ঠাকুরগাঁও শহরের অদূরে দক্ষিণ সালন্দর এলাকায় ব্যক্তি মালাকার জমি নকল দলিল তৈরি করে বিক্রি করছে প্রতারক চক্র। জমি বিক্রির পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক দলের প্রভাব খাটিয়ে বিক্রি করা ওইসব দখলও করার অভিযোগ উঠেছে ওই চক্রের বিরুদ্ধে।অভিযোগ রয়েছে, এসব জমির বেশির ভাগই ক্রয় করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। সম্প্রতি এসব জমি নিয়ে নানান জটিলতা তৈরি হয়েছে। মামলাও হয়েছে ঠাকুরগাঁও আদালতে। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন।এদিকে, স্বল্পমূল্যে পাওয়া এসব জমি ক্রয় করার পর নানান জটিলতা তৈরি হওয়ায় একদিকে যেমন দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ক্রেতারা। অপরদিকে ওই জমির প্রকৃত মালিক জামিলা খাতুনের ছেলে ফয়জুল ইসলামকেও প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে প্রতারক চক্রের সদস্যরা। এসব ঘটনায় জমির মালিকের ছেলে ফয়জুল ইসলাম ঠাকুরগাঁও সদর থানায় একাধিকবার অভিযোগ করলেও এখন পর্যন্ত কোনো সুরাহা করতে পারেনি থানা কৃর্তপক্ষ। আবার ওই জমি উদ্ধার করে দিতে মোটা অংকের টাকাও দাবি করেছেন সদর থানার এক কর্মকর্তা। কোনো উপায় না পেয়ে অবশেষে জমির মালিক জামিলা খাতুন বাদী হয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের যুগ্ম জেলা জজ আদালত-১ এ ১৫/১৫ শর্ত দখল পূর্বক একটি মামলা করেন। এরপর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে আরো একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও সালন্দর মৌজার সিএস-৬৯৮ খতিয়ান ভূক্ত ৩৬.৭৩ একর সম্পত্তির মালিক ছিলেন ফজলে হক সরকার। সিএস ৬৯৮ নং খতিয়ানের নালিশি ৭৫শ দাগের ৩.৬৪ একর সম্পত্তির মধ্যে ১.৪৯ একর সম্পত্তি জনৈক পানাবুল্লাহ’র কাছে হস্তান্তর করেন। পরে পানাবুল্লাহ রেজিস্ট্রিকৃত ৯২৫ নং দলিল মূলে ১.৪৯ একর সম্পত্তি হবিবর রহমান, আফিজ উদ্দিন, পশির উদ্দিন আহাম্মেদ, হাফিজুল রহমান, ময়নুল হক, শামসুল হক, সকলের বাবা ফজলে হক সরকারের কাছে হস্তান্তর করেন। ফলে এসএ রেকর্ড আমলে নালিশি খতিয়ানভূক্ত মূল মালিক ফজলে হক সরকারের নামে তার ছয় ছেলের মধ্যে কবলা খরিদ্দার গণের নাম এসএ-৭৩৫ নং খতিয়ানে লিপিবদ্ধ করা হয়। ১৯৫৬ সালে ৯২৫নং দলিলমূলে ক্রয়সূত্রে মালিক পশির উদ্দিন ও আফিজ উদ্দিন ১৯৭৫ সালে ৭৫শ নং দাগের ৩.৩৬ একর জমি জামিলা খাতুনের কাছে হস্তান্তর করে। বর্তমানে ওইসব দাগের জমি পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত ভোগদখলে রয়েছে জামিলা খাতুনের ছেলে ফয়জুল ইসলামের দখলে। কিছুদিন যাবত ওই জমি ভুয়া দলিল তৈরি করে সাধারণ মানুষের কাছে জমি বিক্রি করছে একটি প্রতারক চক্র। জমিটি ঠাকুরগাঁও পুলিশ লাইন্স সংলগ্ন হওয়ায় ভুয়া দলিলের এসব জমি ক্রয় করেছে ঠাকুরগাঁওয়ে চাকরিরত পুলিশের কিছু সদস্য। ফলে ওই প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে পুলিশ ওই জমি উদ্ধারে কোনো ভূমিকা পালন করছে না বলে ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর অভিযোগ।এদিকে পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি প্রতারক চক্রের কাছ থেকে জমি কিনে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সুমন চন্দ্র অধিকারী নামে এক ব্যক্তি। তিনি জানান, আমি জমি ক্রয় করে বাড়ি তৈরি করেছি। দলিলও আছে আমার কাছে। এখন শুনছি জমির মালিক অন্যজন। এ নিয়ে মহাচিন্তায় পড়েছি।নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়েছে দুইজন পুলিশ সদস্য বলেন, আমরা জমি ক্রয়ের সময় সব ধরনের কাগজপত্র দেখেছি। এখন শুনিছি ক্রয়কৃত ওইসব জমির মালিক অন্যজন। আমরাতো টাকা দিয়ে জমি কিনেছি আমাদের কাছেও কাগজ আছে। সুতরাং জমি দখল করার অভিযোগ মিথ্যা। ভুক্তভোগী ফয়জুুল ইসলাম জানান, আকতার আলী, আব্দুল আজিজ, আশরাফুল ইসলাম, ময়নুল, সয়ফুল ইসলামসহ প্রায় ১০/১৫ জনের একটি ভূমিদস্যু চক্র আমার পৈত্রিক জমি দখল করে কম দামে বিক্রি করছে। আমি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো ভূমিকাই দেখা যাচ্ছে না। পুলিশ জমি উদ্ধারের কথা বলে মোটা অংশের টাকার দাবি করছে।
তিনি আরও বলেন, জমির এসব ঘটনা নিয়ে প্রতারক চক্রটির সঙ্গে শহরের অ্যাডভোকেট সারোয়ার আলম ও তৎকালীন ঠাকুরগাঁও থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকতার সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক হয়েছে। তারপরও তারা তাদের কার্যক্রম থামায়নি।এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই কফিল উদ্দিন জানান, ওই জমির জন্য একাধিকবার থানায় আলোচনায় বসা হয়েছে। মামলার কারণে আদালতের নিদের্শনায় রয়েছি।ঠাকুরগাঁও সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, এই জমি নিয়ে অনেক দিন ধরে ঝামেলা চলছে। যারা জমি বিক্রি করছে তারাও জমির দলিল দেখাচ্ছে। আদালতে যেহেতু জমির বিষয়ে মামলা চলছে। তাই আদালতের নিদের্শনা অনুয়াযী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।রিপন/এমএএস/এবিএস