দেশজুড়ে

পটুয়াখালীতে দিনব্যাপী নবান্ন উৎসব

পুরুষদের হলুদ পাঞ্জাবি আর নারীদের পড়নে ছিল হলুদ শাড়ি। হলুদের সমারোহ ছিল উৎসব জুড়ে। আর অতিথি আপ্যায়নেও ছিল ভিন্নতা। নতুন ধানের চালের গুড়ার তৈরি বিভিন্ন পিঠা আর দুপুরের খাবারে ছিল মোটা চালের ভাত, লাল শাক, শোল মাছ দিয়ে গোজ আলু আর জলপাইয়ের চাটনি। সব আয়োজনে যেন বাঙালিয়ানার ছোঁয়া। এসব আয়োজনের মাঝে মঞ্চে উপস্থাপন করা হয় গান, নাচ আর কবিতা। এভাবেই দিনব্যাপী উদযাপন হলো নবান্ন উৎসব।

শনিবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় পটুয়াখালী শহরের শেখ রাসেল শিশুপার্কে শুরু হওয়া এই উৎসব শেষ হয় রাতে।

বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির অন্যতম একটি পার্বণ নবান্ন উৎসব। কৃষকের মাঠ থেকে ধান যখন গোলায় ওঠে তখন কৃষক পরিবারগুলোতে থাকে উৎসবের আমেজ। নতুন ধান দিয়ে বানানো হতো পিঠা-পুলিসহ বিভিন্ন মুখরোচক খাবার। চলতো আতিথেয়তার নানা আয়োজন।

তবে নাগরিক জীবনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় নবান্ন উৎসব এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। পটুয়াখালীতে গত কয়েক বছর থেকে জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ একত্রিত হয়ে ‘দখিনের কবিয়াল’ নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়।

পটুয়াখালী পৌরসভার মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদের পত্নী মার্জিয়া আক্তার সুমা বলেন, একটি জাতির পরিচয় বহন করে তার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, কালচারের ওপর। এই নবান্ন উৎসব আমাদের সংস্কৃতির অন্যতম একটি অংশ। আজ আমরা গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসবে মিলিত হয়েছি। নবান্ন উৎসবের মতো এই আয়োজনগুলো টিকিয়ে রাখতে হবে।

মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে নবান্ন উৎসবের সূচনা করা হয়। আর অতিথিরা বললেন, বাঙালি জাতির যে ঐতিহ্য এবং বাংলাদেশ যে একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ তা এই উৎসব এবং পালা পার্বণই প্রমাণ করে।

নবান্ন উৎসবের উদ্বোধন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড আফজাল হোসেন বলেন, বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্য নবান্ন উৎসব, এই আয়োজনগুলো আমাদের শেকড়ের কাছে পৌঁছে দেয়। বিশ্বের অনেক দেশ আছে যাদের নিজস্ব কোনো সংস্কৃতি নেই, আমরা এ বিষয়ে অনেক পরিপূর্ণ। বর্তমান সরকার এসব সংস্কৃতি ধরে রাখতে কাজ করছে। এখন যেমন পহেলা বৈশাখ পালনে সরকার সরকারি কর্মচারীদের বৈশাখী ভাতা দেওয়ার প্রচলন করেছে।

দখিনের কবিয়াল সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন মানিক বলেন, নতুন প্রজন্মকে নবান্ন উৎসবসহ বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেই এ ধরনের আয়োজন।

যে কৃষকরা সারাবছর রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ফসল উৎপাদন করেন অন্ন সংস্থান নিশ্চিত করছেন তাদের প্রতিও নবান্ন উৎসব থেকে কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।

আব্দুস সালাম আরিফ/এমআরআর/এএসএম