বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব কেএম ওবায়দুর রহমানের একমাত্র কন্যা শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু। পিতার অনুসৃত পথে চলা এ নারী প্রতিনিধিত্ব করছেন তরুণ প্রজন্মেরও। সদালাপী শ্যামা ওবায়েদের রাজনীতির বাইরেও রয়েছে অন্য এক ভুবন। জড়িত রয়েছেন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে। পাশাপাশি রাজনীতির এই গ্ল্যামার কন্যা পাকা হাতেই সামলাচ্ছেন সংসার ও ব্যবসা। টকশোতে নিয়মিত সরব তিনি। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির এ নারী সদস্য ইয়ুথ মুভমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি ও জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। একই সঙ্গে বিএনপির কূটনৈতিক টিমের সদস্য। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপ করেছেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মানিক মোহাম্মদ।জাগো নিউজ : একই সঙ্গে ব্যবসা রাজনীতি সংসার ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় রয়েছেন, নিজেকে কি হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন?শামা ওবায়েদ : মা হিসেবে পরিচয়টা ভেতর থেকে আসে। সব নারীই মনে হয় মা হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। তবে যদি পেশার দিকটা বিবেচনা করি তাহলে সমাজসেবক হিসেবে পরিচয় দেব। কারণ আমি বিভিন্ন সামাজিক কাজ করি। রাজনীতিটাতো মানুষের সেবা করার বিরাট একটা মাধ্যম। রাজনীতিতে আসার আগেও আমি বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত ছিলাম। আমার ব্যাকগ্রাউন্ড টেকনিকাল তথা আইটি ওরিয়েন্টেড। তারপরও আমাদের অন্য যে ব্যবসা রয়েছে সেখানেও পেশাদায়িত্ব বজায় রেখে কাজ করার চেষ্টা করছি। জাগো নিউজ : আপনিতো বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত, তবে কোন দিকে বেশি সময় দেয়া হয়?শামা ওবায়েদ : বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনীতিতে বেশি সময় দিচ্ছি। গত কয়েক বছর আমার এলাকায় অনেক সময় দিতে হয়েছে। আমাদের দলের নেতাকর্মীরাতো অনেক হয়রানির মধ্যে রয়েছেন। মামলা হামলা তো আছেই। এজন্য দলের নেতাকর্মীদের সুখে দুঃখে পাশে থাকতে বেশি সময় দিতে হচ্ছে।জাগো নিউজ : দেশের রাজনীতিতে নারীদের অবস্থাটা আসলে কোথায়?শামা ওবায়েদ : যদি সত্যি কথা বলতে চাই, তাহলে বলব অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভাল। তবে আরো ভাল হওয়া প্রয়োজন। কারণ বাংলাদেশ মনে হয় বিশ্বে একমাত্র দেশ যেখানে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেত্রী উভয়ই নারী। এখনতো তিনজন। বর্তমান পার্লামেন্ট বা তার আগের পার্লামেন্ট বা মন্ত্রিসভা সবখানে অনেক মন্ত্রী রয়েছেন। স্পিকারও নারী। এত নেত্রী থাকার পরও আমি মনে করি তৃণমূল থেকে আমরা নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলি, কিন্তু ডিসিশন মেকিং লেভেলে সেভাবে সুযোগ দেয়া হয় না। দেখাও যায় না। নারীরা অনেক শ্রম দিচ্ছে, সময় দিচ্ছে, সংসার পরিচালনা করার পরও কাজ করছে। তারপরও তাদেরকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় আনা হয় না। এই জায়গায় অনেক ক্রটি বিচ্যুতি রয়েছে। আমরাতো কেবল রাজনীতির কথা বলছি। কর্পোরেট, খেলা, শিক্ষার জগতে দেখেন। দেখবেন প্রচুর নারী কাজ করছে। মেয়েরা এভারেস্ট জয় করছে। অলেম্পিকে স্বর্ণ জয় করছে। মেয়েদের এখন আর কোন সীমা পরিসীমা নেই। গত কয়েকবছর ধরে এসএসসি, এ এইচএসসি পরীক্ষায় রেজাল্ট ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের অনেক ভাল হচ্ছে। বিশেষত বাংলাদেশে কাজ করার জন্য মেয়েদের অনেক সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে আমি বলতে চাই আমাদের বিশাল যে জনগোষ্ঠি যারা অর্থনীতিতে অবদান রাখছে তারা গার্মেন্টস কর্মী। এরা কিন্তু ভীষণভাবে আমাদের অর্থনীতিতে সহযোগীতা করছে। এখন ইউনাইটেড ন্যাশন ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা কমনওয়েথ প্রত্যেকেই বাংলাদেশে নারীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশংসা করে। কর্পোরেট সেক্টরে নারীরা ভাল করছে। আমি বলব রুট লেভেল থেকে যারা রাজনীতি করছেন তাদেরও অনেক সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সেটা তারা করতে পারছে না। সংসদে সরাসরি নির্বাচন করে আসার মতো নারীর সংখ্যা খুবই কম। এটা বাড়ানো দরকার। এখন রাজনীতি মানে কি। পেশিশক্তি দেখানো বা মারামারি সন্ত্রাস। প্রত্যেকটা লোকাল ইলেকশনে সশস্ত্র হয়ে যেতে হয়। যদি নিরস্ত্র হয়ে যান হয় মার খেয়ে আসতে হবে, অন্যথায় হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। এই জিনিসগুলো কিন্তু নারীদেরকে বিরত রাখে। সুস্থ রাজনৈতিক পরিস্থিতি থাকলে নারীরা মোর ক্যাপাবল এজ সেইম ক্যাপাবল এজ মেন। সে যায়গাগুলোতে আমাদের কাজ করতে হবে। জাগো নিউজ : রাজনীতিতে কি নারীদের যথার্থ মূল্যায়ন হচ্ছে?শামা ওবায়েদ : হচ্ছে না। নারীদের আরো বেশি মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন। নারীদের যোগ্যতা আছে। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যোগ্য ও শিক্ষিতাদের আরো বেশি করে রাজনীতিতে আসা উচিত। কারণ তারা পজিটিভ ভূমিকা রাখতে পারবে। দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য কাজ করার তাদের অনেক ক্ষেত্র আছে। সাধারণ নারীরা কিন্তু সবসময় ঐ সুযোগগুলো পায় না। যেমন আমি যদি আমার দলের কথাই বলি। আমার দলে অনেক নারীই কাজ করছেন। আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও অনেক পজিটিভ। তিনি নারীদেরকে এপ্রিশিয়েটও করেন। আসন্ন কাউন্সিলে হয়তো সে রকম কিছু একটার প্রতিফলন ঘটতে পারে। সেগুলো হওয়ার প্রয়োজনও রয়েছে। আবারও বলছি দুই বড় দলে কয়জন নারী সরাসরি নির্বাচিত হয়ে সংসদে আসছেন। বা তাদেরকে এলাকায় নির্বাচন করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। সেটা কিন্তু নারীদের ক্ষমতায়নে একটা বিরাট জায়গা। জাগো নিউজ : রাজনৈতিক দলগুলো একটা কমিটমেন্ট রয়েছে। সামনে তো বিএনপির কাউন্সিল। কাউন্সিলে কি অন্তত ৩৩ শতাংশ নারীকে পদায়ন করা হবে?শামা ওবায়েদ : সেটার প্রতিফলন অবশ্যই ঘটবে। সে রকম প্রক্রিয়ায় কাজও চলছে। রাজনীতি কিন্তু আগের চেয়ে অনেক কঠিন ও নোংরা হয়ে গেছে। রাজনীতিতে যেখানে ছেলেদেরকেই শামাল দেয়া মুশকিল সেখানে এ অসুস্থ রাজনীতির মধ্যে মেয়েদের আসাটা অনেক জটিল। সুস্থ রাজনীতির জন্য আবার ভাল লোকের প্রয়োজন রয়েছে। আবার ভাল লোক আসতে চায় না কারণ অসুস্থ রাজনীতি বহমান। সমস্যা হল এটাই। অসুস্থ রাজনীতি বলতে কোন্দল সন্ত্রাস, আপনি কোন জায়গায় যেতে পারবেন না। রাস্তায় নামলে প্রশাসন বা ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হবেন। বিগত দিনে তারা ছাত্রলীগ-পুলিশ-যুবলীগের নির্যাতনের শিকার হয়েছে। সেই জায়গা থেকে আমি মনে করি আমাদের রাজনীতিও পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। ভাল ছেলেমেয়েরা যাতে রাজনীতিতে আসতে পারে সেটারও একটা ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে।