সাংগঠনিকভাবে নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপি। গ্রুপিং, অন্তর্কোন্দল প্রকট আকার ধারণ করেছে দলটিতে। বিদ্রোহ, পদত্যাগ ও শোকজের ঘটনায় টালমাটাল নেতাকর্মীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক, যুগ্ম-আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব এই তিন নেতা এখন দুই গ্রুপে বিভক্ত। এক গ্রুপ বহিষ্কার করলে অন্য গ্রুপ বহাল রাখে নেতাকমীদের। চলতি বছরের ২৬ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, নাচোল, ভোলাহাট উপজেলাসহ নাচোল পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি থেকে ৬১ জন নেতা পদত্যাগ করেন।
মাসখানেক আগে সদর উপজেলার বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে অসন্তোষ থেকে সদস্য সচিবসহ ৩১ সদস্যের মধ্যে ২৩ নেতা আহ্বায়ক ওবায়েদ পাঠানকে বাদ দিয়ে নতুন করে কমিটির ঘোষণা করেন। তারা সবাই জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়ার অনুসারী। পরে ওবায়েদ পাঠানকে বাদ না দিয়ে আহ্বায়ক পদে বহাল রেখে ১৫ অক্টোবর নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম টিপু ও সদস্য সচিব০০ রফিকুল ইসলাম এ কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন। জেলার একাধিক বিএনপি নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একসময় অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া ও হারুনুর রশিদ ছিলেন জেলা বিএনপির নেতৃত্বে। পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে আমিনুল ইসলামের উত্থান হলে দুই ধারায় সক্রিয় ছিল জেলা বিএনপির অঙ্গ-সংগঠনগুলো। ২০১৭ সালে অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম টিপু সভাপতি ও আমিনুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর দল আর ঐক্যবদ্ধ হয়নি। উল্টো বলয় বেড়েছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির ৫১ সদস্যদের পূণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেখানে সাবেক সংসদ সদস্য ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ও বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব হারুনুর রশিদের অনুসারীদের কমিটিতে রাখা হয়নি। এতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে আছেন তারা। এ অবস্থায় শক্ত রাজনৈতি তৈরির পথ খুঁজতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নতুন নেতৃত্বকে। এতে পিছিয়ে যাচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিএনপির রাজনীতি।
সম্প্রতি এমপি আমিনুল ইসলামের পদত্যাগের খবরে মিষ্টি বিতরণ করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো। এ খবরে উচ্ছ্বাসে রয়েছেন তারা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের কমিটিগুলো গঠনে ত্রুটি ছিল। অধিকাংশ কমিটিতে পরিবর্তন আসছে। তবে দলের ত্যাগী নেতাদের অবশ্যই মূল্যায়ন করা হবে।
তবে বিভিন্ন গ্রুপিং বা কোন্দল নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি। এ বিষয়ে তার ভাষ্য, শিগগিরই সব সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে জেলা বিএনপি।
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়েও দলীয় সিদ্ধান্তে পদত্যাগ করছি। এটি আমাদের গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের প্রথম ধাপ। এতে বিএনপি নড়বড়ে হবে না। ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশে যে ১০ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়েছে, সবগুলো এখন বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির শীর্ষ পর্যায়ে যারা রয়েছেন তারা আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামের পক্ষে নির্বাচন করেছেন। উপজেলা আহ্বায়ক কমিটিগুলোতেও যোগ্য লোকদের মনোনীত করা হয়নি। যারা এসব কমিটি গঠনের সঙ্গে জড়িত, তারা দায়িত্বশীল আচরণ করেননি। এতে দলের ক্ষতি হয়েছে।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিয়াউর রহমান বলেন, জেলা বিএনপির দুই এমপির মধ্যে একজন পদত্যাগ করেছেন। আরেকজন অপেক্ষায় আছেন। এটি তাদের নিজস্ব ব্যাপার। তবে আওয়ামী লীগ একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক দল। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা কাজ করবো। আমাদের সংগঠন শক্তিশালী রয়েছে।
সোহান মাহমুদ/এসআর/জেআইএম