মাদারীপুর সদর উপজেলার তাঁতীবাড়ী এলাকায় শতবর্ষী এক বৃদ্ধাকে রাস্তার পাশে ফেলে গেছেন তার ছেলে। এরপর ওই বৃদ্ধা স্থানীয় করবস্থানে চারদিন থাকার পর মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) সকালে অসুস্থ হয়ে পড়লে এলাকাবাসী, সাংবাদিক ও পুলিশের সহযোগিতায় মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বৃদ্ধার নাম ও পরিচয় জানা যায়নি। তবে তার বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার আমগ্রামে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় তেমন কিছু বলতে পারেননি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের তাঁতীবাড়ী ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে ওই বৃদ্ধাকে ফেলে যান তার ছেলে। পরে এলাকাবাসী উদ্ধার করে পাশের একটি বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করান। তবে তিনি কারও বাড়িতে না থেকে রাস্তার পাশে কবরস্থানে গিয়ে মাটিকে শুয়ে থাকতেন। স্থানীয়রা তাকে কাঁথা দিলে তা শরীরে পেঁচিয়ে রাতেও ওই কবরস্থানেই ঘুমাতেন।
গত দুইদিন আগে কবরস্থানের পাশে সড়কে গেলে একটি ভ্যানের সঙ্গে ধাক্কা লেগে আহত হন ওই বৃদ্ধা। এরপর আর কারও সঙ্গে কথা বলতে পারছেন না তিনি। তাছাড়া স্থানীয়রা তাকে খাবার দিলেও গত দুদিন কিছুই খাননি। এতে করে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয় সাংবাদিক ও পুলিশের সহযোগিতায় ওই বৃদ্ধা মাকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী সরোয়ার বলেন, শুক্রবার দুপুরে ভ্যানে করে এক ছেলে ওই বৃদ্ধাকে স্কুলের পাশে ব্রিজের ওপর রেখে যায়। কিন্তু সে সময় ভাবতে পারিনি, এই বৃদ্ধা মাকে ফেলে রেখে গেছে। বিকেলে বৃদ্ধার কাছ থেকে জানতে পারি, খাবার আনার কথা বলে ছেলে তাকে সেখানে রেখে গেলেও আর ফিরে আসেনি। তখন ওই বৃদ্ধা মা বলেছিলেন, তার বাড়ি আমগ্রাম এলাকায়।
স্থানীয় রহিমা বেগম বলেন, আমি প্রথমদিন তাকে খাবার দিয়েছিলাম। কিন্তু পরদিন থেকে এক কাপ চা ছাড়া আর কিছুই খাননি। কারও সঙ্গে কথা বলতে চান না। শুধু বলেন, আমার কেউ নেই। তাছাড়া তিনি দুইদিন আগে ভ্যানের সঙ্গে ধাক্কা লেগে আহত হন। এরপর থেকে ওই বৃদ্ধার কথাও বোঝা যাচ্ছে না। তাছাড়া তিনি রাতেও ওই কবরস্থানে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
মাদারীপুর সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার মো. বদরুজামান সম্রাট বলেন, হাসপাতালে ভর্তির পর ওই বৃদ্ধা মাকে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি।
এ বিষয়ে মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনোয়ার চৌধুরী বলেন, আমাকে এক সাংবাদিক ফোন দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছেন। আমি ফোর্স পাঠিয়ে ওই বৃদ্ধাকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। তার ঠিকানা জানার চেষ্টা চলছে।
এমআরআর/জিকেএস