বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জামালপুর জেলার সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট বাকী বিল্লাহ কানাডায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হয়েছেন।
Advertisement
গতকাল টরেন্টোর স্থানীয় রেড হর্ট তন্দুরি রেস্টুরেন্টে এ সভার আয়োজন করা হয়।
আলোচনায় উঠে আসে উন্নয়ন ও অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার বাংলাদেশের এবং খুনি নুর চৌধুরীকে দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে।
অন্টারিও আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বাকসুর সাবেক ভিপি ফয়জুল করিমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জামালপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাকী বিল্লা এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অন্টারিও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লিটন মাসুদ।
Advertisement
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি বাকী বিল্লা বলেন, বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তোরণ ঘটেছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নীতি সংক্রান্ত কমিটি (সিডিপি) গত ১৫ মার্চ এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়।
এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক এ তিনটি সূচকের যে কোনো দুটি অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ তিনটি সূচকের মানদণ্ডেই উন্নীত হয়েছে।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) মানদণ্ড অনুযায়ী এক্ষেত্রে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হবে কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় তার থেকে অনেক বেশি অর্থাৎ ১৬১০ মার্কিন ডলার। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭২ দমমিক ৯। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক হতে হবে ৩২ ভাগ বা এর কম যেখানে বাংলাদেশের রয়েছে ২৪ দশমিক ৮ ভাগ।
তিনি বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আজকের এই উত্তরণ- যেখানে রয়েছে এক বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার ইতিহাস’ সরকারের রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের এটি একটি বড় অর্জন। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাহসী এবং অগ্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে নিয়ে এসেছে।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় উঠে আসে জন্মের ৫০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে কীভাবে বাংলাদেশ দ্রুতগতিসম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মতো সফলতা দেখাতে যাচ্ছে।
উঠে আসে জাতির পিতা কীভাবে সমগ্র জাতিকে স্বাধীনতার জন্য একতাবদ্ধ করেছিলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ থেকে কীভাবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হতে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা, গতিশীল নেতৃত্ব, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানীমুখী শিল্পায়ন, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাক শিল্প, ঔষধ শিল্প, রপ্তানী আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচক।
পদ্মাসেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ। এতে প্রদর্শন করা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদাত্ত আহ্বান, ‘আসুন দলমত নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি’।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ১৯৯৬ সালে কানাডা আসার পর শরণার্থী হিসেবে আশ্রয়ের আবেদন করেন খুনি নূর চৌধুরী ও তার স্ত্রী। এর দুই বছরের মাথায় নিম্ন আদালতে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়ে নূর চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়। গুরুতর অপরাধে সংশ্লিষ্টতার তথ্য থাকায় ২০০২ সালে কানাডা নূর চৌধুরী দম্পতির আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে।
আপিল করেও ২০০৬ সালে তারা হেরে যান। কিন্তু তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়নি। এরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি নূর চৌধুরীর বিষয়ে কানাডায় আইনি লড়াইয়ের একটি ধাপের জয় পেলো বাংলাদেশ।
কানাডার অটোয়া এই লড়াইয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হেরে গেছে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কানাডা সরকারের কাছে আত্মস্বীকৃত বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য জোর দাবি জানানো হয়।
সভায় আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি টরেন্টোর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে খুনি নুর চৌধুরীকে দেশে ফেরতের দাবিতে মানববন্ধনে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানানো হয়।
আলোচনায় অংশ নেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি আমিন মিয়া, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সভাপতি ডা. হুমায়ুন কবির, অন্টারিও আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার নওশের আলী, রফিকুল আলম, দপ্তর সম্পাদক খালেদ শামীম, প্রচার সম্পাদক আকরামুল ইসলাম খান, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক হাসমত আরা জুই, নির্বাহী সদস্য জিয়াউল আহসান চৌধুরী, মোস্তাক চৌধুরী, উপ দপ্তর সম্পাদক শাকিল আহমেদ, যুব সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন।
কানাডা আওয়ামী লীগ নেতা সাজ্জাদ হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক শেখ জসিম উদ্দিন, নির্বাহী সদস্য আব্দুল মান্নান, ঝোটন তরফদার। কানাডা ছাত্রলীগের সভাপতি ওবায়দুর রহমান, তৌহিদুর রহমান দুর্জয়, মোহাম্মদ সাকিব, সোহাগ হোসাইন, তৌহিদুর রহমান আশিক, শাকিল আহমেদ ও মো. তামিমসহ অনেকেই।
এমআরএম/এমএস