মাদারীপুরে বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। মাদারীপুর সদর হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ১১ রোগী। অতিরিক্ত রোগীর চাপে বেড সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে ফ্লোরে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা।
হাসপাতাল ও রোগী সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ দিন ধরে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে প্রতিদিনই ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হচ্ছেন। গত ১৫ দিনে প্রায় দুই শতাধিক রোগী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে ৩৩ রোগী ভর্তি আছেন। রোববার (৬ নভেম্বর) দুপুর পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ১১ রোগী।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বেড রয়েছে ছয়টি। রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ আরও চার বেড বাড়িয়ে ১০টি করেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে শিশুর সংখ্যা বেশি। এর পরেই রয়েছে বৃদ্ধরা। কোনো কোনো বেডে দু’জন করে রোগীও রয়েছেনে। বেড না পেয়ে রোগীরা ওয়ার্ডের বারান্দায় ফোম বিছিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আবার অনেকেই ফোমও পাননি, তারা কম্বল বিছিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বারান্দার লোহার সঙ্গে স্যালাইনের ব্যাগ ঝুলিয়ে রোগীদের দেওয়া হচ্ছে।
ডায়রিয়া রোগীর সঙ্গে আসা সীমা আক্তার বলেন, ডায়রিয়া রোগীদের যেখানে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা দরকার, সেখানে বেড না পাওয়ায় বারান্দায় থাকছে। আর সেখান দিয়ে রোগীর সঙ্গে আসা লোকজন যাতায়াত করেছেন। ফলে রোগীরা আরও ঝুঁকিতে পড়ছেন।
মাদারীপুর সদর উপজেলার পূর্বরাস্তি গ্রামের বাবা শাহ আলী বেপারী ও মা লাবনী বেগমের মেয়ে ১৪ মাস বয়সী জান্নাত ভর্তি রয়েছেন। শুক্রবার (৪ নভেম্বর) তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জান্নাতের বাবা শাহ আলী বেপারী বলেন, শুক্রবার ভর্তি হয়েছি। বেড পাইনি। হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এর চেয়ে ভালো বাড়িতে থাকা।
মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর থেকে আসা ৮০ বছরের বৃদ্ধ রাজ্জাক বলেন, বেড পাইনি। তাই ফ্লোরেই চিকিৎসা নিচ্ছি।
মাদারীপুর সদর উপজেলার চরহোগলপাতিয়া গ্রামের আট মাস বয়সী আবরার রোববার সকালে ভর্তি হয়েছেন। তার মা জাকিয়া বেগম বলেন, কি করবো, ছেলে অনেক অসুস্থ। তাই বাধ্য হয়েই ফ্লোরে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছি। একই কথা বললেন পাকা মসজিদ এলাকার এক বছর বয়সী মেহেমেদের মাসহ একাধিক ব্যক্তি।
মাদারীপুর সদর হাসপাতাল সিনিয়র নার্স লিপু মল্লিক বলেন, সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর জন্য আসন বরাদ্দ মাত্র ছয়টি। সেখানে আরো চারটি বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু রোগীর চাপ বেশি থাকায় ফ্লোরেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোববার (৬ নভেম্বর) দুপুর পর্যন্ত নতুন ১১ সহ মোট ৩৩ রোগী ভর্তি রয়েছে।
মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের আসন সংখ্যা মাত্র ছয়টি। প্রতিদিনই নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। তাই উপায় না থাকায় ফ্লোরেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
মাদারীপুর সিভিল সার্জন ডা. মুনীর আহমদ বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে আসন সংখ্যা মাত্র ছয়টি। রোগীর চাপ অনেক। তাই বাধ্য হয়েই ফ্লোরেই চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে আড়াইশ বেডের আংশিক চালুর ব্যাপারে কাজ চলছে। সেটা চালু হলে ১৫টির মতো বেড় রাখা হবে। আর যখন পুরো আড়াইশ বেড চালু হবে, তখন এর সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে। তখন এ সমস্যা থাকবে না।
এএইচ/জেআইএম