দেশজুড়ে

জলকেলিতে মাতোয়ারা মারমা তরুণ-তরুণীরা

বর্ষবরণ মাহা সাংগ্রাইং পোয়ের জলকেলি উৎসবে মেতেছেন বান্দরবানের মারমা সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা।

শনিবার (১৫এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৩ টায় সদর উপজেলার রাজার মাঠে বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ও মাহা সাংগ্রাইং পোয়ে উৎসব উদযাপন কমিটির উদ্যোগে মারমাদের ১৩৮৪ সাক্রই বিদায় এবং ১৩৮৫ সাক্রই বর্ষবরণ উৎসব উপলক্ষে হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে এই রিলং পোয়ে (জলকেলি) অনুষ্ঠিত হয়।

‘আঁধারের পাহাড় আলোকিত হয়ে উঠুক শিক্ষার আলোর গুনে, উৎসব হয়ে উঠুক সবার কল্যাণে’ এ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে পুরোনো বছরের দুঃখ, কষ্ট ও গ্লানি মুছে দিতে একে-অপরের ওপর মৈত্রীময় পানি বর্ষণে অংশগ্রহণ করেন।

তবে এটি এখন শুধু মারমাদেরই না, সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। পুরো বান্দরবান শহরজুড়ে চলছে পানি খেলা। শিশু থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণী এমনকী বয়স্করাও একে অপরের গায়ে পানি ঢেলে নতুন বছরকে বরণ করে নিচ্ছেন। উৎসবে যোগ দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকরা। আনন্দ উদ্দীপনা আর সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে বর্ণিল হয়ে উঠেছে বান্দরবান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর দলবেঁধে পানি খেলা প্রতিযোগিতায় নেচে গেয়ে আনন্দ উৎসবে নানা রঙের পোশাক পরে সাংগ্রাইং উৎসব পালন করে মারমা সম্প্রদায়। জলকেলি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। রশি টানা, তৈলাক্ত বাশেঁর ওপর আরোহণ, কাবাডিসহ নানা ইভেন্টে অংশ নেন অনেকেই।

উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি হ্লা এ মং মারমার সভাপতিত্ব প্রধান অতিথি ছিলেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, বিশেষ অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রীর সহধর্মিণী মিসেস মেহ্লা প্রু মারমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমী, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম শহিদুল ইসলাম, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মিনারুল হক প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে চেয়ারম্যান বলেন, বছরে একবার সাংগ্রাইং রিলং পোয়ে উৎসব পালন করা হয়। বান্দরবানে এই রিলং পোয়ে ১৯৭৫ সালে প্রথম শুরু হয়েছিল, তখন থেকেই মারমা বর্ষপঞ্জী অনুসারে পুরোনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ উপলক্ষে এই মৈত্রী পানি বর্ষণ খেলা প্রতিবছর অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়। এই সাংস্কৃতিক উৎসবে সন্ত্রাসীদের হুমকি-ধামকি, হামলা কোনোমতেই কাম্য হতে পারে না।

তাই তিনি সব জাতি, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে সন্ত্রাসীদের কার্যক্রম প্রতিরোধ করার আহ্বান জানান। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

গত ১৩ এপ্রিল থেকে মারমাদের মাহা সাংগ্রাইং পোয়ে উৎসব শুরু হয়েছে। ১৪ এপ্রিল ছিল বৌদ্ধমূর্তি স্নান, ১৫ এপ্রিল থেকে মারমা সম্প্রদায় অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে সপ্তাহব্যাপী উৎসবমুখর পরিবেশে সাংগ্রাইং রিলং পোয়ে (মৈত্রী পানিবর্ষণ ) অনুষ্ঠিত হবে।

নয়ন চক্রবর্তী/এমআরআর/জেআইএম