দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়েছেন ক্ষমতাসীন দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের পাশাপাশি সংঘর্ষের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। কোন কোন ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ করে মাঠে নেমেছেন বিদ্রোহী প্রার্থী। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে ফল বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।নির্বাচন মানেই প্রতীকের লড়াই। আর বাংলাদেশে ৯০ দশক থেকে প্রতীকের লড়াই মানেই নৌকা আর ধানের শীষের প্রতিযোগিতা। এতোদিন কেবল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাওয়া যেত এই আমেজ। কিন্তু স্থানীয় সরকারের অন্য সব ভোটের লড়াইয়ে দলগুলো অংশ নিলেও তাদের সমর্থিত প্রার্থীরা পছন্দের এই প্রতীকগুলো পেত না। কারণ, কাগজে কলমে এই নির্বাচন বরাবর হয়ে আসছে নির্দলীয় ব্যানারে। তবে আইন সংশোধনে এই ‘দ্বিচারিতা’র অবসান ঘটে পৌরসভা নির্বাচনের মাধ্যমে। পৌরসভা নির্বাচনের পর ইউপি নির্বাচনেও চেয়ারম্যান প্রার্থীরা পাচ্ছেন দলের জাতীয় নির্বাচনের প্রতীক। ভোটারদের মতে, ভোটের রাজনীতিতে প্রধান প্রতীক দুটোর লড়াই শুধু নির্বাচনের লড়াই থাকে না, রাজনীতির মহাযুদ্ধের বার্তা নিয়ে আসে।নির্বাচন শুধু ক্ষমতার পালাবদলের মাধ্যম নয়, জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের মানদণ্ডও বটে। যে কারণে আসন্ন এই নির্বাচন রাজনৈতিক দলের প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে দেখা দিয়েছে। ফলে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে ফের চাঙ্গা হয়ে উঠেছে পল্লীর জনপদ। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক শিবিরে উত্তাপও ছড়িয়ে পড়েছে।দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের জের এখন ছড়িয়ে পড়েছে তৃণমূলের রাজনীতিতে। বিশেষ করে আসন্ন ইউপি নির্বাচনের মনোনয়ন দেয়াকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের দলীয় নেতা-কর্মী দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।প্রার্থিতা নির্ধারণে এক পক্ষের বিরুদ্ধে অপর পক্ষ অনিয়ম ও পক্ষপাতের অভিযোগে এনে সংবাদ সম্মেলন করে। এর পরের দিনে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাব রয়েছে মর্মে অপর পক্ষ পাল্টা অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলন করেন। জেলার বটিয়াঘাটাতে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন শীর্ষ দুই নেতার অনুসারীরা। রাজাকার পুত্রকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগও করা হয়েছে। ডুমুরিয়ায় সভা করে দলীয় প্রার্থীকে বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মোট কথা দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দলের তৃণমূলের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মতানৈক্যের কারণে জেলা থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা। একে অপরের বিরুদ্ধে সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। এসব প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শীর্ষ দুই নেতার জেলা পর্যায়ের অনুসারীদের উভয় পক্ষে দেখা গেছে। এ অবস্থায় নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসবে ততই উত্তাপ-উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।সূত্র মতে, শীর্ষ নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের জের ধরে জেলার বেশ কিছু ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ করে বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে নেমেছে। যদিও বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়ার হুমকি রয়েছে কেন্দ্রীয়ভাবে। সে ক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্ধারিত দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বিদ্রোহী প্রার্থীদের অবস্থান জানতে।আলমগীর হান্নান/এসএস/এমএস