জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের ক্যানসার ইপিডেমিওলজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেছেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোনো ক্যানসার স্ক্রিনিং জাতীয় কর্মসূচি নেই। আমি পদে থাকা অবস্থায় যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি, কিন্তু নীতিনির্ধারকদের বোঝাতে পারিনি। উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও তিন ধরনের ক্যানসার স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম করা সম্ভব। সেগুলো হলো- ব্রেস্ট, সারভাইকাল ও ওরাল ক্যানসার।
Advertisement
শনিবার (১৪ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে জরায়ুমুখের ক্যানসার সচেতন দিবস ও সচেতনতা মাস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলেন, আমাদের দেশে ওরাল ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের নাম গন্ধও নেই। জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধে যে স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম চলছে তা অসংগঠিত, অসম্পূর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ। এভাবে আগামী একশ বছরেও ২০ শতাংশ মানুষকে স্ক্রিনিংয়ের আওতাধীন আনা সম্ভব হবে না।
আরও পড়ুন: বিএসএমএমইউতে ৬ রোগীর চোখে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন
Advertisement
তিনি বলেন, প্রতি বছর বাংলাদেশে আট হাজারের বেশি নারী জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হন। আর মারা যান প্রায় পাঁচ হাজার। নারীদের ক্যানসারের মধ্যে স্তন ক্যানসারের পরেই এর স্থান। এটা দায়িত্বপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএআরসির হিসাব। জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নিবন্ধন প্রতিবেদন অনুযায়ী নারীদের দ্বিতীয় প্রধান ক্যানসার এটি।
আরও পড়ুন: নিপাহ ভাইরাসে এক মৃত্যু, খেজুরের রস পানে সতর্ক থাকার আহ্বান
অনুষ্ঠানে জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধে ৯ থকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীদের দুই ডোজ টিকা দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলেন, জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে চিকিৎসায় সুস্থ হওয়া সম্ভব। প্রাথমিক প্রতিরোধের জন্য এইচপিভি নামের ক্ষতিকর ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকাদান, বাল্যবিয়ে বন্ধ করা ও এই ক্যানসারের ঝুঁকি ও প্রতিরোধ বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা দরকার। যার কোনো কার্যকর জাতীয় কর্মসূচি এখনও নেওয়া হয়নি।
Advertisement
আরও পড়ুন: ঠান্ডাজনিত রোগে দেড়মাসে ৭৮ মৃত্যু, শীর্ষে চট্টগ্রাম
তারা আরও বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয়ের জন্য ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ে নারীদের উদ্বুদ্ধ করা ও স্ক্রিনিংয়ের সংগঠিত ও সমাজভিত্তিক কর্মসূচি হাতে নেওয়া জরুরি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য ও সচিব আবুল কালাম আজাদ, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. টি এ চৌধুরী, বিএসএমএমইউর গাইনি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লতিফা শামসুদ্দিন, গাইনি অনকোলজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাবেরা খাতুন ও জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. হালিদা হানুম আক্তারসহ অনেকে।
সরকারিভাবে জাতীয় কর্মসূচির জন্য জনমত গঠন ও নিজেদের সাধ্যমতো সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ষষ্ঠবারের মতো জরায়ুমুখের ক্যানসার সচেতনতা দিবস উদযাপন ও মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ‘মার্চ ফর মাদার’ নামের মোর্চা। বেলা ১১টার দিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সামনে থেকে ‘জননীর জন্য পদযাত্রা’, তথ্যসমৃদ্ধ বাংলা লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
এএএম/আরএডি/এএসএম