অনার্য ভোরের দোসরমলিন কলমে লেখা উজ্জ্বল অক্ষরগুলো হেসে ওঠে।পদ্মাকাহিনি পড়ে জেনে যাই আমার প্রপিতামহ ছিলেনঅনার্য ভোরের দোসর। তার কাঁধে নেচে উঠতো মেঘ, মনীষাআর ময়ুরের পেখম। একেকটি দুপুর, তার বাহুর কাছে চিরনত হয়ে থাকতো বশ্যবাতাস হয়ে । তিনি বাঁশি হাতে নিয়ন্ত্রণকরতেন উত্তরের উষ্ণ উজান। মাটিকাহিনী পড়ে জেনে যাই আমার মাতামহীর গল্পঘটনা।আশ্বিনের বিকেলে দাওয়ায় বসে ভাপাপিঠা খেতে খেতেতিনি বলে যেতেন ,তার বকুলদিঘীতে কীভাবে লেজ দেখাতোপুষ্ট চিতল। ঐতিহ্যের ঐশ্বর্য নিয়ে জলবাস্তব ঝড়ের জাতকেরা কীভাবেএনে দিয়েছিল আমাদের মুক্তিসূর্য, একাত্তরের বিকেলেআমরা কীভাবে হয়েছিলাম বিজয়ী - সে গল্প বলতে বলতেআমার মা ,শুধুই কাঁদতেন .....আর বলতেন , সাজু , ও আমার সাজু তুই কী আর কোনোদিনফিরে আসবি না বাপ ! বোবাবৃক্ষের ফুল হাতের মুঠোয় ভালোবাসার উষ্ণতা পরখ করতে করতেধরে রাখি বিধানের ধন। সম্পদ বলতে যা আছে , তাকেবল অশ্রুর আখ্যান। আর কিছু ধারণের দিন । হতেপারে রাতও আমার সারথি। একটা বোবাবৃক্ষের ফুল যারা কথা বলতে পারে না , কেবলই সুবাস ছড়ায়। লিখে রাখি নদীদের ঘ্রাণ। মাঝে মাঝে বোতলের আলোতে,দেখি তরল ব্যথার বিনয়। কেউ তুলে নেয়নি কোলে। কেউবলেনি কাছে এসে, এ উপসর্গ নিরাময় হোক। এই কান্নার কৃপায়, যেভাবে বেঁচে থাকে জীবন প্রত্যন্ত প্রভায় ।নষ্ট চাঁদের আলোয়সবুজ চাদরখানি দূরে পড়ে থাকে। সন্ধ্যা ঘনায়ধর্ষিতা কিশোরীর মুখ দেখে চিনে যাই ঘাতকের ছায়া।যারা এই নগরকে হত্যা করতে এসেছিল, তাদের পলায়নপথ।দেখে রাখি , দেহের বেআব্রু আলোতে নষ্ট সূর্যের লুকোচুরি।প্যাগোডার পতাকায় লোমহর্ষক ফাদারের ছবি। লোকটি আমারও ধর্মপিতা ছিল। জাতপাতের কংক্রিট সড়কেদাঁড়িয়ে আমিও হতে চেয়েছিলাম চেকস্যান্ড স্ট্রিটের ডরাথি,কেশবনগরের আলেয়া কিংবা বোলপুরের বিজয়া সান্যাল। হতে পারিনি কিছুই। একটি ঝরাপাতা হয়ে রাস্তায় পড়ে আছি।আমাকে বারবার মাড়িয়ে যাচ্ছে অজগর পিতৃসাপ .... আরেক জন্মধ্বনিবিক্রীত নোনাজল হাতে নিয়ে দেখবো- সবই ভূল।আমাদের কিছু সাক্ষর থেকে যাবে উজ্জ্বল ইথারেলিঙ্গবৈষম্যের ভোর এসে নির্ণয় করে যাবে সকলশব্দের দূরত্ব । আর যারা শ্রোতা তারা কেবলই শুনেযাবে নদীদের কোলাহল, পৃথিবীর আরেক জন্মধ্বনি। রূপের মহিমা নিয়ে একটি দ্রুতগামী তারা ক্রমশঃমিশে যাবে আকাশের বিরহসীমানায়। তবে কি মিলনরত্নপুঞ্জ ছিল দাঁড়িয়ে, আমাদের সাহসের বিপরীতেনির্মাতা রোদের কিরণ কেবলই এঁকেছিল রেখা এইযোগাসনে, এই রমণশৃঙ্গারের বিনিদ্র নয়নে ... পৃথিবীর তৃতীয় তৃষ্ণাহাত ধরে বলেনি- ভালোবাসি লতায় জড়ানো ভোর,এভাবে আর কোনোদিন শোনায়নি কেউ পাহাড়ের গানকোলাহল ভেঙে এসে নাড়েনি কড়া, কামনার কথামালায়পৃথিবীর তৃতীয় তৃষ্ণা , ছোঁয়ায়নি কেউ। শুধু কুয়াশা ছিলক্ষুধার, এক বিন্দু জলও এগিয়ে দেয়নি এই পদ্মাপাতাল,তবুয়ো ভালোবাসার বিষ্ণু আলোয় জ্বালিয়েছি শিখাসমুদ্র। রপ্ত রুপোর সিকি মুঠোয় পুরে , দাঁড়িয়ে থেকেছি ডাকঘরেরঅক্লান্ত লাইনে - মোহর চাই। সীলমোহর। চিঠিটা; পৌঁছবেতো প্রাপকের ঠিকানায় ! এমন ভাবনাবিভায় কাটিয়েছি ভোর। এখন তা গল্প মনে হয়। কিছুই করিনি জমা। শুধুই অপচয়উড়ে যাও নিমফুল,বলো সেই নদীটিরে- যে কেবল ছুঁয়েছে হৃদয় !এইচআর