অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশ হয়েছে বর্তমান সময়ের তরুণ শক্তিমান কথাসাহিত্যিক মোজাফ্ফর হোসেনের তৃতীয় গল্পগ্রন্থ ‘অতীত একটা ভিনদেশ’। বইটি প্রকাশ করেছে বেহুলা বাংলা প্রকাশনী। বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন আনিস মামুন। প্রতিটি গল্পের সঙ্গে অলঙ্করণ করেছেন রাজিব দত্ত। ১২৮ পৃষ্ঠার বইটির মূল্য রাখা হয়েছে ১৬০ টাকা। বইটি পাওয়া যাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ৫৭৭ নম্বর স্টলে।মোজাফফর হোসেন একইসঙ্গে ভাষা ও সময় সচেতন লেখক। ‘অতীত একটা ভিনদেশ’ বইয়ে মোট ১৪টি গল্প আছে। গল্পগুলো বিভিন্ন দৈনিক ও সাহিত্য পত্রিকায় ইতোপূর্বে প্রকাশিত। তিনি গল্পের ফর্ম ও ন্যারেটিভ নিয়ে নিরীক্ষা করেন। গল্প সম্পর্কে লেখক বইটির ভূমিকাতে জানিয়েছেন, ‘গল্পের বিষয়বস্তু নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমি দুটো বিষয় মাথায় রাখি। এক. আমার বর্তমানের কাছে দায়বদ্ধতা। যে কারণে আমার গল্পে বর্তমান সময়ের কর্পোরেট শক্তি, আমলাতান্ত্রিক শক্তি এবং মিডিয়াশক্তির কাছে একজন ব্যক্তির যে অবস্থান, সেটি নানাভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। দুই. আমার ঐতিহ্যের কাছে দায়বদ্ধতা। যে কারণে আমার গল্পের অনেক চরিত্র ক্ষয়ে যাওয়া অতীতের জন্যে হাহাকার করে।’ গল্পের নির্মাণ কৌশল নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যখন লিখতে শুরু করি, দেখা যায় অধিকাংশ গল্পই লিখতে লিখতে বাকবদল করে ভিন্ন একটা গল্প হয়ে দাঁড়ায়। অর্থাৎ যে গল্পটা লিখবো বলে শুরু করেছি, শেষপর্যন্ত আর সেই গল্পটা লেখা হয়ে ওঠেনা। অনেকগুলো পথের মাঝখানে এসে আমি অন্য পথে চলে যাই। এভাবেই না লিখতে পারা গল্পটার অতৃপ্তি আমাকে নতুন গল্পপথে চালনা করে।’বইয়ের ফ্ল্যাপে প্রখ্যাত গল্পকার জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত লিখেছেন, ‘ছোটগল্পের নানা চেহারা আছে, আছে নানা রং। যে গল্পকার সেইসব চেহারার খবর রাখেন, ব্যবহার জানেন সব রঙের, তিনি-ই নতুন গল্প লেখেন। মোজাফ্ফর হোসেন অমনি একজন গল্পকার। বাংলা গল্পের প্রচলিত পথেই যাত্রা তাঁর, কিন্তু কিছু পরেই মনে হয় নিজের জন্যে ভিন্ন একটি পথের সন্ধানে রত তিনি। নতুন কোন পথের। তাঁর গল্পের আপাতসরল কাঠামো, সাবলীল বর্ণনাভঙ্গি পাঠককে দ্রুত গল্পের ভুবনে প্রবেশ করিয়ে দেবে যদিও সামান্য সময় পার হলেই তিনি সম্মুখীন হবেন নানা সম্ভাবনার, বহুকৌণিক গল্পজগতের। সচেতন পাঠক সেটিকে পরাবাস্তব, যাদুবাস্তব বা অতি-আধুনিক গল্পের জগত– যে নামেই চিহ্নিত করুন না কেন গল্পের পাঠতৃপ্তি কি পাঠ্যযোগ্যতা বিন্দুমাত্র ব্যাহত হয় না তাতে। সমাজসচেতন লেখক তিনি। জগৎজীবনের নানা অসংগতি চোখে পড়ে তাঁর অতি সহজেই। স্বভাবসিদ্ধ রসবোধ, পরিহাস, শ্লেষ ইত্যাদির সহযোগে সেইসব দুরূহ বোধের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেন তিনি পাঠককে, তুলে দেন তার হাতে সমাধানের সূত্র। এমনি করেই গল্প লেখা হয় তাঁর। নতুন গল্প।’ গ্রন্থটির পাঠকথনে অগ্রজ কথাশিল্পী জাহানারা নওশিন লিখেছেন, ‘মোজাফ্ফরের গল্পে নির্মাণ বলে কিছু নেই- সমস্ত বিষয়টি ভেঙেচুড়ে দিয়ে যা তিনি সৃষ্টি করে ওঠেন, তা যেন অস্থিহীন একটি অবয়ব। যেন ‘দেহহীন লাবণ্য বিলাস’। অবয়বটিও যেন বায়বীয়- স্বপ্ন আর ঘন কুয়াশার ভিতর দিয়ে দেখা বাস্তবের প্রায় বিলীয়মান বাস্তব।’এসইউ/পিআর