দেশজুড়ে

সিলেট সার্কিট হাউসে আগুন : বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ

সিলেট সার্কিট হাউসে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের জন্য নির্ধারিত কক্ষে আগুন লাগার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিলেট মহানগর দায়রা জজকে আগামী সাত কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের দফতরে জমা দিতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের জেনারেল রেজিস্ট্রার সৈয়দ আমিনুল ইসলামের পক্ষে ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মো. আজিজুল হক এ সংক্রান্ত পত্র পাঠান। বৃহস্পতিবার বিকেলে ফ্যাক্সযোগে নির্দেশনা সংক্রান্ত পত্র মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসে। নির্দেশনায় বলা হয়, ২ মার্চ প্রধান বিচারপতি ছাড়াও অর্থমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী এবং তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী সিলেট সফর করেন। এই সফরে সিলেট সার্কিট হাউসের দ্বিতীয় তলার ২০১ নম্বর কক্ষটি প্রধান বিচারপতির বিশ্রামের জন্য সংরক্ষিত ছিল। গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, সকাল ১১টার দিকে দ্বিতীয় তলা থেকে ধোঁয়া বেরুতে দেখে ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে তারা আধ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে এর আগেই অগ্নিকাণ্ডে প্রধান বিচারপতির জন্য প্রস্তুত কক্ষটির সকল আসবাবপত্র, টিভি, ফ্রিজ ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রসহ অন্যান্য মালামাল ভস্মিভূত হয়। কক্ষটি পোড়ার ধরণ থেকে ঘটনায় দাহ্য বা রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।এতে আরও বলা হয়, ‘সফরসূচি অনুযায়ী সিলেটে পৌঁছার পর সার্কিট হাউসের ২০১ নম্বর কক্ষে প্রধান বিচারপতির বিশ্রাম নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সময় স্বল্পতার জন্য প্রধান বিচারপতি বিমানবন্দরে অবতরণের পর সার্কিট হাউসে না গিয়ে সরাসরি সিলেট জেলা জজ আদালতে নির্ধারিত কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। উক্ত কর্মসূচি চলাকালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে এবং প্রধান বিচারপতির জন্য প্রস্তুত কক্ষটিতে আগুনের সূত্রপাত হয় ও পার্শ্ববর্তী কক্ষেও ছড়িয়ে পড়ে। এ আগুন লাগার ঘটনাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। প্রধান বিচারপতি নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী সার্কিট হাউসে গেলে আগুন লাগার সময় ওই কক্ষে অবস্থান করার সম্ভাবনা ছিল।হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্টারের পত্রে আরও বলা হয়, প্রধান বিচারপতির জন্য সার্কিট হাউসে নির্ধারিত কক্ষে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্তের বিকল্প নেই। কেন না, উল্লেখিত ঘটনার পূর্বে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের তিলকপুরে বোমা সদৃশ বস্তু, এলাকার বিভিন্ন সড়কের স্কেচম্যাপ ও কম্পিউটারে মুদ্রিত একটি সংগঠনের নাম পাওয়া যায়। সামগ্রিক বিবেচনায় সিলেট সার্কিট হাউসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পিত এবং নাশকতামূলক হিসেবে বিবেচনা করার যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে। ফলে ঘটনাটি প্রধান বিচারপতির প্রাণনাশের প্রচেষ্টা ছিল কি-না এর সত্যতা উদঘাটন এবং কারা, কী উদ্দেশ্যে এসব ঘটনা ঘটিয়েছে তা এবং উক্ত ঘটনা থেকে প্রধান বিচারপতির নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনো ত্রুটি ছিল কি-না, তাও বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে বিশদভাবে খতিয়ে দেখা একান্ত প্রয়োজন।’এ অবস্থায় প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য বিচার বিভাগীয় একজন কর্মকর্তার মাধ্যমে বিচার বিভাগীয় তদন্ত সম্পন্ন করে ৭ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণের নির্দেশ দেওয়া হয় চিঠিতে।সিলেট মহানগর দায়রা জজকে দেওয়া এই নির্দেশনার অনুলিপি সিলেট জেলা ও দায়রা জজ, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, সিলেটের জেলা প্রশাসক, সিলেটের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও সিলেটে ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালককে দেওয়া হয়েছে।এদিকে রাষ্ট্রের দু’জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির জন্য নির্ধারিত কক্ষে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে গত বুধবার সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. জামাল উদ্দিন আহমেদের নির্দেশে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। প্রসঙ্গত, গত বুধবার (২ মার্চ) সকালে হঠাৎ করে সার্কিট হাউসের নতুন ভবনের একটি কক্ষে  থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখে কর্মচারীরা ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। তখন আগুনে সার্কিট হাউসের ২০১ ও ২০২ নম্বর ভিআইপি কক্ষের সকল আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক্স মালামাল পুড়ে যায়।আদালতের ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সিলেটে আসা প্রধান বিচারপতি ও অর্থমন্ত্রীর জন্য সার্কিট হাউজের পুড়ে যাওয়া কক্ষগুলো প্রস্তুত করে রাখা হয়েছিল।ছামির মাহমুদ/এআরএস/এমএস