বাজারে নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় গাইবান্ধায় খোলাবাজারে (ওএমএস) চাল ও আটা কিনতে স্বল্প আয়ের মানুষের লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। কম দামে পণ্য কিনতে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা ভিড় করছেন অনুমোদিত ডিলারের দোকানে। তবে চাহিদার তুলনায় ডিলারের বরাদ্দ স্বল্পতার কারণে অনেকেই পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরছেন। ভিড়ের কারণে পরপর কয়েক দিন লাইনে দাঁড়িয়েও পণ্য পাচ্ছেন না ক্রেতারা।
ডিলাররা বলছেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক কম। তাই বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন। তবে প্রশাসন বলছে, বরাদ্দ বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
গাইবান্ধা জেলা খাদ্য অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সরকারিভাবে প্রতিদিন ওএমএসের ডিলারপ্রতি এক হাজার কেজি চাল বা আটা বরাদ্দ থাকে। সপ্তাহের দুই দিন ১১ জন ডিলার ও সপ্তাহের ছয় দিন ৯ জন ডিলার ওএমএস’র ডিলারদের মাধ্যমে এসব চাল ও আটা বিক্রি করা হয়। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি চাল ও পাঁচ কেজি আটা কিনতে পারেন।
বুধবার (২ নভেম্বর) সকালে জেলার অনুমোদনপ্রাপ্ত ডিলার পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে নারী-পুরুষের উপচেপড়া ভিড়। তবে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা অনেক বেশি। কম দামে আটা ও চাল কিনতে সকাল থেকে অপেক্ষা করছেন ক্রেতারা। এ সময় কথা হয় ক্রেতা ও ডিলারের সঙ্গে।
গাইবান্ধা শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, ওএমএস’র পণ্য কিনতে স্বল্প আয়ের মানুষের লম্বা লাইন। পণ্য শেষ হওয়ায় ডিলার বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। ক্রেতারা পণ্য না পেয়ে বাইরে হাহাকার করছেন।
গৃহপরিচারিকা আছমা বেগম (৫৫) নামের এক ক্রেতা জাগো নিউজকে বলেন, আমরা গরিব মানুষ। চাল কিনার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছি। আমার সংসারে একজন প্রতিবন্ধীসহ পাঁচজন মানুষ। এখান থেকে কম দামে চাল, আটা কিনতে পারলে কিছু টাকা বাঁচে। কিন্তু দুই ঘণ্টা লাইনে দাড়িয়ে থেকেও কিনতে পারিনি।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের সুখশান্তির বাজার এলাকায় ওএমএসের চাল কিনতে লাইনে দাঁড়ানো মধ্যবিত্ত ঘরের এক নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রিকশা চালক স্বামীর একার আয়ে সংসার চালাতে খুব সমস্যা হয়। তাই কম দামে চাল কিনতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, কিন্তু হঠাৎ করে দোকানের ভিতর থেকে বলে চাল নেই। এখন কি করবো, কি খাবো সেই চিন্তা করছি।
আইনুল নামের একজন অটোরিকশাচালক বলেন, বাজারে জিনিসপত্রের যে দাম সেভাবে তো রোজগার বাড়েনি। এখান থেকে কম দামেত চাল ও আটা কিনতে পারি। তাই তিন-চার দিন পরপর এখানে আসি।
পৌর শহরের কলেজ রোডের ওএমএস ডিলার পয়েন্টের স্বত্বাধিকারী গোলাম রহমান বলেন, চাল কিনতে প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক লোক আসে। কিন্তু আমার বরাদ্দ এক মেট্রিকটন যা দিয়ে ২০০ লোককে দেওয়া যায়। বাজারের তুলনায় চাল ও আটার দাম এখানে কম। তাই প্রতিদিনই ভিড় জমে। ওএমএস’র বরাদ্দ কম থাকায় ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়।
এ ব্যাপারে গাইবান্ধা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অন্তরা মল্লিক জাগো নিউজকে বলেন, বরাদ্দ বাড়ানো ক্ষমতা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের নেই। শুরুতে দুই মেট্রিকটন করে বরাদ্দ দেওয়া হতো। ১৬ অক্টোবর থেকে বরাদ্দ কমিয়ে এক মেট্রিকটন করা হয়েছে। একারণেই আগে বিক্রি বিকেল পর্যন্ত চললেও, এখন দুপুরের মধ্যেই পণ্য শেষ হয়ে যায়। ফলে অনেকেই কিনতে পারছেন না।
জেএস/জিকেএস