দেশজুড়ে

সেতুর অভাবে ভোগান্তিতে ১০ গ্রামের মানুষ

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় খরস্রোতা ওয়াপদার কাটাখালের ওপর সেতু নির্মিত না হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকাবাসী। খেয়ানৌকায় নদী পারাপার হতে হয় তাদের। বর্ষা মৌসুমে দুর্ভোগের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। এই অবস্থায় দ্রুত সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ছোট একটি নৌকায় করে ১৫-২০ জন প্রথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পশ্চিম পাড় থেকে পূর্ব পাড়ে যাচ্ছে। নৌকার মাঝি শৈলেন গাইন (৫৫) স্রোতের কারণে ঠিকভাবে নৌকার বৈঠা চালাতে পারছেন না।

অন্যদিকে খালে পশ্চিম পাড় দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের পারাপার দেখেছেন ফ্রান্সিস বৌদ্ধ (৫৭)। কিছু সময় পর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বসে পড়লেন নদীর পাড়ে।

এসময় তিনি বলেন, প্রতিদিন খালের পাড়ে এসে শিক্ষার্থীদের পারাপার দেখি। ২০ বছর আগে এই খালেই নৌকা ডুবিতে আমার মেয়ে মারা গেছে। এরপর থেকে এসব শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিজের সন্তানকে খুঁজে বেড়াই।

জানা গেছে, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার রামশীল ইউনিয়নের মুশুরিয়া গ্রামকে দুই ভাগে বিভক্ত করে রেখেছে পয়সাটহাট-মোস্তাপুরের ওয়াপদার কাটাখাল। এ খাল পাড়ি দিয়ে মুশুরিয়া, চলবল, উত্তর চলবল, শৈলদাহ, নবগ্রাম, উত্তর রামশীল, ভাটেরবাড়ি, কাফুলাবাড়ি, জহরকান্দি ও ভূতেরবাড়িসহ অন্তত ১০টি গ্রামের কয়েক লাখ মানুষ যাতায়াত করেন। খালের পূর্ব পাশে শৈলদাহ মুশুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এজি মিশন স্কুল, এসডিএ চার্চ স্কুল এবং পশ্চিম পাশে বিতান শিশু নিকেতন, মধ্য ও দক্ষিণ বাংলাদেশ শিশু উন্নয়ন প্রকল্প নামের মোট ছয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

এছাড়া পূর্ব পাশের বাসিন্দার পশ্চিম পাশে ২০০ একর এবং পশ্চিম পাশের বাসিন্দাদের পূর্ব পাশে ৩০০ একর জমি আছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকা দিয়ে খালটি পারাপার হয়ে থাকেন। এছাড়া প্রতিদিন এ খাল পাড়ি দিয়ে রোগী আনা-নেওয়াসহ কৃষি জমি, মাছের ঘের, হাট-বাজার ও ধর্মীয় উপসানালয়সহ নানা কাজে যেতে হয় তাদের। খেয়ায় উঠতে না পারলে অপেক্ষা করতে হয় ২০ থেকে ৩০ মিনিট।

এ খালের পীড়ারবাড়ী ও রামশীল এলাকায় সেতু থাকলেও মাঝখানের আট কিলোমিটারের মধ্যে নেই কোনো সেতু। স্বাস্থ্য সেবা নিতে প্রতিদিন ২০০ লোক এ খাল পার হয়ে আসেন। পশ্চিম পাশ থেকে সপ্তাহে দুদিন হাট-বাজারের জন্য পূর্ব পাশে যেতে হয় ওই সব গ্রামের বসিন্দাদের। কয়েকদিন আগে এ খালে নৌকা ডুবির ঘটনায় দ্বিতীয় শ্রেণীর দুই শিক্ষার্থী মারা যায়।

বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়েও নানা দুঃচিন্তায় থাকতে হয় অভিভাবকদের। এমনকি ভরা বর্ষায় খড়স্রোতা এ খাল পাড়ি দিয়ে কৃষিপণ্য আনা নেওয়ায় দুর্ভোগে পড়তে হয়ে এলাকার কৃষকদের। সেতু না থাকার ফলে প্রায় আট কিলোমিটার ঘুরে ওই সব জমির ফসল ঘরে তুলতে হয় কৃষকদের। এতে খরচ ও সময় দুইটাই ব্যয় হচ্ছে।

মুশুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা অনিমেষ মধু (৫০) বলেন, খাল পার হয়ে ১০ গ্রামের কয়েক লাখ মানুষ যাতায়াত করেন। প্রতিনিয়তই ঘটছে নৌকা ডুবির ঘটনা। আমার সন্তানকে বিদ্যালয়ে দিয়ে চিন্তায় থাকতে হয়। কখন যেন শুনতে হয় নৌকা ডুবির ঘটনা। খালে প্রচুর স্রোত থাকায় গত সপ্তাহে খাল পারাপার হতে গিয়ে নৌকা ডুবে দশজন শিক্ষার্থী তাদের স্কুলব্যাগ ও বই হরিয়েছে। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ওই স্থানে একটা সেতু নির্মাণের। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এখনো সুদৃষ্টি দেননি।

রামশীল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী পূর্ণিমা বাড়ৈ বলেন, নৌকা পার হতে অনেক ভয় লাগে, অনেক সময় নৌকা ওপাড়ে থাকলে সময় মতো কলেজে যেতে পারি না।

উত্তর রামশীল গ্রামের বাসিন্দা মিলন বিশ্বাস বলেন, ওই পাশের জমি ফসল আনতে আমাদের আট কিলোমিটার ঘুরে রামশীল সেতু পার করে আসতে হয়। এতে আমাদের অনেক খরচ ও সময় ব্যয় হয়। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি মুশুরিয়া গ্রামে একটি সেতু নির্মাণ করে যাতায়াত ব্যবস্থা সুবিধা করে দেওয়া হোক।

কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, রামশীলের মুশুরিয়ার শিক্ষার্থীসহ এলাকার লোকের যাতায়েতের অসুবিধার কথা জেনেছি। আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষে সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিবো। এরই মধ্যে উপজেলা প্রকৌশলী এসে তা পরির্দশন করেছে। আশা করি দ্রুত ভোগান্তির সমাধান হবে।

জেএস/এমএস