দেশজুড়ে

শঙ্কা নিয়েই তীরে ফিরছেন জেলেরা

ইলিশের আভয়াশ্রম হওয়ায় ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে দু’মাসের জন্য ইলিশসহ সব ধরনের মাছ আহরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। এতে বেকার হয়ে পড়বেন জেলার প্রায় আড়াই লাখ জেলে। সরকারি নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করলেও বিকল্প কর্মস্থান না থাকায় এ সময়টা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাতে হবে বলে আশঙ্কা তাদের। সরেজমিনে দেখা গেছে, আগামী ১ মার্চ মধ্যরাত থেকে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ায় জাল, নৌকা ও ট্রলার নিয়ে এরইমধ্যে তীরে ফিরতে শুরু করেছেন জেলেরা। আবার কোনো জেলে তাদের নৌকা ও ট্রলার থেকে জাল তুলে বাড়ি নিতে শুরু করেছেন। কেউ তীরে ট্রলার উঠিয়ে ইঞ্জিন খুলে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন।

আরও পড়ুন- মেঘনায় নাব্য সংকটে নৌযান চলাচল ব্যাহত

ভোলার শিবপুর ইউনিয়নের ভোলারখাল এলাকার জেলে মো. হানিফ, আবু কালাম, মো. ইব্রাহিম ও জাহাঙ্গীর মাঝি বলেন, সরকারি দুই মাসের নিষেধাজ্ঞাকে আমরা মেনে নদী থেকে নৌকা, ট্রলার, জাল নিয়ে তীরে ফিরে এসেছি। আমরা এই দুই মাস নদীতে মাছ শিকারে যাবো না।

তারা আরও বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় তাদের অনেক কষ্ট হয়। সরকারি চাল পেয়ে মোটামুটি খেয়ে বাঁচেন। তবে সরকারি চাল প্রতি বছরই দেরি করে পান। এজন্য বাধ্য হয়ে অনেক জেলে লুকিয়ে নদীতে মাছ শিকার করেন।

একই এলাকার মো. ইদ্রিছ জানান, নদীতে মাছ ধরা বন্ধ থাকলে তাদের আয় রোজগার বন্ধ থাকে। তখন এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি চালাতে খুবই কষ্ট হয়। সেই কিস্তির চাপে অনেক জেলে নদীতে পালিয়ে মাছ ধরতে যান। তাই সরকারের নিষেধাজ্ঞা যদি শতভাগ সফল করতে হয় তাহলে দুই মাসের জন্য এনজিওর কিস্তি আদায় বন্ধ করতে হবে।

এদিকে জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য মতে, জেলায় সরকারি নিবন্ধিত জেলে এক লাখ ৫৮ হাজার। এর মধ্যে নিষেধাজ্ঞার সময় বিকল্প কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের মাধ্যমে বকনা বাছুর পেয়েছেন জেলার ৪২৭ জন জেলে।

আরও পড়ুন- উন্নয়নের সম্ভাবনায় আনন্দে ভাসছে এলাকাবাসী

জেলে মো. সোবাহান ও মো. মনির হোসেন জানান, নিষেধাজ্ঞার সময় সরকার জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের যে বকনা বাছুর দেয় সেটি সব জেলে পাননি। যার কারণে সব জেলের বিকল্প কর্মসংস্থান হয়নি। যদি সব জেলে বকনা বাছুর পেতেন তাহলে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান হতো।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ জানান, জেলেদের নামে সরকারিভাবে বরাদ্দ করা চাল আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বিতরণ করা হবে। জেলেদের বিভিন্ন এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি নিষেধাজ্ঞার দুই মাস আদায় বন্ধের চেষ্টা করা হবে। এছাড়াও বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য বকনা বাছুর পর্যায়ক্রমে জেলেদের মাঝে বিতরণ করা হবে।

আরও পড়ুন- ঠিক হয়নি সাবমেরিন ক্যাবল, ৭ মাস অন্ধকারে সেই দুই চরবাসী

ইলিশের অভয়াশ্রম হওয়ায় ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাসের জন্য ভোলার ইলিশা থেকে চর পিয়াল পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার মেঘনা নদী ও ভেদুরিয়া থেকে চর রুস্তম ১০০ কিলোমিটার তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ আহরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ সময় জেলার সরকারি নিবন্ধিত ১ লাখ ৫৯ হাজার জেলেদের মধ্যে এ বছর সরকারিভাবে বরাদ্দ করা চাল পাবেন ৮৯ হাজার ৪১০ জন জেলে।

এফএ/এমএস