ভরা মৌসুমে আশানুরূপ ফলন ও টমেটোর দাম না পেয়ে এবার লোকসানের শঙ্কা রাজবাড়ীর টমেটোচাষিদের মনে। গতবছরের অর্ধেক ফলনও হয়নি এবার। বাজারে একটু দাম বাড়লে তারা কিছুটা হলেও লাভবান হতেন বলে জানান কৃষকরা।
পদ্মা নদী বিধৌত জেলা রাজবাড়ীর নদী তীরবর্তী চর ও নিচু অঞ্চলে টমেটোর আবাদ বেশি হয়ে থাকে। এর মধ্যে বেশি আবাদ হয় জেলা সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলায়। এবার বৃষ্টির প্রভাবে টমেটো গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ফলন বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করেও আশানুরূপ ফলন পাননি চাষিরা।
জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে সেচ, জমি প্রস্তুত, কীটনাশক প্রয়োগ, বীজ ও চারা রোপণ এবং শ্রমিকের মজুরিসহ কৃষকের প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। আর লিজের জমি হলে খরচ বেড়ে দাঁড়ায় দিগুণেরও বেশি। এবার বিঘায় ফলন হয়েছে ১শ থেকে দেড়শ মণ। টমেটোর পচনের পাশাপাশি সাইজও হয়েছে ছোট। যে কারণে দাম কম পাচ্ছেন কৃষকরা। বর্তমানে পাইকারি বাজারে টমেটো ১৩ থেকে ১৭ টাকা কেজি ও ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবছর রাজবাড়ীতে প্রায় ৮শ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলায়। বিউটিফুল, বিপুল প্লাস, বিগল ও মিন্টু সুপার এসব উচ্চ ফলনশীল জাতের টমেটোর আবাদ হচ্ছে এ জেলায়।
সরেজমিনে সদর উপজেলার বরাটের উড়াকান্দা গোপলবাড়ী, নয়নসুখ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাঠজুড়ে রয়েছে টমেটোর ক্ষেত। কিন্তু গাছে নেই পর্যাপ্ত ফলন। তাছাড়া মাটিতে নুইয়ে পড়েছে গাছ। গাছের টমেটোতে পচন ধরেছে আবার আকারেও ছোট। কৃষকরা ক্ষেত থেকে পচা টমেটো ফেলে গাছে থেকে পাকা টমেটো ছিঁড়ে ঝুড়িতে রাখছেন। পুরুষের পাশাপাশি বাড়ির নারীরাও টমেটো তোলার কাজ করছেন। বাজারে বিক্রির জন্য তারা বাছাই করে ঝুড়িতে রাখছেন। পরে সেখান থেকে টমেটো জেলা শহরসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রির জন্য নেওয়া হচ্ছে।
টমেটোচাষি সিদ্দিক শেখ বলেন, এবার যে ফলন হয়েছে তাতে অনেক টাকা লস হবে। গত বছরের তুলনায় ফলন হয়েছে অর্ধেক। বাজারে দামও পাচ্ছেন কম। কৃষক বাঁচলে, দেশ বাঁচবে। কিন্তু কেউ তাদের খোঁজ খবর নিচ্ছে না। এভাবে লস হতে থাকলে চাষাবাদ বাদ দিতে হবে। টমেটোর দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি হলে তারা একটু লাভবান হতেন।
চাষি বছির বলেন, ফলন কম, তারওপর যে দাম পাচ্ছেন তাতে পোষাচ্ছে না। প্রথম দিকে কেজি ৪০ টাকার ওপরে বিক্রি করলেও এখন ১৫ টাকার নিচে বিক্রি করতে হচ্ছে।
চাষি মান্নান শেখ বলেন, এবার তিনি ৫ বিঘা জমিতে টমেটোর আবাদ করেছেন। আবাদের শুরুতে বৃষ্টিতে এবার ক্ষেতের প্রায় গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। পরবর্তীতে সার, ওষুধ দিয়ে গাছ বাঁচালেও তেমন ফলন পাননি। তাছাড়া ক্যাটও রয়েছে। এখন প্রতিমণ টমেটো ৫ থেকে ৬শ টাকায় বিক্রি করছেন। বিঘায় এবার দেড়শ মণ টমেটোও পাবেন না। এই ক্ষেতেই গতবছর দুইশ মণের ওপরে ফলন হয়েছিলো। নিজের জমি হলে প্রতি বিঘায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার ও লিজের জমি হলে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা খরচ হয়। একেতো ফলন কম, তার ওপর দাম কম। বাজারদর একটু বাড়লে তারা বাঁচতেন।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এসএম সহীদ নূর আকবর বলেন, জেলায় এবার প্রায় ৮শ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে। রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দের নদীর পাড়ের ইউনিয়নগুলোতে বেশি অবাদ হয়। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিয়মিত চাষিদের পরামর্শ দিয়েছেন।
রুবেলুর রহমান/এফএ/এমএস