ওষুধ খেলে ভালো, না খেলে মুখ দিয়ে রক্ত ঝরে শায়েরা বেগমের (৫০)। তখন ঠিকমতো কথাও বলতে পারেন না। তাই বাধ্য হয়ে ওষুধের টাকার জন্য মানুষের ধারে ধারে ঘুরছেন তিনি। যে কয় টাকা পান তা দিয়ে ওষুধ কিনেন অসহায় শায়েরা।
শায়েরা বেগম সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর গ্রামের মৃত শাহাব উদ্দিনের স্ত্রী। দুই মেয়ে এক ছেলে থাকলেও এক মেয়ে ছাড়া মায়ের খোঁজখবর নেন না কেউ।
আরও পড়ুন: ৭ মাসেও সংগ্রহ হয়নি অপারেশনের টাকা, চোখের সামনে পচছে নাফিসের হাত
স্থানীয়রা জানান, এক ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল শায়েরা বেগমের। হঠাৎ সে সংসারে কালো ছায়া নেমে আসে। তিন বছর আগে ছেলে আলাউর রহমান তার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করে আলাদা হয়ে যায়। তারপর শায়েরা বেগমের স্বামী শাহাব উদ্দিন জমানো টাকা দিয়ে দুই মেয়েকে বিয়ে দেন। এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন শাহাব উদ্দিন। তাকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে চিকিৎসা নেওয়ার পর তাকে ঢাকায় নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
টাকার জন্য স্বামীর মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনতে পারেননি তিনি। মানুষের সহযোগিতায় সেখানে একটি কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, ‘স্বামীটা মারা গেল চিকিৎসার অভাবে। এখন আমি খুব অসুস্থ। ডাক্তারা বলেছে ফুসফুসে সমস্যা। ঠিকমতো ওষুধ খেতে পারি না। মাসে পাঁচ হাজার টাকার ওষুধ খেতে হয়। যখন ওষুধ খেতে পারি না তখন কথা বলতে পারি না। মুখ দিয়ে রক্ত আসে। আল্লাহর দুনিয়ায় কেউ কী নেই আমার ওষুধ কেনার টাকা দেবে।’
আরও পড়ুন: টাকার অভাবে বন্ধ চিকিৎসা, তমার এসএসসি পরীক্ষা অনিশ্চিত
ইব্রাহিমপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা রমজান মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, অনেক কষ্ট করে ছেলে টাকে মানুষ করেছিল শায়েরা বেগম ও শাহাব উদ্দিন। অথচ শাহাব উদ্দিন চিকিৎসার অভাবে মারা গেল। এখন তার স্ত্রী শায়েরা বেগমও ওষুধের টাকার জন্য মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন। বিষয়টা সত্যি খুব কষ্ট দায়ক।
সুরমা ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর গ্রামের ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, শায়েরা বেগম খুব অসহায়। তার এক মেয়ে মাঝেমধ্যে তার দেখাশোনা করছে। সমাজ সেবা কার্যালয় থেকে নতুন করে বয়স্ক ভাতার কোনো নামের তালিকা চাওয়া হয়নি বলে তার নামটা আমি দিতে পারছি না।
সুনামগঞ্জ সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালক সুচিত্রা সেন জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি আমরা খোঁজ নিয়ে দেখব। যদি তিনি বিধবা ভাতা না পেয়ে থাকেন তাহলে তাকে আবেদন করতে হবে।
লিপসন আহমেদ/আরএইচ/জেআইএম