দেশজুড়ে

মেধার জোরে স্বপ্ন জয়ের পথে নাজীফা

নাজীফা তাসনিম লাবীবা। অদম্য মেধাবী। জন্ম থেকেই তার দু’চোখে আলো নেই। তাই বলে দমে যায়নি। ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার প্রতি মনোযোগী। চোখে আলো না থাকলেও মনের জোর অসম্ভব রকমের। একবার শুনলেই পড়া মুখস্থ করে ফেলতে পারে। মেধাকে পুঁজি করেই দশম শ্রেণি পর্যন্ত পার করেছে।

রোববার (৩০ এপ্রিল) থেকে ধুনট সরকারি এনইউ পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে শ্রুতিলেখকের সহযোগিতায় এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে নাজীফা। নাজীফা ধুনট সদরের বিলকাজুলী গ্রামের সহকারী অধ্যাপক ওবায়দুল্লাহ লিটনের মেয়ে। গোপালনগর ইউএকে উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে সে। তাকে সহযোগিতা করছে অনুজ সহপাঠী শ্রুতিলেখক রোকনুজ্জামান। নিজের চোখের আলো দিয়ে আলোকিত মানুষ গড়ার পথে সঙ্গী করে নিয়েছে নাজীফাকে।

নাজীফা জানায়, ব্রেইল পদ্ধতি, অডিও রেকর্ডিং ও ইউটিউবে লেকচার শুনে পাড়া মুখস্থ করে সে। পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় মেধাতালিকায় বৃত্তি পেয়েছে।

পড়াশোনার পাশাপাশি গান-বাজনাতেও অনন্য প্রতিভার অধিকারী। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত সংগীতশিল্পী সে। দুই বোনের মধ্যে বড় নাজীফা। মা জান্নাতুল ফেরদৌসী সুইটি গৃহিণী।

প্রথম দিন বাংলা বিষয়ের পরীক্ষা ভালো হয়েছে। ভবিষ্যতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষক হতে চায় অদম্য মেধাধী এই শিক্ষার্থী।

নাজীফার বাবা ওবায়দুল্লাহ লিটন বলেন, জন্মগতভাবেই নাজীফা দু’চোখে কম দেখতো। মেয়েকে নিয়ে আমি বড় দুশ্চিন্তায় পড়ি। অনেক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলেও কোনো সুফল মেলেনি। কিন্তু অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে নাজীফা পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। তার স্মরণশক্তি খুব ভালো। আমি এখন আশাবাদী, সে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করবে।

নাজীফার মা জান্নাতুল ফেরদৌসী সুইটি বলেন, মেয়েকে নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম। এখন অন্য ছেলে-মেয়েদের চেয়ে নাজীফা পড়ালেখায় বেশি মনোযোগী। পড়ার প্রতি প্রবল ইচ্ছাশক্তিই তাকে সব প্রতিবন্ধকতাকে দূর করে এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে।

এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র সচিব তফিজ উদ্দিন বলেন, শিক্ষা বোর্ডের অনুমতি নিয়ে একজন শ্রুতিলেখকের মাধ্যমে নাজীফাকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রোকনুজ্জামান শ্রুতি লেখকের দায়িত্ব পালন করছে।

শ্রুতিলেখক রোকনুজ্জামান জানায়, প্রশ্ন বললেই সঙ্গে সঙ্গে নাজীফা আপু আমাকে উত্তর বলে দেন। আমি শুধু তার হয়ে খাতায় উত্তর লিখে দিচ্ছি। এতে কোনো সমস্যা হয়নি। পরীক্ষা ভালো হয়েছে।

এফএ/জেআইএম