ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের এক বছর পার হলেও এখনো ১৬ মরদেহের পরিচয় শনাক্ত হয়নি। তাদের সন্ধান না পেয়ে দিশেহারা স্বজনরা। তাদের অভিযোগ, প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবে এখনো সন্ধান দিতে পারেনি। যদিও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক বিভাগের ঢাকার এক কর্মকর্তার দাবি অল্প সময়ের মধ্যে পুনরায় নিখোঁজদের সন্ধানে কাজ করবেন তারা।
পরিবার ও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর মধ্যরাতে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনা গামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ইঞ্জিন রুম থেকে অগ্নিকাণ্ড ঘটে । মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো লঞ্চে। আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যান ৪৯ যাত্রী। যার মধ্য থেকে ২৬ যাত্রীর মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অপর ২৩ জনের মরদেহের শরীরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে যাওয়ায় শনাক্ত করা যায়নি।
মরদেহগুলোর নমুনা সংগ্রহ করে রেখে বরগুনা সদর উপজেলার পোটকাখালী গণকবরে অজ্ঞাত পরিচয় দাফন করা হয়। দাফন করা ২৩ মরদেহের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় শনাক্তের জন্য ৪৭ জন স্বজনের নমুনা নেয় ঢাকা সিআইডির একটি প্রতিনিধি দল। সিআইডি থেকে চলতি বছরের জুলাই মাসে অজ্ঞাতপরিচয় দাফন হওয়া ১৪ মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করে। এখনো পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি আগুনে দগ্ধ হওয়া ১৬ মরদেহ।
তারা হলেন- পাথরঘাটা উপজেলার ছোট টেংড়া গ্রামের ফজিলা আক্তার পপি(৩৭), তালতলী উপজেলার ছোট বগী গ্রামের মোসা. রেখা বেগম(৩৮), জাকিরতবক এলাকার জুনায়েদ হোসেন(৬), বামনা উপজেলার গোলাঘাটা গ্রামের মো. হামিদ হাওলাদার (৬৮), বরগুনা সদর উপজেলার পরিরখাল গ্রামের রাজিয়া সুলতানা (৪০) ও তার কন্যা নুসরাত (৮), নরসিংদী জেলার রায়পুড়া উপজেলার মনিপুড়া গ্রামের আব্দুল হক (২৮), বরগুনা সদর উপজেলার মোল্লার হোরা গ্রামের তাসলিমা (৩৫) তার মেয়ে তানিশা (১২), ঢাকা ডেমরা এলাকার জুনায়েদ (৮), বরগুনা সদর উপজেলার রায়েরতবক গ্রামের শারমিন আক্তার পান্না (২৫), নরসিংদীর মো. জীবন (১২) ও তার ভাই ইমন (৮), মির্জাগঞ্জ উপজেলার কিসমত শ্রীনগর গ্রামের মোসা. জাহানারা বেগম (৪৫), তালতলী উপজেলার কাজির খাল গ্রামের মো. রাসেল মিয়া (৩৩), বামনা উপজেলার নিজামতলী গ্রামের হাসিব (২০)।
লঞ্চ দুর্ঘটনায় মা ও ছোট বোনকে হারানো পরিরখাল এলাকার জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘মা ও বোনকে খুঁজে পেতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের সদস্যদের কাছে নমুনা দিয়েছিলাম। কিন্তু এক বছর পার হলেও এখনো মা-বোনের সন্ধান দিতে পারেনি তারা। প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলে হয়তো এতদিনে তাদের মরদেহ পেয়ে যেতাম। আমি চাই অন্তত তাদের মরদেহের শেষ অংশটুকু যেন সরকার আমাদের দেয়।
লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিখোঁজ মো. হাসিবের বাবা আব্দুল খালেক জাগো নিউজকে বলেন, এক বছর হয়ে গেছে লঞ্চ দুর্ঘটনায় আমার ছেলে নিখোঁজ আছে। এক বছর ধরে ছেলেকে আমি দেখতে পাচ্ছি না। প্রশাসনের কাছে দাবি আমার ছেলের কবরটা অন্তত পাই।
এ বিষয়ে ঢাকা সিআইডি ডিএনএ ল্যাবের ডিএনএ পরীক্ষক রবিউল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে ১৪ জনের পরিচয় শনাক্ত করতে পেরেছি। বাকিদের পরিচয় শনাক্তের জন্য খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বোর্ড মিটিংয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এসজে/জিকেএস