দেশজুড়ে

ঠাকুরগাঁওয়ে পামবাগান কেটে ফেলছেন চাষিরা

দীর্ঘ পাঁচ বছরেও কাঙ্খিত পাম ফল না আসায় এবং লাভের মুখ দেখতে না পারায় হতাশায় ঠাকুরগাঁও জেলার বেশিরভাগ চাষি পামগাছ কেটে ফেলছেন। এতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী হিসেবে পরিচিত পামবাগান বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, ঠাকুরগাঁও জেলায় ১২ দশমিক ৫৩ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩০টি পাম বাগান রয়েছে। এছাড়া বসতবাড়ির আশপাশে ১৭ দশমিক ৫২ হেক্টর জমিতে রয়েছে পামের গাছ।৪/৫ বছর আগে বখতিয়ার অ্যাগ্রো লিমিটেড ও সবুজ বাংলা অ্যাগ্রো লিমিটেড নামে দুটি সংস্থা দেশে তেলের চাহিদা মেটানোর কথা বলে কৃষকদের উদ্ধৃত করে পাম চাষ শুরু করে। পামফল চার বছর থেকে ৭০ বছর পর্যন্ত ফল দেবে আর তা  বিক্রি করে একশো গাছ থেকে মাসে আয় হবে কমপক্ষে ২ লক্ষ টাকা। তারা আরো জানান, ফল আহরণ করে কিছুক্ষণ পানিতে সিদ্ধ করে চাপ দিলেই রস বের হবে। আর আগুনে জ্বাল দিলেই অতিরিক্ত পানি বাষ্প হয়ে উড়ে যাবে। এরপর লাল রঙের যে তেল পাওয়া যাবে, তা পরিশোধন ছাড়াই রান্নায় ব্যবহার করা যাবে।ওই দুই কোম্পানির মন ভুলানো কথায় জেলার প্রায় ২ শতাধিক কৃষক “শেষ বয়সের পেনসন স্কিম” হিসেবে প্রায় ৫ হাজার বাগানে পাম চাষ করে। ওইসব জমিতে সাথী ফসল হিসেবে কোন কিছু আবাদ করা যায়নি।এদিকে ৫ বছর অতিবাহিত হলেও বাগান থেকে কোনো ফল আহরণ করা যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে কালো রঙের জামের মতো দেখতে ফল দেখা গেলেও তা বিক্রির কোনো বাজার না থাকায় বাগানেই নষ্ট হয়ে যায় পামফল। এ অবস্থায় রুহিয়া এলাকার বেশকিছু পামচাষি তাদের বাগান কেটে ফেলতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে সদর উপজেলার ভাতগাও এবং রাণীশংকৈল ও হরিপুর উপজেলার প্রায় সব বাগান কেটে ফেলছেন চাষিরা।এ ব্যাপারে রুহিয়া এলাকার পামচাষি বদরুল ইসলাম বিপ্লব অভিযোগ করে বলেন, সবুজ বাংলা লিমিটেড নামে একটি কোম্পানির পরিবেশক আ. রাজ্জাক এখানে চারা সরবরাহ করেন। তিনি জানান, তিন বছরের মধ্যে এখানে কারখানা স্থাপন করা হবে। কোম্পানি কারখানার কাঁচামাল হিসেবে বাগান থেকে ফল কিনে নিয়ে যাবে। এতে একশো গাছের বাগান থেকে মাসে আয় হবে কমপক্ষে ২ লক্ষ টাকা। আর এ আয় আসতে থাকবে চার বছর থেকে ৭০ বছর পর্যন্ত। কিন্তু দীর্ঘ পাঁচ বছরেও এখানে কারখানা বসানোর কোনো কার্যক্রম শুরু হযনি। এমনকি ফল বিক্রির কোনো বাজারও তৈরি হয়নি। শুধু তাই নয়, এ সুযোগে বখতিয়ার অ্যাগ্রো ও সবুজ বাংলা লিমিটেড কোম্পানি দুটি তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে সরে পড়েছেন। তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।অবশ্য জয়নাল আবেদীন নামে একজন পাম বিশ্লেষক জানান, এ জেলার বেশিরভাগ বাগানের গাছ তাদের উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়েছে। উৎপাদনক্ষম করে গড়ে তুলতে আরো নতুন করে পরিচর্যা করতে হবে। নইলে বাগান রেখে লাভ নেই।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক, মো. আরশেদ আলী জাগো নিউজকে জানান, পামগাছ লাগিয়ে কাঙ্খিত ফলাফল না পাওয়ার কারণে এখন কৃষকরা কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। এছাড়াও ফল থেকে তেল সংগ্রহের কোনো যন্ত্রপাতি স্থাপিত না হওয়ায় নিরুৎসাহিত হয়ে অনেকেই পামগাছ কেটে ফেলছেন। ইতোমধ্যে জেলার পাঁচ হাজার বাগানের বেশিরভাগই নষ্ট করে দিচ্ছেন কৃষকরা। রবিউল এহ্সান রিপন/এমজেড/পিআর