আইন-আদালত

১৩ পুলিশের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে চান হাইকোর্ট

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় পুলিশ-জনতা সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে চারজন নিহতের ঘটনায় ‘জড়িত’ ১৩ পুলিশের বিরুদ্ধে কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ৭ মার্চের মধ্যে এ সংক্রান্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করার জন্য পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো.ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এদিন আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির প্রেসিডেন্ট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।  ছেলের সামনে মাকে ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২০১৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টার দিকে কালিহাতী উপজেলা সদরে বিক্ষুব্ধ জনতা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় চারজন নিহত হন।এ ঘটনায় বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির পক্ষে ২০১৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর রিট করেন অ্যাডভোকেট সালমা আলী। এ রিটের শুনানি করে একই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ওই ঘটনার সব তদন্ত প্রতিবেদন ৬০ দিনের মধ্যে আদালতে জমা দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি পুলিশ ঘটনাস্থলে আইন মেনে উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করেছে কি না তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।  মোতাহার হোসেন সাজু সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনায় পুলিশ দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ২০১৫ সালের ৫ ডিসেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ হেডকোয়াটার্সে জমা দেয়া হয়। আর এ প্রতিবেদনগুলো হাইকোর্টে আসে ১৫ ডিসেম্বর। কোর্ট বন্ধ থাকায় এ প্রতিবেদনগুলো আজ উপস্থাপন করা হয়।তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে ১৩ জন পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সাময়িক বরখাস্তের আদেশসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুপারিশ করা হয়। এ সুপারিশ অনুসারে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা ৭ মার্চের মধ্যে আইজিপি আদালতে প্রতিবেদন আকারে জানাবেন। এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ৯ মার্চ দিন ধার্য করা হয়েছে।সুপারিশে যাদের নাম আছে তারা হলেন, ঘটনার সময়কার টাঙ্গাইলের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার সঞ্জয় সরকার। তার বিরুদ্ধে দ্বায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে ব্যর্থতার পরিচয়, কর্তব্যে অবহেলা এবং অদক্ষতার অভিযোগ আনা হয়। এ কারণে তাকে টাঙ্গাইল জেলা থেকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয় সুপারিশে।টাঙ্গাইলের (উত্তর) অতিরিক্তি পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরিফুর রহমান। তার বিরুদ্ধে দ্বায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে উদাসীনতা ও অদক্ষতার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে কম গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে বদলি করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।ওয়াচার কনস্টেবল মো.মাহতাব উদ্দিন জেলা বিশেষ শাখার কালিহাতী থানার ডিএসবি জোন তথ্য গোপনের মাধ্যমে কর্তব্যকর্মে নিষ্ঠা,সততা ও চরম গাফিলতির পরিচয় প্রদান করেছেন বিধায় তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্তপূর্বক বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের করা যেতে পারে।কালিহাতী থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো.শহীদুল ইসলাম (বর্তমানে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত) এর বিরুদ্ধে উদাসীনতা, অদক্ষতা, গাফিলতি ও অবহেলার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্তপূর্বক বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের করা যেতে পারে।কালিহাতী থানার এসআই মো,আবুল বাশার, মো.ছলিম উদ্দিন, কনস্টেবল মো.আমিনুল ইসলাম, জিয়াউল হক, তমাল চন্দ্র দেব এর বিরুদ্ধে অদক্ষতা, উদাসীনতা, অসদাচরণ, নিষ্ঠা, সততা ও কর্তব্যকর্মে চরম গাফিলতির অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তাদেরকে সাময়িকভাবে বরখাস্তপূর্বক কঠোর বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের করা যেতে পারে।ঘাটাইল থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো.মোখলেছুর রহমান (বর্তমানে খুলনা রেঞ্জে সংযুক্ত) এর বিরুদ্ধে অদক্ষতা, অবহেলা, উদাসীনতা ও অসদাচরণের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্তপূর্বক যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।ঘাটাইল থানার এএসআই মো.হারুন-অর রশিদ এর বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও অদক্ষতার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে দূরবর্তী কম গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে বদলিপূর্বক যথাবীহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।ঘাটাইল থানার এসআই মো.ওমর ফারুক ও এসআই মুনসুপ আলী। তাদের বিরুদ্ধে কর্তব্যকর্মে অবহেলা, অদক্ষতা, উদাসীনতা ও অসদাচরণের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তাদেরকে সাময়িক বরখাস্তপূর্বক অন্যত্র সংযুক্ত করাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।এফএইচ/এসকেডি/আরআইপি