জাতীয়

মানবাধিকার সংস্থার আড়ালে ‘এমএলএম’ ব্যবসা, নিঃস্ব কয়েক হাজার মানুষ

মানবাধিকার সংস্থার আড়ালে ‘এমএলএম’ ব্যবসা, নিঃস্ব কয়েক হাজার মানুষ

বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থা’র আড়ালে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম ব্যবসার আড়ালে কয়েক হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র।

Advertisement

মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দিনগত গভীর রাতে রাজধানীর বাড্ডা এলাকা থেকে চক্রের মূলহোতাসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১)।

গ্রেফতাররা হলেন- চক্রের মূলহোতা মো. আব্দুল কাদের (৪৪), তার সহযোগী মির্জা নাসির উদ্দিন (২৫), মাহফুজুর রহমান (৫০), এ আর আব্দুল মোমেন (৪৯), মো. মেহেদী হাসান (২৫), মো. আমজাদ হোসেন (৩৪), মো. মঞ্জুরুল হাসান খান (৩৫), আব্দুল বারিক (৩৮), মো. রুহুল আমিন (২৫), মোছা. মুন্নি (৩০) এবং নিলুফা ইসলাম নিপা (৩৪)।

আরও পড়ুন: প্রতারণা করে হাতিয়েছেন ৬ কোটি টাকা, গড়েছেন দোকান-ফ্ল্যাট ব্যবসা

Advertisement

এসময় তাদের কাছ থেকে একজন ভিকটিম, চারটি কম্পিউটার, চারটি ল্যাপটপ, ১৭টি মোবাইল, বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই, ভাউচার, চুক্তিনামা,প্যাড, সিল, নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়।

বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কাওরান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।

তিনি বলেন, ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র দীর্ঘদিন ধরে মানবাধিকার ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থার আড়ালে এমএলএম ব্যবসার নামে প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে। তারা পরস্পর যোগসাজসে দীর্ঘদিন বিভিন্ন ছোট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব মানবাধিকার ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থার নামের মাধ্যমে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করে।

আরও পড়ুন: ২০ কোটি টাকার বাড়ি ও মাছের খামার করেছেন শাহেদ

Advertisement

চক্রটি মূলত সমাজের নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তদের টার্গেট করে মাসিক ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতনে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সংস্থাটির দাতা সদস্য বানানোর কথা বলে অনুদান হিসেবে জনপ্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিতো।

তিনি বলেন, চক্রটি এরই মধ্যে প্রায় সহস্রাধিক মানুষের কাছে থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে চক্রটিকে আইনের আওতায় আনতে র‌্যাব-১ ছায়াতদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়।

এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার দিনগত রাত ১টার দিকে রাজধানীর বাড্ডা থানার প্রগতি স্বরণির কথিত বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থার অফিসে থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

চক্রটির মূলহোতা আব্দুল কাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র‌্যাব জানায়, কাজের নামে দাতা সদস্যদের দিয়ে এমএলএম আদলে নতুন দাতা সদস্য সংগ্রহের কাজ করাতেন আব্দুল কাদের। ভুক্তভোগীদের বলা হতো ৩০ হাজার টাকা দিয়ে দাতা সদস্য হবার পর বেতন ১০ হাজার টাকা হবে। কাজ হিসেবে এলাকায় বাল্যবিবাহ হলে, কোনো দরিদ্র পরিবার অর্থাভাবে মেয়ে বিয়ে দিতে না পারলে এবং নদীতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তোলা হলে সংস্থাটির কর্মকর্তাদের জানাতে বলা হতো।

আরও পড়ুন: মালয়েশিয়া নেওয়ার কথা বলে টাকা আত্মসাৎ, দালালের কারাদণ্ড

এমন সহজ চাকরির আশায় ৩০ হাজার টাকা দিয়ে দাতা সদস্য হবার পর তাদের জানানো হতো নতুন দাতা সদস্য আনতে হবে। নতুন সদস্য আনতে না পারলে বেতন হবে না। অথচ চক্রটি টাকা নেওয়ার আগে লোক সংগ্রহের বিষয়ে কিছুই বলতো না।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, ভুক্তভোগীরা টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়ে বেতন না পেয়ে রাজধানীর মধ্য বাড্ডার অফিসে গেলে তাদের মামলা দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করার ভয় দেখানো হতো। অধিকাংশ সদস্যই সমাজের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। এভাবে মূলহোতা আব্দুল কাদের কয়েক হাজার গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।

টিটি/এমকেআর/জেআইএম