দেশজুড়ে

পাহাড়ে বইছে বিজুর আমেজ

‘তুরু তুরু তুরু রু বাজি বাজেত্তে পাড়ায় পাড়ায় বেরেবং বেক্কুন মিলিনেই, এইচ্চা বিজু, বিজু বিজু, এইচ্চা বিজু, বিজু বিজু’ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর এ গানটি এখন শোভা পাচ্ছে পাহাড়ের প্রতিটি বাড়িতে। কারণ পাহাড়ে চলছে বৈসাবি উৎসব। বাঁশি বাজিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন সবাই।

বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে পাহাড় সাজে এক ভিন্ন রূপে। পুরানো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী উদযাপন করেন বৈসাবি নামের সামাজিক উৎসব। ১২ এপ্রিল পানিতে ফুল ভাসিয়ে গঙ্গা দেবীকে স্মরণের মাধ্যমে তিন দিনব্যাপী এ উৎসবে শুরু। ১৩ এপ্রিল মূল অনুষ্ঠানিকতা। এদিন সবাই জাতি, বর্ণ ও সম্প্রদায়ের মানুষ একে অন্যের বাড়িতে বেড়াতে যান এবং খাওয়া-দাওয়া আর উৎসবে মাতেন।

১৪ এপ্রিল সকালে বিহারে বিহারে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ প্রার্থনা। এদিনও সবাই পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়ান। আড্ডা, গল্প, বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার আয়োজন, আতশবাজি ফুটানো আর খাওয়া-দাওয়া চলে দিনভর।

বৈসাবি উৎসবে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বাড়িতে আয়োজন করা হয় নানা পদের খাবার। বিশেষ করে পাঁজন, চটপটি, সেমাই, নুডলস, মিষ্টি, তরমুজসহ নানান কিছু থাকে সবার ঘরে। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধ সবাই বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে বেড়ান এদিনে। শুধু পাহাড়ি জনগোষ্ঠী নয় এদিন যেন সম্প্রীতির বন্ধনে এক অন্যরকম পাহাড় হয়ে ওঠে সবার মধ্যে। পাহাড়ি-বাঙালি সবাই মিলেমিশে ঘুরে বেড়ান আর উদযাপন করেন বৈসাবি।

রুপেশ বড়ুয়া জানান, বাংলা নববর্ষের এদিনে আমাদের পার্বত্য এলাকায় এক অন্যরকম পরিবেশ বিরাজ করে। সবাই সম্প্রীতির বন্ধনে ঐক্যবদ্ধ থাকি। আমাদের বাড়িতে নানা পদের খাবারের আয়োজন করা হয়। বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন এদিন বেড়াতে আসে। আমরাও বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়াই।

কৃষ্ণা তালুকদার বলেন, বিজু হচ্ছে আমাদের একটি সামাজিক উৎসব এবং এটি আমাদের অন্যতম একটি বড় উৎসব। এদিনে আমরা সবাই আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাই। তারাও আমাদের বাড়িতে বেড়াত আসে।

রাঙ্গামাটি শিল্পকলা একাডেমির নাট্য প্রশিক্ষক সোহেল রানা বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ধর্ম যার যার উৎসব সবার। আমরাও তাই মনে করি। এ দিনগুলোতে পাহাড়ে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। আমরা যে সম্প্রীতির বন্ধনে এ পার্বত্য জেলায় বসবাস করি তাই যেন ফুটে ওঠে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে ১২টি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বসবাস। তারা বাংলা বর্ষকে বিদায় জানিয়ে নতুন বর্ষকে বরণের এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে, যা তাদের প্রধান সামাজিক উৎসব হিসেবে পরিচিত। এ উৎসব চাকমা জনগোষ্ঠীর বিজু, মারমা জনগোষ্ঠীর সাংগ্রাই, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীর বিষু, অহমিয়া জনগোষ্ঠীর বিহু নামে পালন করে থাকে। বৈসুকের ‘ব’ সাংগ্রাইয়ের ‘সা’ ও বিজু, বিষু ও বিহুর ‘বি’ নিয়ে উৎসবটি সংক্ষেপে ‘বৈসাবি’ নামে সবার কাছে পরিচিত।

সাইফুল উদ্দীন/এসজে/জিকেএস