আড়াই মাস আগেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও বারডেম হাসপাতালের ছাদের দখল ছাড়ছে না মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো। উল্টো বারডেম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে মোবাইল কোম্পানিগুলো হয়রানি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বারডেমের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।সূত্র জানিয়েছে, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় বারডেম কর্তৃপক্ষ বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলেও আদালতে উল্টো মামলা ঠুকে সংযোগ বিছিন্নের ওপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ নিয়ে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন মোবাইল কোম্পানির কর্তারা। যার শুনানি মার্চের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।শুধু তাই নয়, একটি মোবাইল কোম্পানি বারডেম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সিএসআর (কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিভিলিটি) এর নামে অর্ধকোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ তুলেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৫ সালে তিন মোবাইল অপারেটর বাংলা লিংক, গ্রামীণ, রবি এবং ২০০৭ সালে এয়ারটেল ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বাডাস) এর সঙ্গে বারডেম হাসপাতালের ছাদে টাওয়ার স্থাপন সংক্রান্ত চুক্তি করে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাডাসের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বারডেম কর্তৃপক্ষ নিজস্ব প্রয়োজনের তাগিদে চুক্তির মেয়াদ নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়া মোবাইল কোম্পানিগুলোর স্থাপনা সরিয়ে নিলে ছাদে নতুন ফ্লোর নির্মাণ করারও সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। এ লক্ষ্যে তারা গত মার্চে তাগাদা পত্র দেয়। কিন্তু মোবাইল কোম্পানিগুলো টাওয়ার সরিয়ে নিলে ব্যবসায়িকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তাজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে জানিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তাদের অপসারণ না করতে অনুরোধ জানায়।বারডেম হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বার বার অনুরোধের ফলে তারা হিসাব-নিকাশ কষে দেখেন মোবাইল কোম্পানিগুলোর মোট ১৩ হাজার ১১৭ স্কয়ার ফুট জায়গায় স্থাপনা রয়েছে। তারা সবগুলো মোবাইল ফোন কোম্পানিকে একটি স্টেশন থেকে কার্যক্রম পরিচালনার কথা জানিয়ে ৭ হাজার দুইশ বর্গফুট জায়গা খালি করে দিতে হবে বলে নোটিশে জানানো হয়। তবে ৯ মাস আগে আগাম নোটিশ দেয়া হলেও কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে এখনো এর সাড়া দেয়নি। অপরদিকে, গত ডিসেম্বরে মেয়াদ শেষ হলে বারডেম কর্তৃপক্ষ টাওয়ারের বিদ্যুত সংযোগ বিছিন্ন করলে পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে আদালতে মামলা ঠুকে সংযোগ বিছিন্নের ওপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ নিয়ে কার্যক্রম বহাল রাখে। সূত্র জানায়, মোবাইল কোম্পানিগুলোর মধ্যে বাংলা লিঙ্ক বারডেম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলেছে। এছাড়া কোম্পানিটি বারডেম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে মাসিক এক লাখ টাকা ভাড়া ও সিএসআরের নামে ৫০ লাখ টাকা টাকা চাঁদা চেয়েছে বলে অভিযোগ তোলে। এ অভিযোগ প্রসঙ্গে বারডেম হাসপাতালের পরিচালক (হাসপাতাল) বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) শহিদুল হক মল্লিক জাগো নিউজকে বলেন, চুক্তির মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নার্সিং কোর্স পরিচালনার জন্য জায়গা স্বল্পতার কারণে ছাদ আর ভাড়া না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ কারণে এবং তাদের নিজস্ব প্রয়োজন মেটাতে তারা ছাদ ফাঁকা করতে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, হাসপাতালের উন্নয়নে সিএসআরের আওতায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আর্থিক সাহায্য প্রদান করে। টাওয়ার সংক্রান্ত কোনো ব্যাপারে নয়, হাসপাতালের উন্নয়নে তারা মোবাইল অপারেটর কোম্পানির কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছিলেন। তবে বিষয়টি আদালতে শুনানি পর্যায়ে থাকায় বিস্তারিত বলতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। সার্বিক বিষয় সম্পর্কে জানতে বাংলা লিংকের জনসংযোগ শাখার আঙ্কিত সুরেকার নামের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি লিখিতভাবে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চেয়ে ই-মেইল করার পরামর্শ দেন। তার পরামর্শ অনুসারে মঙ্গলবার রাতে ই-মেইল পাঠানো হলেও বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।এমইউ/এসএইচএস/এএইচ/আরআইপি