খেলাধুলা

ভারতকে হারিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজই চ্যাম্পিয়ন

ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রথম দুটি শিরোপাই জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্লাইভ লয়েড, ভিভ রিচার্ডস, গর্ডন গ্রিনিজ, ডেসমন্ড হেইন্সদের নিয়ে তখনকার সময়ে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিল তারা ক্রিকেট বিশ্বে। কিন্তু নব্বই দশকের পর থেকেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেই স্বর্ণযুগ হারিয়ে  গেছে। তখন থেকেই নিজেদের হারিয়ে খুঁজছে তারা। বরং দেশটির ক্রিকেট একের পর এক তলানীতেই নামছে যেন; কিন্তু মিরপুরের শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ (রোববার)ক্যারিবিয়ান যুবারা সেই স্বর্ণযুগ ফিরিয়ে আনলেন। আলজারি জোসেফ ও রায়ান জনের বোলিং তোপের পর কেসি কার্টি এবং কেমু পলের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ভারতের মত শক্তিধর দেশকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফাইনালে শক্তিশালী ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ গুড়িয়ে মাত্র ১৪৫ রানে অলআউট করে দিয়ে ৫ উইকেটে জয় ছিনিয়ে নেয় তারা। এ জয়ে প্রথমবারের মত অধরা এই যুবা বিশ্বকাপ ট্রফিতে চুমু খেল ক্যারিবিয়ানরা। অথচ এই দলটিই কি না বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশে এসে তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল। গ্রুপ পর্বেও ছিল একেবারে নিষ্প্রভ। কোন মতে টেনে-টুনে শেষ আটে উঠেছিল তারা। তাও শেষ ম্যাচটিতে অনৈতিকতার আশ্রয় নিয়ে। লজ্জাজনক জয় নিয়ে কোয়ার্টারে উঠেছিল তারা। ওই ম্যাচটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়ের জন্য শেষ ওভারে ছয় বলে চার রান প্রয়োজন ছিল জিম্বাবুয়ের। বল করতে এসেছিলেন কেমু পল; কিন্তু দৌড়ে এসে বল ডেলিভারি না দিয়ে স্ট্যাম্প ভেঙ্গে দেন তিনি। ওই আউটের সারা বিশ্বে উঠেছিল নিন্দার ঝড়। প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের মান নিয়ে। অথচ সেই ম্যাচের পর থেকেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে ক্যারিবীয় যুবারা। এমনকি ফাইনালে সেই কেমু পলই ব্যাট হাতে দারুণ ঝলক দেখিয়ে দলকে জয় উপহার দেন। রোববার ভারতের দেওয়া ১৪৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজেরও। দলীয় ৫ রানে ফর্মে থাকা ওপেনিং ব্যাটসম্যান গিডরন পোপকে হারায় তারা। এরপর দলীয় ২৩ রানে অপর ওপেনার টেভিন ইমল্যাককে হারিয়ে দারুণ চাপে পড়ে যায় তারা; কিন্তু তৃতীয় উইকেট জুটিতে অধিনায়ক শিমরন হেতমায়েরকে নিয়ে দলের চাপ সামলে নেন কেসি কার্টি। ৫৩ বলে ২৩ রান করেন হেতমায়ের; কিন্তু দলীয় ৬৭ রানের পর ১০ রান যোগ করতে দ্রুত তিন উইকেট তুলে নিয়ে দারুণভাবে খেলায় ফিরে আসে ভারত। তবে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে কেমু পলকে নিয়ে আর একটি দারুণ জুটি গড়ে দলের জয়ের ভিত গড়ে দেন কার্টি। শেষ পর্যন্ত ৬৯ রানের অবিচ্ছিন্ন এক জুটি গড়ে তিন বল হাতে থাকতেই দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন তারা। সর্বোচ্চ ৫২ রান করেন কার্টি। ১২৫ বল মোকাবেলা করে দারুণ ধৈর্যশীল এক ইনিংস খেলে এই রান করতে মাত্র ২বার বলকে বাউন্ডারির বাইরে পাঠান তিনি। অপরদিকে ৬৮ বলে ১টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে ৪০ রান করে তাকে দারুণ সঙ্গ দেন কেমু পল। ভারতের পক্ষে মায়াঙ্ক দাগার ২৫ রানে ৩টি উইকেট নেন। এর আগে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই জোসেফের বোলিং তোপে পড়ে ভারত। ৮ রানে দুই উইকেট হারিয়ে দারুণ চাপে পড়ে যায় তারা। এরপর ১৯ রানের ক্ষুদ্র বিরতির পর আবার নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে রাহুল দ্রাবিড়ের ভারতীয় বাহিনী। এক প্রান্তে সারফারাজ খান ছাড়া কোন ব্যাটসম্যানই উইকেটে থিতু হতে পারেননি। সর্বোচ্চ ৫১ রান করেন সারফারাজ। ৮৯ বল মোকাবেলা করে ৫টি চার এবং ১টি ছক্কার সাহায্যে এই রান করেন তিনি।এছাড়া সাত নম্বরে নেমে মাহিপাল লোরমোর করেন ১৯। আর রাহুল বাথাম নয় নম্বরে নেমে দারুণ লড়াই করেন। ২৮ বলে ২০ রান করেন তিনি। দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান আসে অতিরিক্তের খাত থেকে। এদিন মোট ২৩টি অতিরিক্ত রান দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে রায়ান জন ৩৮ রানে ৩টি উইকেট নেন। টুর্নামেন্টের শুরু থেকে দুর্দান্ত খেলা আলজারি জোসেফ ৩৯ রানে পান ৩টি উইকেট। সংক্ষিপ্ত স্কোরভারত: ১৪৫/১০, ৪৫.১ ওভার (সরফরাজ খান ৫১, রাহুল বাথাম ২১, লোরমোর ১৯, ড্যাগার ৮, সুন্দর ৭; রায়ান জন ৩/৩৮, আলজারি জোসেপ ৩/৩৯)।ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৪৬/৫, ৪৯.৩ ওভার (কেসি কার্টি ৫২*, কেমুল পল ৪০*, শিমরন হেতমায়ের ২৩, ইমল্যাক ১৫; মায়াঙ্ক ড্যাগার ৩/২৫, আভিস খান ১/২৯, খলিল আহমেদ ১/৩২)। ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ উইকেটে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: কেচি কার্টি।ম্যান অব দ্য সিরিজ: মেহেদি হাসান মিরাজ।আরটি/আইএইচএস/এমএস