বিশেষ প্রতিবেদন

লাউড স্পিকারে বিজ্ঞাপন বাজিয়ে বিক্রি হচ্ছে কুলফি

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আজিজুল ইসলাম। রোববার ভরদুপুরে ব্যক্তিগত কাজে পুরোনো ঢাকার বংশালে যাচ্ছিলেন। বাংলাদেশ মাঠের সামনে যেতেই রিকশায় বসে লাউড স্পিকারে অভিনব বিজ্ঞাপনী ভাষায় কুলফি আইসক্রিমের বিজ্ঞাপন শুনতে পান। বিজ্ঞাপনী ভাষায় একজন পুরুষ ভারি কণ্ঠে বলছিলেন, ‘ মজাদার কুলফি মালাই, দেখে শুনে খরিদ করবেন, গরমে আরাম। ভিটামিনে ভরা। তৃপ্তিতে মজা। রিকশা, কুলি, ছাত্র-ছাত্রী, পথচারী, যাত্রী ভাইরা, হোটেল রেস্টুরেন্টে যারা বসে আছেন, সবাই চায়, সবাই খায়, কুলফি মালাই।’ স্কুটারের ড্রাইভার, বাসের ড্রাইভার ও কন্ট্রাটটার ভাই সবাই বলে, এই গরমে চাই ক্লান্তি দূর করতে, খাঁটি গরুর দুধের কুষ্টিয়া জেলার বিখ্যাত আশরাফুল ভাইয়ের ইসপিসাল কুলফি মালাই। আর এই কুলফি মালাইয়ের দাম ৫ টাকা, ১০ টাকা, ২০ টাকা ও ৩০ টাকা। একবার খেলে আরেকবার খেতে মন চায়। আশরাফুল ভাইয়ের কুলফি মালায় এখন ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যাচ্ছে। আইসক্রিমওয়ালার ভ্যানগাড়িতে রাখা গামলা আকৃতির বাক্সটি দেখে আজিজুল ইসলাম ফিরে গেলেন তিনদশকের পুরোনো স্মৃতিতে। আজিমপুর কবরস্থান সংলগ্ন নতুন পল্টন স্কুলের সামনে এমনি কুলফি আইসক্রিম বিক্রি করতো এক ব্যক্তি যাকে ছোটবড় সবাই মামু বলে ডাকতেন। তাকে বিজ্ঞাপন বাজিয়ে বিক্রি করতে হতো না, মজাদার কুলফি আইসক্রিম খেতে শিক্ষার্থীদের লাইন পড়ে যেতো। প্রচারেই প্রসার। এক সময় শুধুমাত্র খ্যাতনামা কোম্পানিগুলোই টাকা পয়সা খরচ করে উৎপাদিত পণ্যের প্রতি ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ ও বিক্রি বৃদ্ধিও জন্য বিজ্ঞাপন তৈরি করে তা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করতো। কিন্তু বিজ্ঞাপনের ধারণা এখন ফুটপাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। কৌতুহলবশত এ প্রতিবেদক কথা বলেন আইসক্রিম বিক্রেতা আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, তার পূর্ব পুুরুষের বাড়ি পাবনা জেলায়। নদী ভাঙ্গনের পর ছোট বেলায় বাবার সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন। বাবার কাছ থেকেই কুলফি আইসক্রিম তৈরি ও বিক্রি শিখেছেন। বর্তমানে কামরাঙ্গিরচর এলাকায় থাকেন। আশরাফুল ইসলাম জানান, শুরুর দিকে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে আইসক্রিম বিক্রি করতেন। কিন্তু মুখের কথা অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করতো না, বিক্রিও কম হতো। তাদের এক শিক্ষিত আত্মীয় বিজ্ঞাপন তৈরি করে তা প্রচার করলে বেশি বিক্রির ধারণা দেন। তিনি জানান, জনৈক সোহেল নামের এক ব্যক্তিকে (তার ভাষায় সে বড় বড় কোম্পানির অ্যাড করে) দিয়ে কুলফি আইসক্রিমের বিজ্ঞাপনটি তৈরি করেছেন। ২২ মিনিটের বিজ্ঞাপনের প্রতি মিনিটের জন্য এক হাজার টাকা করে ২২ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। টাকা খরচ হলেও বিজ্ঞাপন প্রচার হলে বিক্রি বাড়ে। কুলফি আইসক্রিম কি দিয়ে তৈরি হয় তা জানতে চাইলে আশরাফুল জানান, এলাচ, দারচিনি, দুধ, কিচমিস, ডিম, কলা, বাদাম ও বরফ দিয়ে এটি তৈরি হয়। প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার টাকার আইসক্রিম বিক্রি হয়। সুনির্দিষ্ট অঙ্ক উল্লেখ না করলেও বেশ ভাল লাভ থাকে বলে সে জানায়। এমইউ/জেএইচ/এমএস