দেখুন একটা দেশে একাধিক দল থাকতেই পারে। এটা খুবই স্বাভাবিক। একেক জনের আদর্শ একেক রকম হতেই পারে। যেমন আমি জাতীয়তাবাদের আদর্শে বিশ্বাসী। আমার বাবা সব দলের নেতাকর্মীদেরকে শ্রদ্ধা-ভালোবাসা দেখিয়েছেন। কাঁদা ছোঁড়াছুড়িটা আগে অনেক কম ছিল। এখন এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে আমি একটা দল করলে অন্য দলের কাউকে সহ্যই করবো না। এই যে অসুস্থ রাজনীতির একটা প্রবণতা এটা থেকে অবশ্যই বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে নতুন প্রজন্ম খুব ভাল একটা ভুমিকা রাখতে পারে। যারা রাজনীতিতে নতুন তারা কিন্তু এখন আর গতানুগতিক চিন্তা করেন না। ইতিহাস নিয়ে তাদের তেমন মাথাব্যথা নেই। তারা চিন্তা করে আমি বিএনপি করি, তুমি আওয়ামী লীগ তাই বলে কি দেশের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করতে পারি না? দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অনেক ইস্যু আমাদের রয়েছে সে ইস্যুগুলোতে আমরা কেন একমত হতে পারবো না? যেমন জঙ্গিবাদের ইস্যু। এটা আমাদের সকলেরই সমস্যা। আমাদের সন্তানরা এখানে বাস করছে। আমাদেরকে যদি এ দেশেই বাস করতে হয়, তাহলে জঙ্গীবাদের ইস্যুতে সবার সম্মিলিত মোকাবেলা প্রয়োজন। কিন্তু আমরা পারছি না। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এই যে আমরা তিস্তার পানি পাচ্ছি না, তা নিয়ে ঐক্য হচ্ছে না কেন? এসব তো দেশের স্বার্থের বিষয়। ঐক্য হওয়ার কথা ছিল। আমি আওয়ামী লীগ করি আর তুমি বিএনপি করো এ জন্য কোন ইস্যুতে আমরা এক হতে পারবো না-এটা ঠিক না। আমি মনে করি নতুন প্রজন্ম এভাবে চিন্তা করে যে, দেশের স্বার্থরক্ষায় একত্রিত হয়ে কাজ করা সম্ভব। সরকারের কোন কাজ আমার পছন্দ না হলে আমি সমালোচনা করবো, এটা আমার অধিকার। কিন্তু এখন তো সেটাও করা যাচ্ছে না। দেশের একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমার যে স্বাভাবিক অধিকারগুলো রয়েছে যেটা সংবিধান আমাকে দিয়েছে, সেগুলো কিন্তু এখন চর্চা করতে পারছি না। জাগো নিউজ : দেশে চলমান নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধরোধে করণীয় কি?শামা ওবায়েদ : নারীদের উপর যে অত্যাচার, শিশু হত্যা বা যেভাবে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, তা খুবই ভয়াবহ ব্যাপার। যারা মহিলা এমপি, মন্ত্রী রয়েছেন তাদের আরো জোরালো বক্তব্য রাখা উচিৎ। বিএনপি আমলে এত হয়েছে, আওয়ামী লীগের আমলে এত হবে না কেন? এটা কোন বিষয় না। আমরাতো প্রতিযোগিতায় নামিনি। একটা ধর্ষণই বা কেন হবে আমার দেশের মাটিতে? সে বিষয়ে কেন আমাদের ঐক্য থাকবে না। আমি যদি বলি গতকাল দশটা বাচ্চা ধর্ষিত হয়েছে, ওরা বলবে তোমার আমলেও এত বাচ্চা ধর্ষণ হয়েছিল। তাহলে তো এসব চলতে থাকবে। আমি মনে করি বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দায়িত্ব রয়েছে কমন ইস্যুগুলোতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। জাগো নিউজ : রাজনীতিতে নারী হিসেবে কোন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন? বা আদৌ কোনো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন কি না?শামা ওবায়েদ : আমার পরিবারকে আমি ধন্যবাদ দিতে চাই, কারণ তারা আমাকে শতভাগ সমর্থন করে। পরিবারের দেখাশুনা করেই কিন্তু বাহিরে রাজনীতি করতে হয়। আমি পরিবার থেকে শতভাগ সমর্থন পাই। যেটা আমার জন্য খুবই ইতিবাচক। তবে কাজটি যদি কোন পুরুষ করে তাহলে সে মূল্যায়িত হয়ে যাচ্ছে। তার মানে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গাতে নারীরা এখনো অনেক পিছিয়ে। জাগো নিউজ : আপনি কি বলতে চাইছেন দলে নারীদের সেভাবে মূল্যায়ন হচ্ছে না?