‘এই জমিতে বাড়ি কইরা কয়েক যুগ পার করছি। এখন শুনি সরকার নাকি আমাগো সব জমি নিয়া নিবো। এই জমিতে ধান, ভুট্টা আবাদ করে পরিবার নিয়া খাইয়া-পইড়া বাঁইচা আছি। এখন তো জাওনের কোনো জায়গা নাই।’
এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার উত্তর পারুলিয়া গ্রামের মানববন্ধনে অংশ নেওয়া কৃষক সাবেদ আলী (৬০)।
হাতীবান্ধা উপজেলার উত্তর পারুলিয়ার তিস্তা নদীর ওপর প্রায় তিন একর ফসলি জমি বালুমহাল ঘোষণার প্রতিবাদে স্থানীয় ভুক্তভোগী কৃষকরা মানববন্ধন করেন।
শনিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে উত্তর পারুলিয়া চরে স্থানীয় কৃষকরা ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন করেন। এতে প্রায় দুইশতাধিক কৃষক অংশ নিয়ে প্রতিবাদ করেন।
মানববন্ধনে পাটিকাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুজিবুল আলম সাদাত, স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে হুমায়ুন কবির, মনিরুজ্জামান, দেবাশীষ রায়, জাদু মিয়া, শফিকুল ইসলাম, ইব্রাহীম, দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বক্তব্যে কৃষকরা বলেন, এখানে আমাদের অনেকের বসতভিটা আছে। এছাড়া তিস্তা নদীর জেগে ওঠা চরে ভুট্টা, মরিচ, পিঁয়াজ, আলু, রসুনসহ নানা ফসল ফলানো হয়, যা দিয়ে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখে-শান্তিতে আছি। কিন্তু এ জমিতে বালুমহাল করা হলে আমরা পথে বসবো।
তারা দাবি করেন, ১৯৪০ ও ১৯৬২ সালের রেকর্ডমূলে ওই জমির মালিক আমরা। কিন্তু তথ্য ভুল করে স্থানীয় প্রশাসন ১৯৯০ সালের রেকর্ডে এ জমি ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত করেছে। এ জমিতে বালুমহাল করার প্রক্রিয়া বন্ধ ও রেকর্ড সংশোধনের দাবি জানাচ্ছি।
ভুক্তভোগী কৃষক রানা বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই জমিতে চাষাবাদ করছি। হঠাৎ শুনি যে আমাদের জমি সরকার বালুমহাল ঘোষণা করেছে। এতে আমরা হতাশ হয়ে পড়ি। তাই আজকে মানববন্ধনের প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লোকমান হোসেন বলেন, বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশক্রমে বিআরএসে খাস খতিয়ানভুক্ত তিস্তার চরাঞ্চলের কয়েকটি স্থানে বালুমহাল করার প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। তবে স্থানীয় কৃষকদের আপত্তি থাকলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
রবিউল হাসান/এমআরআর/জেআইএম