এই শতাব্দীর একজন শ্রেষ্ঠ লোককবি শাহ আবদুল করিম। প্রচলিত লোকবাংলার সুর নিয়েই তিনি এক ধরনের ‘করিমী’ সুর সৃষ্টি করেছেন। তার বাউল গানে আছে মুর্শিদের কথা। সোমবার বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত ‘শাহ্ আবদুল করিম জন্মশতবার্ষিকী’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক আবুল হাসান চৌধুরী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ড. ভীষ্মদেব চৌধুরী, শরবিন্দু ভট্টাচার্য, সাইমন জাকারিয়া। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ড. আবুল আহসান চৌধুরী। বক্তারা বলেন, শাহ আবদুল করিম আমাদের জন্য রচনা করেছেন সুফিধারার প্রেমের গান। ‘মানবগাছ’, ‘মানবতরী’ ইত্যাদি শব্দবন্ধের মধ্য দিয়ে করিম তার গানে এক অন্যরকম ব্যঞ্জনা নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়েছেন। করিম তার নিজের শক্তিতেই আমাদের থেকে এগিয়ে আছেন। তিনি খুব সহজেই অপসৃত হবেন, এটি আমরা মনে করি না। প্রাবন্ধিক আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, শাহ্ আবদুল করিমের জন্মশতবর্ষ অতিক্রান্তির এ শুভলগ্ন থেকেই তার জীবনকথা ও কৃতি নিয়ে, নির্দয় নিয়তি আর ঘোরতর বৈষম্যমূলক সমাজসৃষ্ট দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত তার জীবনসংগ্রাম নিয়ে, তার সঙ্গীতমালার বিধৃত বাঙালির লোকসংস্কৃতির নানা উপাদান বিশেষত বহু জাতি-বর্ণ-ধর্ম সমন্বিত ইহবাদী জীবনচেতনা এবং মরমি দর্শন নিয়ে আরো ব্যাপক ও গভীর বিশ্লেষণাত্মক কাজ হওয়া দরকার। তবেই এক মানবপন্থি সংস্কৃতিসাধক হিসেবে বাউল শাহ আবদুল করিমের যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে বলে মনে করি। সভাপতির বক্তব্যে ড. আবুল আহসান চৌধুরী বলেন, শাহ্ আবদুল করিম কখনো চারণ কবি, কখনো লোক কবি, কখনো বা বাউল কবি। এই মরমি সাধক আমাদের বাউল গানকে যে মাত্রা দিয়েছেন, তা তাকে আমাদের মাঝে স্মরণীয় করে রাখবে। বাংলা একাডেমি তার জন্মশতবর্ষকে কেন্দ্র করে তার গান ও জীবন নিয়ে একটি আলাদা অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারে, যে আয়োজনে উঠে আসবে বাউল আবদুল করিমের জীবন ও সাধনার সামগ্রিক প্রেক্ষাপট। সাকার মুস্তাফার পরিচালনায় সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ভাবনগর ফাউন্ডেশন’ এবং সালাউদ্দীন বাদলের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ আওয়ামী শিল্পীগোষ্ঠী’। সঙ্গীত পরিবেশন করেন স্বপ্না রায়, আবু বকর সিদ্দিক, সালমা চৌধুরী, শতাব্দী রায়, মেহেরুন আশরাফ, লাকী সরকার এবং খোকন বাউল। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন বেণু চক্রবর্তী (তবলা), মো. শহিদুল ইসলাম (বাঁশি), রতন কুমার রায় (দোতারা), বাউল মিলন (মন্দিরা) এবং দশরথ দাস (বাংলা ঢোল)। এদিকে বইমেলায় আজ ২২তম দিনে নতুন বই এসেছে ৬৪টি। আর গতকাল শনিবার পর্যন্ত বাংলা একাডেমির নিজস্ব স্টলে মোট বিক্রির পরিমাণ ৯৭ লাখ ১৫ হাজার ৭৭১ টাকা। এএসএস/এমএইচ/এনএফ/এবিএস