মিশরের কূটনৈতিক মহলে জনপ্রিয় ডিপ্লোম্যাসি ম্যাগাজিনের উদ্যোগে ‘পঞ্চম বার্ষিকী কূটনৈতিক অ্যাওয়ার্ড ২০২৩’ কূটনৈতিক সম্মাননা দেওয়া হয়েছে কায়রোস্থ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতকে। চলতি বছর বিশেষ কূটনৈতিক সম্মাননা পুরস্কারের ক্রেস্ট দেওয়া হয় রাষ্ট্রদূত মনিরুল ইসলামকে।
Advertisement
রোববার (২০ মার্চ) সন্ধ্যায় রাজধানী কায়রোতে কনকর্ড এল সালাম হোটেলে জাঁকজমকপূর্ণ এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ম্যাগাজিনটির নির্বাহী সম্পাদক আবদেল হাই মোখতার এবং ব্যবস্থাপনা পরিষদ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের মধ্য থেকে বাছাই করা বছরের সেরা নির্বাচিত রাষ্ট্রদূতদের হাতে তুলে দেন সম্মাননা পদক ও সনদ।
চলতি বছর সেরা রাষ্ট্রদূত নির্বাচিত হয়েছেন আফ্রিকা থেকে ক্যামেরুন, আরব অঞ্চল থেকে ইয়েমেন, এশীয় অঞ্চল থেকে মালয়েশিয়া, লাতিন আমেরিকা থেকে পানামা ও ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রদূত, ইউরোপীয় অঞ্চল থেকে ভ্যাটিকান ও নর্থ মেসিডোনিয়া এবং বলকান দেশগুলোর মধ্যে বসনিয়া-হারজেগোবিনা।
অনুষ্ঠানে পাঁচজন বিশিষ্ট মিশরীয় নাগরিককে বাংলাদেশের গুডউইল অ্যাম্বাসেডর তথা শুভেচ্ছাদূত হিসাবে নির্বাচিত করা হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মনিরুল ইসলাম নির্বাচিত পাঁচ শুভেচ্ছাদূতের হাতে তুলে দেন সুদৃশ্য প্রশংসাপত্র এবং সুশোভিত ক্রেস্ট।
Advertisement
বাংলাদেশের শুভেচ্ছাদূতরা হলেন- আশরাফ লাসিন, সিইও, ইজিপ্টশিয়ান অ্যান্ড সৌদি এক্সপার্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট, নাদিয়া আইমন কমার্শিয়াল ডিরেক্টর, ফুডি হাব কম্পানি, মাহমুদ আল- সাঈদ, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ইউনাইটেড ইজিপ্ট কোঃ, ইঞ্জিনিয়ার হাসান ইল ফান্দি, বোর্ড চেয়ারম্যান, হররেয়া ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ, মাগদি এয়াহিয়া নির্বাহী পরিচালক, ম্যাকাসরাতি কোম্পানী।
আনন্দমুখর এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিশিষ্ট শিল্পী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, সুশীলসমাজ সদস্য ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা। বাংলাদেশ ছাড়াও বেলারুস এবং আলবেনিয়ার রাষ্ট্রদূতরা তাদের নির্বাচিত মিশরীয় শুভেচ্ছাদূতদের হাতে সনদ ও ক্রেস্ট তুলে দেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, আমি মিশরের সেইসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অভিনন্দন জানাই, যারা আজ এই সুন্দর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশের শুভেচ্ছাদূত’ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। শুভেচ্ছাদূতদের জন্য যে কোনো সময় আমার দরজা খোলা থাকবে।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, নির্বাচিত শুভেচ্ছাদূতরা বাংলাদেশ ও মিশরের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ককে আরও উচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করবেন। কৃষি, বাণিজ্য, পর্যটন ও শিক্ষা ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। নির্বাচিত হওয়ার জন্য তিনি তাদের অভিনন্দন জানান এবং এমন একটি সুন্দর অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
Advertisement
উপস্থিত মিশরীয় সুধী সমাজকে রাষ্ট্রদূত বলেন, আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক শুরু হয়েছিল সপ্তম শতাব্দীতে, যখন আরব অভিযাত্রীরা ধর্মপ্রচার ও বাণিজ্যিক কারণে প্রাচীন বাংলায় আসা-যাওয়া করতেন। চৌদ্দশতকে স্বাধীন বাংলার শাসকরা অনেক আরব ও আফ্রিকান ব্যক্তিকে উজির, এমনকি সেনাবাহিনীর প্রধানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত করেছিলেন। সে সময় অনেক আরব নাগরিক বঙ্গদেশে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে।
রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, মিশরের বন্ধুত্বপূর্ণ জনগণ ও সরকার আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেছিল। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি ও সাহায্য দিতে এগিয়ে এসেছিল। মিশরের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আনোয়ার সাদাত ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দেখা করতে ঢাকা সফর করেন এবং বঙ্গবন্ধু নিজেও ফিরতি সফরে মিশর আগমন করেন।
রাষ্ট্রদূত জানান, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের মাধ্যমে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক নীতি ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে একটি স্বনির্ভর, সুখী ও সুশাসনভিত্তিক দেশে পরিণত হয়েছে। এরই মধ্যে আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিকসহ সর্বক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি অর্জন করেছে।
আধুনিক যুগে সম্পর্কের শুরু থেকেই বাংলাদেশ ও মিশর পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উপভোগ করছে। বর্তমানে উভয় দেশের মধ্যে ব্যবসা, বিনিয়োগ ও পর্যটন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী মে মাস থেকে ঢাকা-কায়রো সরাসরি বিমান যোগাযোগ চালু হতে যাচ্ছে।
গত বছর এশীয় অঞ্চল থেকে থেকে বর্ষসেরা রাষ্ট্রদূত নির্বাচিত হয়েছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মনিরুল ইসলাম।
এমআরএম/এমএস