সাহিত্য

দিবাকর রায়ের তিনটি কবিতা

বহুকালের চেনা গন্ধেপায়ে পায়ে দোল খেলে যায়-কোমলতায় ভরাকোন এক শিশু সূর্যের টোলপড়া মুখেদোয়েল-শ্যামা-শালিকের ভোরের মাদলে হলুদ প্রান্তর বিষাদ ভুলেছে বিমুগ্ধতায়!রাখালী বাঁশির টলটল ময়ূরাক্ষী জলে মাটির কলসি ভরেছে এক কালো মেয়ে।ধূসরতা ডেকে আনে বসন্ত বাতাস নিঃশব্দে বলে যায়- ফোটো শিমুল; কচি শাখে ভ্রমর এসেছে আজমালা গাঁথো কৃষ্ণচূড়ার রঙে।আলোকসজ্জা রূপে জোনাকির ক্লান্তি ঘোচাতেএসেছে কমলা জ্যোৎস্না রাত ঐ দূরের হিজল-কদম বনে!নিশাচর সাক্ষী থাকে নীরবতার; মানিক শিয়রে ঘুম নিয়ে আয় গানে!সমবেদনা সর্বজনীন নইএকবার এক রোদমাখা দুপুরেমনের খেয়ালে ঢিল ছুঁড়েছিলাম উঠানের জবাঝোপে। খসে পড়ল কিছু সবুজপাতা একটা অর্ধফোটা ফুল আর একটা ছোট্ট চড়ুইপাখি।তড়িঘড়ি পাখিটিকে হাতে তুলে নিয়ে ঠোঁটেদু’ফোঁটা জল দেওয়ার আগেই নিস্তেজ হয়েপড়ে রইলো মুঠোর কোল ঘেঁষে।রঙিন জীবনের নিষ্পাপ চঞ্চলতায়মুখরিত জীবনানন্দ নিমিষে মর্মভেদী বেদনা!তাই; সেদিন বাল্যকালের জমাট দুঃখ ঘিরে ছিল আমাকে। প্রতীক্ষারত ছিলাম দুপুর থেকে গোধূলি পর্যন্ত; হয়তো অন্য পাখিগুলো দেখতে আসবে হতভাগ্য পাখিটিকে, সমবেদনা জানাবে সজল চোখে!হ্যাঁ, এলো শেষমেষ পাখিকে দেখতে! তবেএকটি বিড়াল, মুখে তুলে নিল নিথর পাখিটিকে। সমবেদনা জানালো না, জল এলো না চোখে! ক্ষুধা নিবারণের আনন্দে লুটেপুটে খেয়ে নিল, পড়ে রইলো দেহাবশেষ।।অনুপ্রেরণার অক্সিজেনবেশি কিছু চাওয়ার নেইদেওয়ার নেই তেমন কিছুইনষ্ট-ভ্রষ্ট এই সমাজের বিষাক্ত থাবাগুলোউপচেপড়া ভালোবাসার কতইবা মূল্য দেবে?চারিদিকে ধূসর দেয়াল আর আমারচিরমুক্তির হাহাকার প্রতিধ্বনিত হয়েফিরে আসে রাত-দিন বারবার।দীর্ঘশ্বাসে ভারি কার্বন-ডাই-অক্সাইডবিস্ফোরিত হবে বলে আজওপ্রহর গুনে চলে সেই কবে থেকেইআজও নিঃশ্বাসে বুক ভরি তোমার দেওয়াঅনুপ্রেরণাসিক্ত একমুঠো বিশুদ্ধ অক্সিজেনে।তুমি দেখে নিও, মিলিয়ে নিওকোন একদিন জ্বলে উঠবইজ্বলতে জ্বলতে ফোঁটায় ফোঁটায়গলে পড়বে কাঁটাতারের দূষিত শাসনচলার পথে ঘাস গজাবে, ফুল ফুটবেসবুজ পাতা আরো সজীব হবে, বাদামি রঙেগা ভাসাবে না প্রথাগত বিশ্বাসী ঝড়েসেদিন আমি হব শুধুই আগুনতুমি হবে ঝাঁঝালো মুক্তির অগ্নিগর্ভা।।এসইউ/পিআর