সাহিত্যপ্রীতি থাকলে পেশাদারিত্ব বাধা হয় না। সাহিত্যের নেশা সবার থাকে না। আবার পেশাদারিত্ব বজায় রেখে সাহিত্যচর্চা চাট্টিখানি কথা নয়। তবে এবারের বইমেলায় এমনই একজনকে পাওয়া গেছে যিনি পুলিশে উপ-কমিশনারের দায়িত্ব পালনের মাঝেও সাহিত্য প্রীতি ছাড়েন নি। তিনি মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ। ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) তিনি।নেশার মতো জেঁকে বসা সাহিত্যানুরাগ থেকেই লিখেছেন কবিতা। স্কুল জীবনে কবিতায় হাতে খঁড়ি। সেই থেকে কবিতার নেশা। বিসিএস দিয়ে পুলিশে আসায় পেশাদারিত্বের ব্যস্ততাতেও ভাটা পড়েনি লেখা ও পড়ার নেশায়। লিখেছেন অনেক কবিতা। এবারের বইমেলায় এসেছে তার কবিতার বই ‘খেয়াল’।গত শুক্রবার বিকেলে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তার কবিতার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া। এরপরই আলোচনায় আসেন লালবাগের এ লেখক ডিসির।শনিবার দুপুরে শহীদ মিনারের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণের জন্য নির্মিত ডিএমপির ক্যাম্পে কথা বলেন জাগো নিউজের সঙ্গে। আলাপচারিতায় উঠে এসেছে তার কবিতা প্রতি প্রেম, লেখার স্বাচ্ছন্দ্যবোধ। জাগো নিউজকে দেয়া তার একান্ত সাক্ষাতকার পাঠকদের উদ্দেশ্যে উপস্থাপন করা হলো।জাগো নিউজ : কেমন আছেন?ডিসি মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ : জ্বি ভালো আছি। ব্যস্ততায় সময় কাটছে। এরই মধ্যে সবকিছু করতে হবে (হেসে)।জাগো নিউজ : তাহলে সরাসরি প্রশ্নে চলে যাই। এবারের বই মেলায় আপনার একটি কবিতার বই এসেছে। নাম ‘খেয়াল’। কবিতা কি হঠাৎ লিখছেন নাকি আগে থেকেই?মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ : নাহ! কবিতা আমি স্কুল জীবন থেকেই লিখি। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধে আমার আগ্রহ বেশি। যান্ত্রিক জীবনে ব্যস্ততাকে কেউই উপেক্ষা করতে পারেন না। আবার সাহিত্যানুরাগীরা সাহিত্যকে বাদ দিয়ে জীবন্ত থাকেন না। তাই লেখালেখি ছাড়ি নি। লিখে যাচ্ছি।জাগো নিউজ : আপনি তো ডিএমপির লালবাগ বিভাগের ডিসি। এমন পেশাদারিত্বেও সাহিত্যে আগ্রহ আসলো কি ভাবে?মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ : দেখুন সাহিত্যপ্রীতি সবার থাকে না। আবার যার মধ্যে সাহিত্য প্রীতি রয়েছে তিনি যেখানেই থাকুন না কেন সাহিত্যানুরাগ মানসিকতা সজিব থাকে। লেখালেখিতে আমার নেশা পুরোনো। জাগো নিউজ : উপ-কমিশনার হিসেবে তো আপনার ব্যস্ততা অনেক বেশি। লেখালেখির জন্য চিন্তা, অনুশীলন অধ্যয়নের ধৈর্য লাগে। ব্যস্ততার এমন পেশায় কিভাবে লেখালেখির আগ্রহটা ধরে রাখেন আপনি? রহস্যটা যদি বলতেন?মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ : লেখালেখির জন্য চিন্তা, অনুশীলন অধ্যয়নের ধৈর্য লাগে। এর জন্য অবশ্যই সময় দরকার। ভাবনার জন্য। কিন্তু আমি ব্যস্ত পেশার মানুষ। তাই বলে কি আমি আমার সাহিত্যপ্রীতি ছেড়ে দিতে পারি? অবশ্যই পারি না। আমি পুলিশের কর্মকর্তা হিসেবে অনেক স্থানে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। সে সুবাদে অনেক দেখে শিখেছি, অনেককিছু আবার শুনেও। এর ফাঁকে নিজে স্টাডি করেছি। ভেবেছি। পেশাদারিত্বের মাঝেই খেয়ালি মনে কবিতা গল্প, প্রবন্ধ লেখার বাসনা সজিব ছিল। আর এ সুবাদেই এবারের বই মেলায় আমার কবিতার বই ‘খেয়াল’ এসেছে। আমি অনেক অনুষ্ঠানে বসে কিংবা অবসরে ও গাড়িতে বসে কবিতা লিখেছি।