ছোট থেকেই চার-পাঁচটা স্বাভাবিক শিশুর মতোই ছিল ফারহান সাদিকের শৈশব। পড়াশোনা ও খেলাধুলাসহ সব কাজে ছিল বেশ চতুর। হঠাৎ অসুস্থতায় কমে গেছে তার সেই দুরন্তপনা। আট বছর বয়সে অসুস্থ হয়ে পড়ে সাদিক। বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করেও ধরা পড়েনি কোনো সমস্যা।
উন্নত চিকিৎসার জন্য সাদিককে নেওয়া হয় ভারতের হায়দারাবাদে। ধরা পড়ে রোগ। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সাদিক লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত। তাকে বাঁচাতে দ্রুত লিভার প্রতিস্থাপন প্রয়োজন। মায়ের লিভারের অংশ সাদিককে দেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। ছেলেকে সুস্থ দেখতে লিভার দিতে রাজি মাও। শুধু থমকে আছে চিকিৎসার খরচ। নিজের জমানো টাকা, বসতভিটা বিক্রি ও আত্মীয়স্বজনের সহযোগিতা নিয়েও জোগাড় হচ্ছে না সে টাকা।
সাদিক ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের সরকারপাড়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেন ও বাবলী বেগম দম্পতির ছেলে। দুই ছেলের মধ্যে সাদিক ছোট। সে সরকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল। অসুস্থতার কারণে বন্ধ তার পড়াশোনা। এখন বাড়িতেই শুয়ে বসে সময় কাটছে। চিকিৎসা খরচ জোগাতে দিশেহারা তার পরিবার।
সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার প্রত্যাশা নিয়ে শিশু সাদিক জানায়, ‘দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়ি। এরপর থেকে আর পড়াশোনা করতে পারিনি। সহপাঠীরা এবার পঞ্চম শ্রেণিতে। আমি বড় হয়ে জাতীয় দলের খেলোয়াড় হতে চাই। সবাই সহযোগিতা করলে চিকিৎসা নিয়ে হয়তো আমি সুস্থ হবো।’
সাদিকের মা বাবলী বেগম বলেন, ‘ছেলেকে সুস্থ করতে স্থানীয়সহ দেশের বড় বড় ডাক্তার দেখিয়েছি। কোনো রোগ ধরা পড়েনি। ভারতে নিয়ে যাওয়ার পর লিভার ক্যানসারের বিষয়টি ধরা পড়ে। সাদিকের বাবা ও আমি দুজনে লিভার দেওয়ার কথা বলি। আমারটা তাকে দেওয়ার উপযোগী মনে করেন চিকিৎসক। তারা বলেছেন, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সাদিকের অপারেশন করা লাগবে। এজন্য প্রয়োজন প্রচুর টাকা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা টাকা জোগাড়ের চেষ্টা করছি। স্বজনদের থেকে নিয়েও হচ্ছে না। আমি লিভার দেবো, আপনারা খরচটা দিন। সবার সহযোগিতা পেলে আমার ছেলে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। আবারও বিদ্যালয়ে যেতে পারবে।’
সাদিকের বাবা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘১৫ লাখ টাকা দেওয়ার পর তারা আমার ছেলেকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি নেবে। সব মিলিয়ে ৩০ লাখ টাকার মতো অপারেশন খরচ লাগবে। আমার আয়ের উৎস তেমন নেই। বাসে কন্ডাক্টরি করি। কাজে গেলে টাকা আসে না হয় আসে না। তবুও সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। স্বজনদের কাছে সাহায্য চাচ্ছি। আমাদের পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব নয়। আপনারা এগিয়ে না এলে আমার ছেলেকে বাঁচাতে পারবো না।’
প্রতিবেশী মহসিনা বেগম ও নাহিদ বলেন, ‘ছোট থেকে সাদিক বেশ নম্র ও ভদ্র। তিন বছরে চিকিৎসায় তার বাবা-মা অনেক টাকা খরচ করেছেন। এখন তার অপারেশনর জন্য অনেক টাকা দরকার। তার বাবা-মা চেষ্টা করেও টাকা জোগাড়ে ব্যর্থ হয়েছেন। সবাই এগিয়ে এলে হয়তো তাকে সুস্থ করা সম্ভব।’
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা করা হবে।
তানভীর হাসান তানু/এসজে/বিএ/জেআইএম