দেশজুড়ে

আগুনে স্ত্রী-সন্তান হারানো অলি বকসের আর্তনাদ কাঁদিয়েছে সবাইকে

মৃত দুই সন্তানকে গোসলও করাতে পারলেন না অভাগা বাবা। স্ত্রীর মুখ ও শরীর এমনভাবে পুড়েছে যা আর দেখার উপায় ছিল না। দুই হাত, কপালের অংশ ও শরীরের বাম অংশে পোড়া ক্ষত নিয়ে হাসপাতাল থেকে ছুটে আসেন অলি বকস অঙ্গার ভিটায়। চেয়েছিলেন ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীকে শেষবারের মতো ছুঁয়ে দেখবেন।

কাফনের কাপড়ে জড়ানো ১০ বছরের মেয়ে অনিয়া আক্তার ও ৪ বছরের অমর বকস এবং স্ত্রী সোমা আক্তারকে (৩০) একসঙ্গে কবরে শোয়ানোর দৃশ্য দেখে চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়েনি উপস্থিত এমন মানুষ কেউ ছিলো না।

মঙ্গলবার রাতে নাটোরের বড়াইগ্রামের খাকসা উত্তরপাড়া গ্রামে অগ্নিকাণ্ডে নিজঘরে পুড়ে দুই সন্তানসহ মায়ের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। অগ্নিকাণ্ডে আহত হন স্বামী মোহাম্মাদ আলী ওরফে অলি বকস (৩৫) ও প্রতিবেশী আনোয়ার হোসেন (৩৫)। মুমূর্ষু অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তাদের। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে আনোয়ার হোসেনকে ঢাকায় নিয়ে যান স্বজনরা। পেশায় অলি বকস একজন বাসচালক।

গ্যাস সিলিন্ডারের গ্যাস ঘরে ছড়িয়ে পড়ার পর গৃহবধূ সোমা রান্নার জন্য আগুন জ্বালাতে গেলে সেই আগুন চারদিকে ছড়িয়ে যায় এবং বসতবাড়িসহ সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই পুড়ে মারা যান ৩ জন।

দাফনের সময় অলি বকস আর্তনাদ করে বলতে থাকেন, ‘আমি কী নিয়ে বাঁচবো। আমার সহায় সম্বল সন্তান সব হারালাম। হায় আল্লাহ একি শাস্তি তুমি আমাকে দিলে। এর চাইতে তুমি আমাকে তুলে নিলে না কেন।’ পরে তাকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় পুনরায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রতিবেশী ও স্থানীয় সংবাদকর্মী সাহাবুল ইসলাম জানান, রাতেই আহত অলি বকস ও আনোয়ার হোসেনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সেখানে অলি বকস সারারাত চিকিৎসক ও নার্সদের কাছে আকুতি করতে থাকেন দুই সন্তান ও স্ত্রীর কাছে আসার জন্য। ভোরে হাসপাতালের কাউকে না জানিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় বের হয়ে বাসে চড়ে ৮০ কিলোমিটার পথ বেয়ে ফেরেন শূন্য ভিটায়। বুধবার সকাল ৮টার দিকে নিজ ভিটায় আসার পর তার কান্না ও আত্মচিৎকারে যেন আকাশ ভারী হয়ে ওঠে। মুহূর্তে যেনো স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো এলাকা। সকাল ৯টার দিকে স্থানীয় কবরাস্থানে মা ও মায়ের পায়ের নিচে দুই সন্তানকে সমাহিত করা হয়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোমিন আলী জানান, শবে বরাতের রাত হওয়ায় ওই গ্রামের অধিকাংশ পুরুষ মসজিদে নামাজ আদায় করছিলেন। যার ফলে আগুন লাগলেও তাৎক্ষণিক তা নেভানোর জন্য লোকজন পাওয়া যায়নি। এর ফলে আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। অগ্নিকাণ্ডে তাদের টিনসেড ও টিনের বেড়ার বসতবাড়ির ৩টি ঘরসহ সব কিছুই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। খবর পেয়ে নাটোর ও বনপাড়া ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট এসে আগুন নেভায়।

রেজাউল করিম রেজা/এফএ