জাতীয়

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া জামাতের ওপর হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া মুসলিম জামাতের সদস্যদের ওপরে হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন দল ও সংগঠন।

রোববার এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামী পার্টির চেয়ারম্যান মাওলানা মো. ইসমাইল হোসাইন, মহাসচিব মুফতি শাহাদাত হোসাইন, প্রেসিডিয়াম সদস্য হাফেজ মাওলানা মোস্তফা চৌধুরী ও শাহ মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, শুক্রবার (৩ মার্চ) পঞ্চগড় শহরে আহমদিয়া মুসলিম জামাতের বার্ষিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপরে আহমদিয়া বিরোধীরা হামলা চালালে হতাহতের ঘটনা ঘটে। আমাদের মতো শান্তিপ্রিয় একটি দেশে এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত, মর্মান্তিক, ধর্মীয় উস্কানিমূলক ও ধর্মের দোহাই দিয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য চক্রান্ত।

ইউনাইটেড ইসলামী পাটির নেতারা বলেন, কোনো ধর্মাবলম্বীদের প্রতিই কোনো ধরনের অসহিষ্ণু আচরণ ইসলাম কখনো অনুমোদন ও সমর্থন করে না। আমরা আহমদিয়াদের উপরে হামলার নিন্দা জ্ঞাপন করছি এবং সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ, যাদের কারণে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, অবিলম্বে তাদের চিহ্নিত করে যাতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

পঞ্চগড়ের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, জোটের কেন্দ্রীয় নেতা ও সিপিবির সভাপতি শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবীর জাহিদ, বাসদ (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সভাপতি হামিদুল হক।

৫ মার্চ সংবাদপত্রে দেওয়া এক বিবৃতিতে শুক্রবারের ঘটনার নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা।

বিবৃতিতে তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে ৫১ বছর পর এমন সাম্প্রদায়িক হামলা, হতাহতের ঘটনা প্রত্যাশিত নয়। কিন্তু শাসকশ্রেণি স্বাধীনতাত্তোরকাল থেকে আজ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে দেশ পরিচালনা করে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া এবং থাকার যে ঘৃণ্য রাজনৈতিক অপকৌশল নিয়ে চলছে, তারই ফল ভোগ করছে জাতি।

বিবৃতিতে তারা বলেন, বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ধর্মভিরু। তারা ধর্মান্ধ বা সাম্প্রদায়িক নয়। সব ধর্মের, সব সম্প্রদায়ের জানমালের নিরাপত্তা বিধান এবং ধর্ম পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্র ও সরকারের। অথচ সরকার সব নাগরিকের ধর্ম পালন ও জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

বিবৃতিতে পঞ্চগড়ের হামলা, ভাঙচুর, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও হতাহতের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানানো হয়।

অন্যদিকে পঞ্চগড় শহরে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বাৎসরিক অনুষ্ঠান বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ থেকে সহিংসতার জেরে প্রাণহানি, হতাহত, হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) মনে করে, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর এ ধরনের হামলা বাংলাদেশের সংবিধানের পরিপন্থি। আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও ২ জনের প্রানহানির বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানায়।

এছাড়া পঞ্চগড়ের ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বলেছে, ধর্ম বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় হতাহতের ঘটনা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার সংবিধান স্বীকৃত। সব ধর্মের অনুসারীরা নিজ নিজ ধর্ম শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিপালন করবে, কমিশন এটাই প্রত্যাশা করে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী যারা এই ঘটনায় জড়িত তাদের সবার আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি প্রদান করা না হলে এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে বলে কমিশন মনে করে।

জেআইএম