে সেসব বোর্ড থেকে কৃষকরা নিয়মিত তথ্য পাচ্ছেন বলে তিনি দাবি করেন। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে কৃষি বিভাগের কর্মীরা কৃষকদের সরাসরি বিভিন্ন ধরনের সেবা ও সহযোগিতা করছেন বলেও তিনি জানান।
এমআরআর/জেআইএম