নারী ও শিশু

শিক্ষকতায় পিছিয়ে নারীরা

দেশের সকল অঙ্গনে নারীরা এগিয়ে গেলেও শিক্ষকতায় এখনো পিছিয়ে রয়েছেন তারা। মেধাবী হওয়ার পরও পুরুষদের ক্ষমতার দাপট, টাকার জোর, ধর্মীয় গোঁড়ামিসহ নানা প্রতিকূলতার কারণে পিছিয়ে পড়েছেন নারীরা। এছাড়া শিক্ষক নিয়োগে সরকারের কঠোর নীতিমালা থাকলেও উপেক্ষিত হচ্ছেন তারা। বিশেষ করে মাদরাসায় নারী শিক্ষক নিয়োগের চিত্র একেবারেই হতাশাজনক। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে সরকারি ও এমপিওভুক্ত বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল আছে ২০ হাজার ২৯৭টি, এসব প্রতিষ্ঠনে শিক্ষক আছেন দুই লাখ ৪৩ হাজার ১১৭ জন। এর মধ্যে নারী শিক্ষক ৬১ হাজার ৭০১ জন। যা মাত্র ২৬ শতাংশ । ৩০২টি সরকারি  ও চার হাজার ১১৩ বেসরকারি কলেজে শিক্ষক আছেন এক লাখ ১১ হাজার ৬১২ জন। এর মধ্যে নারী শিক্ষক ২৫ হাজার ৮০৩ জন। বেসরকারি কলেজে নারী শিক্ষকের হার ২৩ শতাংশ। তবে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের কারণে বেসরকারি কলেজের চেয়ে সরকারি কলেজে নারী শিক্ষকের হার অনেকটা এগিয়ে। এসব কলেজে নারী শিক্ষকের হার ২৭ শতাংশ। এমপিওভুক্ত  ৯ হাজার ৩১৬টি মাদরাসায় শিক্ষক আছেন এক লাখ ১৩ হাজার ৯৫৮ জন। এর মধ্যে নারী শিক্ষক মাত্র ১৪ হাজার ৪৫০ জন। সে হিসেবে নারী শিক্ষকের হার মাত্র ১৩ শতাংশ।এদিকে তিনটি সরকারি মাদরাসায় ৭৫ জন পুরুষ শিক্ষক থাকলেও  নারী শিক্ষক একজনও  নেই। সরকারি ও এমপিওভুক্ত কারিগরি এবং ভোকেশনালের চার হাজার ২১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক আছেন ২৯ হাজার ৯১৮ জন। এর মধ্যে নারী ছয় হাজার ৮৬ জন। নারী শিক্ষকের হার ২০ শতাংশ। ২১৫টি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজে শিক্ষক আছেন দুই হাজার ৬৭৯ জন। এর মধ্যে নারী শিক্ষক ৫৫৮ জন, হার ২১ শতাংশ। ৪৮০টি প্রফেশনাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারী শিক্ষক আছেন মাত্র ১৯ শতাংশ। সরকারি  ৩৭ ও ৮৫ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক আছেন ২৬ হাজার ৩১৯ জন। এর মধ্যে নারী ছয় হাজার ৭০৪ জন। হার ২৫ শতাংশ। ৩৭ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ হাজার ৪১৪ জন শিক্ষকের মধ্যে নারী শিক্ষক রয়েছেন ২ হাজার ৭২১ জন। হার ২২ শতাংশ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, কারিগরি ও ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠানে নারী-পুরুষ শিক্ষকতায় সমতা আনতে ২০১২ সালে  কঠোর বিধিমালা জারি করে। বিধি মালায় বলা হয়, মহানগরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৪০ ভাগ এবং ১৭টি দুর্গম উপজেলা ছাড়া সারা দেশের সকল প্রতিষ্ঠানে ২০ ভাগ নারী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। যত দিন পর্যন্ত সমসংখ্যক নারী শিক্ষক নিয়োগ না হবে ততদিন  পুরুষ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যাবে না। এর ব্যত্যয় হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারিদের এমপিও বন্ধ করা হবে। নতুন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে এ বিধান না মানলে পাঠদানের অনুমতি দেওয়া হবে না। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় পুরুষ প্রার্থীদের আবেদনের দরকার নেই উল্লেখ করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। দুইবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরে নারী শিক্ষক না পেলে পুরুষ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যাবে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, নারীরা সকল পাবলিক পরীক্ষায় মেধার পরিচয় দিয়েও শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের  আত্মীয়তা  ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং ক্ষমতার দাপটের কারণে পিছিয়ে পড়ছেন। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ অখ্যাত পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নারী শিক্ষকের কোটা পূরণ না করে পুরুষ শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে থাকে।  এছাড়া মাদরাসায় ধর্মীয় গোঁড়ামির কারণে নারীদের নিয়োগে আগ্রহী নয়।এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী কোটা না মেনে নিয়োগ দিলে তাদের এমপিওভুক্ত করা হয় না। তবে মফস্বলের অনেক প্রতিষ্ঠানে যোগ্য নারী শিক্ষক পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে মাউশির অনুমোদন নিয়ে পুরুষ শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে থাকে। তবে এক্ষেত্রে কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।      এনএম/ এমএমজেড/এএইচ/পিআর