আইন-আদালত

ঢাকার দুই মেয়র-রাজউক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল

রাজধানী ঢাকার রাস্তা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও গাড়ি পার্কিং বন্ধে রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই রায় রায় বাস্তবায়ন না হওয়ায় রাজউক চেয়ারম্যান ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ কেন আনা হবে না- সেই মর্মে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

Advertisement

এ সংক্রান্ত এক আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবীরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারির আদেশ দেন। বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।

রুলে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে কেন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে আজ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ।

Advertisement

আদেশের পর অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ জানান, ঢাকার রাস্তার পাশে ভবন তৈরিতে রাজউক কর্তৃক অনুমোদিত লে-আউট প্ল্যানে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়। অথচ অনেক ভবন মালিক গাড়ি পার্কিংয়ের নির্ধারিত জায়গায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান/দোকান করেন বা বসবাস করেন। তাদের গাড়িগুলো ভবনের সামনের রাস্তায় পার্কিং করায় ঢাকা শহরে মারাত্মক যানজটের সৃষ্টি হয়।

তাই, ঢাকার রাস্তা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও গাড়ি পার্কিং বন্ধে পরিবেশবাদী ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)-এর পক্ষে ২০১৫ সালে একটি রিট করা হয়। সে রিটের প্রাথমিক শুনানির পর আদালত রুল জারি করে আদেশ দেন। রুলে অনুমোদনহীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, অবৈধ স্থাপনা অপসারণের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

একই সঙ্গে কোন কোন ভবনে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় নকশাবহির্ভূত স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে, রাজউক চেয়ারম্যানকে ৬০ দিনের মধ্যে সে তালিকা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে রাজউক গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকার কয়েকশ ভবনের তালিকা আদালতে দাখিল করে। এরপর বিভিন্ন সময় রাজউক প্রতিবেদন দিয়ে আদালতকে জানায়, ২০১৬ সাল থেকে তারা এসব অবৈধ স্থাপনা অপসারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। একপর্যায়ে রুলের চূড়ান্ত শুনানি করে ২০১৯ সালের ৩ জুলাই রায় দেন হাইকোর্ট।

সে রায়ে রাজধানীতে সড়কের পাশে যেসব ভবনে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় নকশাবহির্ভূতভাবে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দোকান তৈরি করা হয়েছে- সেগুলো এক মাসের মধ্যে ভেঙে ফেলতে ভবন মালিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়। আর ভবন মালিকরা তা না করলে পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে তা করতে রাজউককে নির্দেশ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ভাঙার খরচ ভবন মালিকের কাছ থেকে আদায় করতে বলেন আদালত।

Advertisement

এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তা থেকে অননুমোদিত পার্কিং সরাতে আইনগত পদক্ষেপ নিতে সিটি করপোরেশনকে নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু এই রায় বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় এবং রায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী আদালতে প্রতিবেদন না দেওয়ায় গত বছর দুই মেয়র ও রাজউক চেয়ারম্যানের কাছে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়ে আদেশ বাস্তবায়নের জন্যে বলা হয়। সে নোটিশের পরও পদক্ষেপ না নেওয়ায় আদালত অবমাননার অভিযোগ আনতে আবেদন করা হলে সেই আবেদনের শুনানির নিয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, আগের দায়ের করা রিটের শুনানি নিয়ে ২০১৯ সালের ৩ জুলাই হাইকোর্ট ৩০ দিন সময় দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রচার করতে বলেন। ওই বিজ্ঞপ্তিতে কার পার্কিংয়ের জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা অপসারণের নির্দেশ দেওয়ার কথা বলা হয়।

বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর এবং বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

রায়ে আদালত বিবাদীদের (ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরশনের মেয়র, রাজউকের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টরা) ছয় মাসের মধ্যে ভবনের কার পার্কিং এলাকা থেকে দোকান/ব্যবসা প্রতিষ্ঠান/স্থাপনা অপসারণের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে এর খরচ ভবন মালিকের কাছ থেকে আদায়ের নির্দেশ দেন। রায়ে রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতেও বিবাদীদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ওই বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।

আদালতের এসব নির্দেশনা প্রতিপালন না হওয়ায় এইচআরপিবির পক্ষে নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশে সাত দিনের মধ্যে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য জানানো হয়। কিন্তু যানজট নিরসনে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় হাইকোর্টে আদালত অবমাননার অভিযোগে আবেদন করা হয়।

ওই আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আজ আদালত ঢাকার দুই সিটির মেয়র ও রাজউকের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে রুল জারি করেন। একই সঙ্গে উচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়ন না করায় তাদের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

এফএইচ/কেএসআর/এমএস