সিলেটের গোলাপগঞ্জে প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো মোগল স্থাপত্যের নিদর্শন ‘দেওয়ানের পুল’ ভাঙা নিয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) উদ্যোগে গণশুনানি হয়েছে। রোববার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে দেওয়ানের পুল সংলগ্ন মাঠে এ গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপজেলার তিন ইউনিয়নের দেড় শতাধিক মানুষ অংশ নেয়।
সিলেট অঞ্চলের এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ইনামুল কবির জানান, শতাধিক স্থানীয় লোকজন মোগল আমলের এ সেতুটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণের পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে এ কথার বিরোধিতা করে পরিবেশবাদী ও ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণকারীরা বলছেন, ২০০ বছর আগে চুনসুরকি দিয়ে নির্মিত ঐতিহ্যবাহী এ সেতু আমাদের ইতিহাসের অংশ। এটি আমাদের অমূল্য সম্পদ। দেওয়ানের পুলখ্যাত এ সেতুটি না ভাঙতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর স্থানীয় প্রশাসনের কাছে চিঠি দিয়েছে। এরপরও গণশুনানির আয়োজন হতাশার।
গোলাপগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ দেওয়ান সড়ক হেতিমগঞ্জ থেকে ঢাকা যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক। এ সড়ক দিয়ে ঢাকা দক্ষিণ, ভাদেশ্বরসহ পূর্ব সিলেটে সহজে যাওয়া যায়। সম্প্রতি রাস্তাটি প্রশস্ত, মেরামত ও উন্নয়নের জন্য প্রায় ৩০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হাতে নেয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের ব্যবস্থাপনায় কাজ শুরু হলে মাঝপথের স্থাপনা দেওয়ান পুল ভাঙা শুরু হয়।
আরও পড়ুন: মোগল আমলের ‘দেওয়ানের পুল’ ভাঙতে এবার গণশুনানি
তখন স্থানীয়রা ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা, পরিবেশ ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্ট সিলেটের নেতারা দেওয়ানের পুল ভাঙার প্রতিবাদ করেন। বিষয়টি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর সেতু ভাঙার কাজ স্থগিত রাখতে সরকারিভাবে নির্দেশনা জারি হয়। এতে সড়কের উন্নয়ন কাজ স্থগিত হয়ে যায়। পরে স্থানীয়দের আরেকটি পক্ষ পুরোনো সেতুটি ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন করেন। ফলে দেওয়ানের পুল ভাঙা হবে কিনা এ নিয়ে গণশুনানির আয়োজন করা হয়।
গণশুনানিতে সভাপতিত্ব করেন লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহতাব উদ্দিন জেবুল। ইউপি সদস্য এম এ আহাদ ও এনামুল হক আবুলের পরিচালনায় গণশুনানিতে বক্তব্য দেন গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদির শাফি চৌধুরী এলিম, ভাইস চেয়ারম্যান নাজিরা বেগম শিলা, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ মিছবাহ উদ্দিন, সিলেট পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর সভাপতি আবদুল আহাদ, ফুলবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হানিফ, ঢাকা দক্ষিণ ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ইউপি সদস্য সেলিম আহমদ, ফুলবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম প্রমুখ।
এ বিষয়ে সিলেট অঞ্চলের এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ইনামুল কবির বলেন, গণশুনানিতে গোলাপগঞ্জ উপজেলার তিন ইউনিয়নের অন্তত ১৭০ জন মানুষ মতামত দেন। এরমধ্যে আনুমানিক ১৩০ জন সেতুটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণের পক্ষে মত দিয়েছেন। গণশুনানি থেকে উঠে আসা মতামতগুলো আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠাব। তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।
আরও পড়ুন: ভাঙা থেকে রক্ষা পেল মোগল স্থাপত্যের নিদর্শন ‘দেওয়ানের পুল’ সেতু
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের ব্যবস্থাপনায় কাজ শুরু হলে মধ্য পথে প্রাচীনকালের স্থাপনা দেওয়ান সেতুটিও ভাঙার কবলে পড়ে। তিন কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে এখানে একটি প্রশস্ত সেতু নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয় এলজিইডি। মোগল আমলের এ সেতুটির ভাঙার কাজ প্রায় ৪০ ভাগ সম্পন্ন হলে তা বন্ধের লক্ষ্যে বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে দাবি ওঠে।
এ বিষয়ে ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংগ্রাহক ভাষাসৈনিক মতিন উদ্দীন আহমদ জাদুঘরের পরিচালক ডা. মোস্তফা শাহজামান চৌধুরী বাহার বলেন, মোগল স্থাপত্যের ঐতিহাসিক দেওয়ানের পুল প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সম্পদ। এটা না ভাঙতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ইতোমধ্যে চিঠি দিয়েছে। তাই এলজিইডি কর্তৃপক্ষের এটা ভাঙার অধিকার নেই।
ছামির মাহমুদ/আরএইচ/জিকেএস