কিশোরগঞ্জের ভৈরবে সপ্তাহের ব্যবধানে কয়লার দাম বেড়েছে টনপ্রতি ছয় থেকে সাত হাজার টাকা। বর্তমানে প্রতি টন কয়লা ৩০ থেকে ৩১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ এক সপ্তাহ আগে ভৈরবে প্রতি টন কয়লা বিক্রি হয়েছে ২৩ থেকে ২৪ হাজার টাকায়।
ইটভাটা মালিকদের দাবি, কয়লা আমদানিকারকরা সিন্ডিকেট করে প্রতিদিন দাম বাড়াচ্ছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন তারা। কয়লার দামের এমন ঊর্ধ্বগতির কারণে কিশোরগঞ্জে এবছর ৩০টি ইটভাটা বন্ধ হয়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভৈরব ফেরিঘাট এলাকায় কয়লার বিশাল ব্যবসাকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। এখান থেকে দেশের কয়েকটি জেলায় কয়লা সরবরাহ হচ্ছে। আমদানিকারকরা রাশিয়া, আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে কয়লা আমদানি করে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে লাইটার জাহাজে ভৈরবে পাঠিয়ে দেয়। এখান থেকে ইটভাটার মালিকদের কাছে কয়লা বিক্রি করা হয়। প্রতিবছর কয়েকশ কোটি টাকার কয়লা ভৈরব থেকে বিক্রি হয়ে থাকে।
ভৈরব কয়লা ব্যবসায়ী মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় ১৫০-২০০ ট্রাক কয়লা ভৈরব থেকে সরবরাহ করা হয়। প্রতিদিন প্রায় ১২ কোটি টাকার কয়লা ভৈরব থেকে বিক্রি হয়। কয়লা ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ভৈরবে ১০ হাজার শ্রমিকসহ প্রায় ১১ হাজার লোক জীবিকা নির্বাহ করছেন।
ভৈরব কয়লা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি মির্জা সাজ্জাদ বলেন, এবছর মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই কয়লার দাম বেড়েছে। অন্য কোনো বছর এত কম সময়ে এভাবে দাম বৃদ্ধি পায়নি।
তিনি বলেন, আমরা আমদানিকারকের কাছ থেকে কয়লা কিনে বিক্রি করি। তারা প্রতিদিন কয়লার দাম বৃদ্ধি করছে। এতে আমাদের কিছুই করার নেই।
বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি খালেকুজ্জামান বলেন, আমদানিকারকরা সিন্ডিকেট করে প্রতিদিন কয়লার দাম বৃদ্ধি করছে। আগের এলসি করা কয়লা আমদানিকারকরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা মুনাফা লুটছে। বর্তমান কয়লার দামে ইট উৎপাদনে প্রতি হাজার ইটে ব্যয় হবে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা। অথচ বাজারে প্রতি হাজার ইটের দাম ১২ হাজার টাকা। এই অবস্থায় কিশোরগঞ্জে ১১০টি ইটভাটার মধ্য ৩০টি বন্ধ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, কয়লা আমদানিকারকদের সিন্ডিকেট রুখতে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুবা সারাদেশে ইটভাটার অর্ধেক বন্ধ হয়ে যাবে। এতে আগামী বছরে দেশে সরকারি-বেসরকারি নির্মাণ কাজ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
আমদানিকারক শাহারা ট্রেডার্সের প্রতিনিধি জালাল উদ্দিন বলেন, বর্তমানে কোনো ব্যাংকে কয়লা আমদানির জন্য এলসি দিচ্ছে না। তাই এবার নতুনভাবে কোনো কয়লা আমদানি হবে না। ডলারের দাম বৃদ্ধিতে কয়লার দাম বাড়ছে বলে দাবি করেন তিনি।
কয়লা বিক্রেতা মোশারফ গ্রুপের প্রতিনিধি আমিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের কয়লা গত সপ্তাহে ২৩ থেকে ২৪ হাজার টাকা টনে বিক্রি করেছি। আমাদের কয়লা বেশি দামে বিক্রি করিনি। ব্যাংকগুলো এলসি না দেওয়ার কারণেই কয়লার দাম বাড়ছে বলে তিনি জানান।
ভৈরব ফেরিঘাট এলাকার কয়লা বিক্রেতা দেলোয়ার এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেন জানান, বুধবার আমদানিকৃত ইন্দোনেশিয়ার কয়লা প্রতি টন ৩১ হাজার ২০০ টাকা, অস্ট্রেলিয়ান কয়লা ৩০ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি করছেন।
আরেক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ফখরুদ্দিন ট্রেডার্সের প্রতিনিধি জসীম উদ্দিন বলেন, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকপক্ষ প্রতিদিনই কয়লার দাম নির্ধারণ করে দেয়। সেই দামে কয়লা বিক্রি করছি। কয়লার দাম কেন বাড়ছে তা মালিকই বলতে পারেন।
রাজীবুল হাসান/এমআরআর/এএসএম