জাগো নিউজ : বইটি সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ : আমার কবিতার বইয়ের প্রকাশক আফজাল হোসেন। বইটি অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত। প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ। বইটিতে মোটে ৩৯টি কবিতা রয়েছে। প্রত্যেকটি কবিতায় আলাদা আলাদা গুরুত্ব কারণ ও শিক্ষা রয়েছে। জাগো নিউজ : আপনার কবিতায় কোন বিষয়গুলো বেশি ফুটে উঠেছে?মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ : কবিতার বইয়ের নামের মধ্যেই লেখনির ভাবনা জড়িয়ে রয়েছে। নিজের চলার পথে শুধু পেশাদারিত্বই সবকিছু নয়। এর বাইরেও অনেককিছু খেয়াল করার রয়েছে। পুলিশকে নিয়ে মানুষের নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। পুলিশের ভালো দিকগুলো কবিতার ছন্দে এনেছি। ট্রাফিক পুলিশের অপরিসীম ধৈর্যের বিষয়ও ফুটে তোলা হয়েছে।বসন্ত, পয়লা বৈশাখ, ভাষা দিবস, মা মাটি, মাদকের নেশা, গ্রাম, শিক্ষা, বৃক্ষ, রিকশাওয়ালাদের মতো শ্রমজীবী মানুষকে নিয়ে কবিতা লিখেছি।জাগো নিউজ : সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে কিংবা সামাজিক ন্যায়ের আহ্বান কেন্দ্রিক কিছু রয়েছে কিনা?মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ : মাদকের নেশা ছেড়ে দিয়ে শিক্ষার্থীরা যেন পড়াশুনার নেশায় বুদ হয় সেই চেষ্টা কিভাবে করতে হবে তা কবিতায় এনেছি। সামাজিক আহ্বান কেন্দ্রিক কবিতা আহ্বান, এতিমশিশু, মা ও শিশু, বিদ্যাপীঠ নিয়ে রয়েছে কবিতা।জাগো নিউজ : কোন কবিতাটি বেশি সাড়া জাগিয়েছে?মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ : আমি একদিন ডিএমপি সদর দফতর থেকে শাহবাগ হয়ে নিজ অফিসে ফিরছিলাম। এ সময় রাস্তায় রিকশা চালকদের দেখি, ঘাম ঝরানো শরীর নিয়ে কয়েকজন মিলে রান্না করছে। রান্না শেষে আবারো রিকশার প্যাডেলে পা। দেখে খুব খারাপ লেগেছিল। এর পরেই লিখেছিলাম রিকশাচালক নামের একটি কবিতা। কবিতাটি বাংলাভিশনের লাইভ অনুষ্ঠানে আবৃত্তি হয়েছে। আজ সকালেও ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে আমার অপর একটি কবিতা ‘মাতৃভাষা’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ট্রেজারার আবৃত্তি করে শোনান।উঠে ভোরে, চট করে, যায় বেরিয়ে,পা ঘোরে, জোরেসারে, দিন পেরিয়ে।ঘোরে চাকা, পাবে টাকা, ঘাম ঝরিয়ে, দিন শেষে, রাত আসে, পথ ঘুরিয়ে।শীত আসে, পাশে পাশে, আসে গ্রীষ্ম,পথ চলে, থেমে গেলে, হবে নিঃস্ব…।অথবা এতিমদের নিয়ে কবিতা ‘এতিমখানা’ তিনি লিখেছেন- মাগো তুমি কোথায় আছো দেখি না তোমায় কতো দিন,বাবা তুমি কোথায় আছো দেখি না তোমায় কতো দিন।পারব কি করতে পূরণ জন্ম দেয়ার ঋণ।এই কবিতাটি গানেও রূপ দেয়ার চেষ্টা চলছে। আশা করছি। সব ক’টি কবিতাই পাঠকদের মন জয় করতে পারবে।জাগো নিউজ : কবিতা ছাড়া আর কিছু কি লিখেন?মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ : কবিতা ছাড়া গল্প লিখেছি। জাতিসংঘের মিশনে থাকতে ‘শান্তির হাসি’ এবং ‘আটলান্টিকের গর্জন’ নামক ছোট গল্প লিখেছি।জাগো নিউজ : নিজের সাহিত্যানুরাগের মূল্যায়ন করুন।মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ : সাহিত্যের অনেক দিক রয়েছে। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, নাটক, গান ইত্যাদি। কবিতা সাহিত্যের অনন্য একটি দিক। এই কবিতায় আমি ছন্দ দিয়ে লেখার চেষ্টা করেছি। এতে করে পাঠকের পড়তে দিয়ে মনোযোগ আসবে। তবে এটা করতে গিয়ে ভাবার্থের ব্যত্যয় ঘটেনি।অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে পেশাদারিত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছি। পুলিশ বাহিনীও সাহিত্যানুরাগকে উৎসাহিত করছে। চেষ্টা করবো আমৃত্যু লেখা লেখি চালিয়ে যাবো।জাগো নিউজ : জাগো নিউজকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ : জাগো নিউজকেও ধন্যবাদ।জেইউ/এসএইচএস/পিআর