দেশজুড়ে

ছাত্রলীগ নেতা শান্তর বিষয়ে যা জানা গেলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় শান্ত কুমার রায় (৩০) নামের এক ছাত্রলীগ নেতা প্রায় পাঁচ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। পাশাপাশি প্রতিদিনই থানায় বাড়ছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগকারীর সংখ্যা।

বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা পর্যন্ত নবীনগর থানায় পলাতক ওই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক ডজনে। এসব অভিযোগে শান্ত রায় ছাড়াও তার বাবা নির্মল রায়কে আসামি করা হয়েছে।

শান্ত কুমার রায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের থোল্লাকান্দি গ্রামের নির্মল রায়ের ছেলে। তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক। রয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদেও। ছাত্রলীগের রাজনীতির পাশাপাশি সক্রিয় সদস্য ছিলেন ইসকনের (ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস)। শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) থেকে তিনি পলাতক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শান্ত কুমার রায়ের বাবা নির্মল কুমার রায় পরিবার নিয়ে চট্টগ্রামে বসবাস করেন। কিন্তু শান্ত কুমার গ্রামের বাড়ি জেলার নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দিতে বসবাস করতেন। তিনি সবাইকে জানিয়েছেন, তার বাবা সোনার ব্যবসা করেন। আর নিজেকে পরিচয় দিতেন সিগারেট, সোনা ও জমির ব্যবসায়ী। তাই তার ব্যবসায় লগ্নির প্রস্তাব দিয়ে প্রথম দিকে পরিচিত ব্যবসায়ীদের আস্তা অর্জন করতে অল্প টাকায় অধিক মুনাফা দিতে শুরু করেন। কেউ এক লাখ টাকা দিলে তাকে সপ্তাহে ১০ হাজার টাকাসহ ফেরত দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: ৫ কোটি টাকা নিয়ে গায়েব ছাত্রলীগ নেতা

কেউ ১০ লাখ টাকা দিলে এক লাখ টাকা লভ্যাংশসহ ফেরত দিয়েছেন। ব্যাংক থেকে অধিক লাভ পাওয়ায় অনেকেই লোভে পড়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ তাকে দিয়েছেন। শর্ত ছিল কাউকে এ লাভের কথা বলা যাবে না। কিন্তু শনিবার থেকে শান্ত রায়ের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বের হয়ে আসে একে একে অনেক পাওনাদার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শান্ত কুমার রায় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। তা সত্ত্বেও এক লাফে জেলা ছাত্রলীগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পাওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে।

ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতারা জাগো নিউজকে জানান, প্রায় দেড়যুগ ধরে বড়িকান্দি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নতুন কোনো কমিটি নেই। এ কমিটির নেতারা যার যার কর্মস্থলে রয়েছেন। প্রায় তিন বছর আগে ওই কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের গুঞ্জন ওঠে। সে সময় শান্ত কুমার রায়ের ছাত্রলীগের কোনো পদ না থাকায় নিজেকে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপরই নিয়মিত যোগাযোগ শুরু করেন জেলা ও উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে। জেলা ছাত্রলীগের এক নেতার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতাদের সান্নিধ্য পান।

শুধু তা নয়; মন্ত্রী, এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করে নিজেকে জাহির করতেন শান্ত। ফলে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতির বদলে এক লাফে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ বাগিয়ে নিতে সক্ষম হন তিনি। শুধু তাই নয়, পেয়ে যান ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক জয়-লেখকের কমিটির উপ-সম্পাদক পদ।

বড়িকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি লাল মিয়া বলেন, ‘পলাতক শান্ত ৩-৪ বছর আগে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী ছিল। হঠাৎ শুনি সে জেলা কমিটিতে পদ পেয়েছে।’

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার পারভেজ হারুত বলেন, ‘ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি প্রার্থী ছিল শান্ত। কিন্তু তার তো কোনো কর্মীই ছিল না যারা তার সঙ্গে মিছিল-মিটিংয়ে যাবে। ফেসবুকে দেখেছি সে আওয়ামী লীগের, ছাত্রলীগের বড় বড় নেতাদের সঙ্গে সেলফি তুলে পোস্ট দিতো। তার পুঁজি ছিল ফেসবুক। এসবের কারণে সে এক লাফে জেলা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পদ পেয়েছে। এখন শুনি সে টাকা-পয়সা নিয়ে পালিয়েছে।’

শান্ত ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন বড়িকান্দি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মো. রিয়াদ।

তিনি বলেন, ‘এ কমিটি গঠনের আগেই সে জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেয়ে যায়। গত প্রায় তিনমাস আগে শান্ত ধার হিসেবে আমার কাছ থেকে সাড়ে ৯ লাখ টাকা নিয়েছিল। আমি ব্যাংক চেকের মাধ্যমে তাকে টাকা দিয়েছিলাম। খুব শিগগির টাকাগুলো ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই সে পালিয়ে গেছে।’

একই ইউনিয়নের ছাত্রলীগ সভাপতি প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নিয়েছিল। এরমধ্যে এক লাখ টাকা দিয়েছে। বাকি এক লাখ টাকা রোববার দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই শনিবার থেকে সে নিখোঁজ।’

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল বলেন, ‘জেলা কমিটির পদ পাওয়ার আগে শান্তর সঙ্গে পরিচয় আমাদের ছিল না। তার ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে জেনেছি। তবে আমাদের কেউ এ বিষয়ে জানায়নি।’

তিনি বলেন, ‘কারও ব্যক্তি অপকর্মের দায় ছাত্রলীগ নেবে না। তবে আমরা খোঁজ নিচ্ছি। দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নবীনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল আহমেদ বলেন, ‘এ পর্যন্ত ১২ জন শান্তর বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা অভিযোগগুলো তদন্ত করছি। পাশাপাশি তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।’

আবুল হাসনাত মো. রাফি/এসআর/এএসএম