অর্থনীতি

শর্ত-জটিলতায় কাজে আসছে না উদ্যোক্তা তহবিল

কৃষিভিত্তিক ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি ও খাত দুটির উন্নয়নে বিনা সুদে মূলধন সহায়তায় সরকারি অর্থায়নে গঠন করা হয় ইক্যুইটি অ্যান্ড এন্টারপ্রেনারশিপ ফান্ড (ইইএফ) ইউনিট বা সমমূলধন উদ্যোক্তা তহবিল। কিন্তু নানা শর্তের জটিলতায় মূলধন সহায়তার অনুমোদনের পরও অর্থ নিচ্ছে না হাজারের বেশি প্রকল্প। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে অনেক ভুয়া উদ্যোক্তা অর্থ নিয়ে উধাও হয়ে যাচ্ছেন। এসব কারণে বন্ধ রয়েছে নতুন প্রকল্পের আবেদন গ্রহণ। ফলে উদ্যোক্তা তৈরি ও আর্থ সামাজিক উন্নয়নে গঠন করা এ তহবিল অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে এবং কাঙ্ক্ষিত ফল আসছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে এ ফান্ডের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। আইসিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সাল থেকে শুরু হওয়া ইইএফ ইউনিটে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত ৩ হাজার ২৪২  কোটি ৯৩ লাখ টাকার মোট ১ হাজার ৮১৮টি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে কৃষিভিত্তিক শিল্প খাতে ১ হাজার ৭০৩টি প্রকল্প (৩ হাজার ৬৯ কোটি ৮ লাখ টাকা) এবং আইসিটি খাতে ১১৫টি প্রকল্প (১৭৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা) রয়েছে। আর এর মধ্যে মূলধন সহায়তা নিয়েছে মাত্র এক হাজার ২৩১ কোটি ৯৮ লাখ টাকার (কৃষিভিত্তিক শিল্প খাতে ৭০৩টি এবং আইসিটি খাতে ৭৮টি প্রকল্প) মোট ৭৮১টি প্রকল্প। তবে অনুমোদন সত্ত্বেও এখনো অর্থ নিতে পারেনি ২ হাজার ১১ কোটি ৪৫ লাখ টাকার মোট এক হাজার ৩৭টি প্রকল্প। ইইএফ ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বে থাকা একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সৃজনশীল, দক্ষতাসম্পন্ন, সম্ভাবনাময়, প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ সুবিধা পেতে অসমর্থ কিংবা মূলধন স্বল্পতার কারণে প্রকল্প গ্রহণে সক্ষমতা নেই এ ধরনের উদ্যোক্তাদের ইইএফ অর্থায়ন করে থাকে। এর মধ্যে কৃষিভিত্তিক শিল্প এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাত রয়েছে। এ দুই খাতে উদ্যোক্তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর্থিক সহায়তা প্রদানের অনুমোদন দেয়। পরে আইসিবি যাচাই-বাছাই করে নির্ধারিত শর্ত পূরণ সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে অর্থ প্রদান করে থাকে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শর্ত মেনে অর্থ নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন উদ্যোক্তারা। এর মধ্যে জমি সংক্রান্ত জটিলতা ও উদ্যোক্তাদের অন্তঃকোন্দল অন্যতম।তারা বলেন, ইইএফ সহায়তার জন্য প্রতিষ্ঠানকে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হতে হয়। মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৪৯ শতাংশ দেয় সরকার। আর বাকি ৫১ শতাংশ অর্থ উদ্যোক্তাকে বিনিয়োগ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে দেখা যায় উদ্যোক্তারা তাদের ৫১ শতাংশ বিনিয়োগ না করেই অর্থ চায়; যা নিয়ম অনুয়ায়ী প্রদান করা যায় না। অন্যদিকে প্রকল্পে প্রদত্ত জমির কাগজপত্রে ত্রুটির কারণে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা-পরিচালকের দ্বন্দ্বের কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে কাঙ্ক্ষিত সফলতা আসছে না। আবার অনেক ক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা প্রথম কিস্তির টাকা নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থ হচ্ছেন। নামে প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, কৃষিভিত্তিক শিল্পে ইইএফ কিছুটা সফলতা পেলেও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতে অনেকটা ব্যর্থই বলা যায়। আইসিটি খাতে যারা আবেদন করে তাদের বেশির ভাগই ছাত্র। যাদের কোনো নিজস্ব মূলধন নেই, নেই কোনো জমিও। ফলে সম্ভাবনাময় খাতটি নতুন উদ্যোক্তা থাকা সত্ত্বেও পিছিয়ে পড়ছে।তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে প্রভাবশালী মহলের নির্দেশে ইইএফের অর্থ সহায়তার অনুমোদন দেয়া হয়। ফলে অনেক ভুয়া উদ্যোক্তা অর্থ নিয়ে উধাও হয়ে যাচ্ছে। আর নতুন সৃজনশীল, দক্ষতাসম্পন্ন উদ্যোক্তারা শর্তের কারণে পিছিয়ে পড়ছে। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ইইএফ সংক্রান্ত নতুন নীতিমালার কাজ চলছে। সেখানে ছাত্র ও মূলধন কম এমন নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন শর্ত শিথিলের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।  ইইএফ সম্পর্কে আইসিবির নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইফতেখার-উজ-জামান বলেন, ঝূঁকিপূর্ণ কিন্তু সম্ভাবনাময় খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও কৃষিভিত্তিক শিল্প এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতে এই ফান্ড বিনিয়োগ করে দেশের অর্থনীতিতে ব্যপক অবদান রাখছে। নতুন করে এ ফান্ডের জন্য একটি নীতিমালা করা হচ্ছে। শিগগিরই এর কার্যক্রম শেষ হবে। বর্তমানে সুষ্ঠুভাবেই চলছে। নতুন নীতিমালার পরে এটি আরো সুষ্ঠু ও সুন্দর হবে। এরই মধ্যে এই ফান্ডের মাধ্যমে অনেকে জনপ্রিয় হয়েছেন বলেও জানান তিনি।এসআই/এমএমজেড/এনএফ/আরআইপি