পৃথক দু`টি বাল্যবিয়ের আয়োজনে বরসহ চারজনের ২৫ দিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও সনাতন ধর্মাবলম্বী কনের বাবা ও পুরোহিতসহ তিনজনের ৫শ` টাকা করে দেড় হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ঘটনা দুটি ঘটে নীলফামারী জেলা সদরের রামনগর ইউনিয়নের মাঝাপাড়া ও লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের দুবাছড়ি ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে। শুক্রবার সকালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক নীলফামারী সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সাবেত আলী পৃথকভাবে উক্ত দুইটি ঘটনার রায় প্রদান করেন।ঘটনার বিবরণে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত আটটায় বাল্যবিয়ে মুক্ত এলাকা লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া দুবাছড়ি গ্রামের লেবু মিয়ার ছেলে দুলাল হোসেনের (১৬) বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। কনের বাড়িতে বরযাত্রী রওনার প্রাক্কালে বাল্যবিয়ে বন্ধের জন্য বরের বাড়ি যায় ইউনিয়নের ভিডিপি কমান্ডারসহ গ্রাম পুলিশ। এসময় বর দুলালসহ বাড়ির লোকজন ভিডিডি কমান্ডার মোখছেদ আলীকে লাঞ্ছিত করে তার পরনের কাপড় ছিড়ে ফেলে। এ খবর পেয়ে নীলফামারী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায় এবং বর দুলাল মিয়া, বরের বাবা লেবু মিয়া (৩৮) বরের চাচা জমির উদ্দিন (৪০) ও ইউনুছ আলীসহ (৩৫) চারজনকে আটক করে নিয়ে আসেন। রাত আড়াইটায় তাদের সকলকে ১৮৭ ধারায় ২৫ দিন করে বিনাসশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।অপরদিকে, নীলফামারী জেলা সদরের রামনগর ইউনিয়নের মাঝাপাড়ায় বৃহস্পতিবার রাতে সনাতন ধর্মাবলম্বী যতীন্দ্র নাথ রায়ের ১৫ বছরের মেয়ে জবা রানী রায়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। খবর পেয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পুলিশসহ হাজির হয়ে বাল্যবিয়ে বন্ধ করে। এসময় মেয়ের বাবা যতীন্দ্র নাথ (৫৫), কনের চাচা করুনা কান্ত রায় (৪৫) ও পুরোহিত রবীন্দ্র নাথ রায়কে (৬০) আটক করে নিয়ে আসে। শুক্রবার সকালে তাদের ৫শ` টাকা করে মোট দেড় হাজার টাকা জরিমানা আদায় এবং বাল্যবিয়ে না দেয়ার মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। নীলফামারী সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজাহান পাশা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জাগো নিউজকে জানান ২৫ দিন করে বিনাশ্রম সাজাপ্রাপ্তদের জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।উল্লেখ্য, যে নীলফামারী সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সাবেত আলীর উদ্যোগে নীলফামারী জেলা সদরের ১৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকাকে বাল্যবিয়ে, যৌতুক ও মাদকমুক্ত ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীচাপ ও পলাশবাড়ি ইউনিয়নকে বাল্যবিয়ে, যৌতুক ও মাদকমুক্ত ঘোষণা করা হয়। এছাড়া বাকি ১৩ ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকাকে একইভাবে ধাপে ধাপে মুক্ত ঘোষণার কার্যক্রম চলছে। এরমধ্যে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি চওড়াবড়গাছা, ২৯ ফেব্রুয়ারি গোড়গ্রাম, ১ মার্চ পঞ্চপুকুর ও ৩ মার্চ ইটাখোলা ইউনিয়নকে বাল্যবিয়ে, যৌতুক ও মাদকমুক্ত ঘোষণা করা হয়। আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে বাকি সব ইউনিয়নকে এর আওতায় নিয়ে আসা হবে। সচেতন মহল অভিযোগ করে বলছে একটি সুবিধাবাদী মহল নীলফামারী সদর উপজেলাকে বাল্যবিয়ে, যৌতুক ও মাদকমুক্ত ঘোষণা বিরুদ্ধে যেন মাঠে নেমে ভালো একটি উদ্যোগকে নস্যাৎ করার অপচেষ্টা করছে। তাই এসব সুবিধাবাদী মহলকে চিহিৃত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি করা হয়।জাহেদুল ইসলাম/এমজেড/এমএস