শামা ওবায়েদ : না, আমি তেমন কিছু বলবো না। কারণ দল থেকে আমি অনেক সমর্থন পাই। বিশেষ করে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে শীর্ষ কর্তাদের সমর্থনও পাচ্ছি। আমার মূল্যায়ন হচ্ছে না সেটা আমি বলবো না। ব্যক্তিগতভাবে আমাকে তেমন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়নি। তবে একটা কথা বলতে পারি, বাবা মারা যাওয়ার পর নিজের এলাকায় আমাকে অনেক শ্রম দিতে হয়েছে। সেখানে লোকাল কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে এখন কোনো সমস্যা নেই। আমার সুবিধার জায়গাটা ছিল বাবা। আমি গর্ববোধ করি এজন্য আমি যে দলের লোকের সঙ্গেই কথা বলি না কেন, বাবার পরিচয় দিলে আলাদা একটা সন্মান বা শ্রদ্ধা আমি পাই। জাগো নিউজ : বাবার কারণে রাজনীতিতে আপনি যে সুবিধাটা পাচ্ছেন অন্য নারীদের ক্ষেত্রেতো এ সুযোগ হচ্ছে না?শামা ওবায়েদ : আমার বাবার কারণে হয়তো সে সুযোগটা আমি পাই। কারণ আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক ও বিএনপির মহাসচিব ছিলেন- এটা একটা বিষয়। অনেক নেতাদেরও ছেলে-মেয়ে রয়েছে। সবাইকে একইভাবে কাজ করতে দেখি না বা অনেকের হয়তো ইচ্ছাও নেই। আবার সবাই রাজনীতি করবে এমন কোনো কথাও নেই। আমার ইচ্ছা আছে বা আমি চাই। যেহেতু আমি বাবার একমাত্র সন্তান। আমার বাবা কষ্ট করেছেন, জনগণের জন্য কাজ করেছেন। এখন আমরা হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির কথা শুনি অথচ আমার বাবা মৃত্যুর সময় ব্যাংকে দেনা রেখে গেছেন। আমি চেয়েছি আমার বাবা এত কষ্ট করেছেন সন্তান হিসেবে উনার জায়গাটা আমি ধরে রাখবো। এলাকাটা ধরে রাখার জন্যই কিন্তু আমার রাজনীতিতে আসা। আমাকে এমপি-মন্ত্রী হতে হবে এজন্য রাজনীতিতে আসিনি। বাবার শ্রমটা ধরে রাখতেই রাজনীতিতে আসা। বাবা-মার কোন অবদান থাকলে ছেলে মেয়েদের হয়তো কিছুটা সুবিধা হয়। তবে দিনের শেষে কিন্তু আপন যোগ্যতায়ই উঠতে হবে। আপনাকে কেউ টেনে তুলবে না। আপনার যোগ্যতা, শ্রম, মেধা দিয়েই আপনাকে উঠতে হবে। সেটা কেবল রাজনীতিতে নয়, যে কোনো ক্ষেত্রেই। এখন রাজনীতিতে ভারত, পাকিস্তান, চীন, মালেশিয়া বা পশ্চিমাদেশগুলোতে দেখেন মেধাভিত্তিক অনেকে রাজনীতিতে আসছেন। পেশি শক্তি দিয়ে রাজনীতি হবে না। মেধা ও বুদ্ধিমত্তাও লাগবে। সুতরাং দিনের শেষে আপনার বাবা-মা যেই হোক না কেন, আপনাকে শ্রম-মেধা দিয়েই উঠতে হবে। এছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। জাগো নিউজ : আপনি শিশু হত্যা, ধর্ষণের কথা বলেছেন ভবিষ্যতে শিক্ষা নিয়েও কাজ করবেন। শিশু নির্যাতনের যে ভয়াবহ চিত্র আমরা দেখতে পাচ্ছি এসব বিষয়ে আপনার দল সরব নেই কেন?শামা ওবায়েদ : আমাদের প্রত্যেকটা সংবাদ সম্মেলনে কিন্তু এসব নিয়ে কথা বলি। হচ্ছে না যে সেটা নয়, আমরা করছি। তবে আমি মনে করি শিশুহত্যা নিয়ে আরো কথা বলা উচিৎ। এটা সামাজিক সমস্যা হোক, রাজনৈতিক সমস্যা হোক বা আইন শৃঙ্খলা সমস্যার হোক এটা নিয়ে আমাদেরকে আরো জোরালো প্রতিবাদ জানানো উচিৎ। এটা মহামারি আকার ধারণ করছে।জাগো নিউজ : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান নিয়ে গবেষণা করবেন বলে শোনা যাচ্ছে, কবে নাগাদ শুরু করবেন?শামা ওবায়েদ : বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রথম সারির প্রতিষ্ঠানগুলো একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চলে। আমাদের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার মান একটা পর্যায়ে রয়েছে। তবে উচ্চ স্তরের শিক্ষার্থীরা হঠাৎ করে সেই অর্থে শিক্ষা পাচ্ছে না। অনেকগুলো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। এরা টাকা নিচ্ছে অনেক, কিন্তু সেই অনুপাতে শিক্ষার মানটা..। তারা কি সিস্টেমে করছে, কেউ জানে না। এটা যাদের দেখভাল করার কথা তারাও বিষয়টা ঠিকভাবে জানে কি না তা বলতে পারবো না। এটার একটা নীতি মালা দরকার। জাগো নিউজ : আপনার সঙ্গে যারা রাজনীতি করছেন কেউ ফেবারিট আছে কিনা?শামা ওবায়েদ : সমসাময়িক যারা রাজনীতি করছে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। বিশেষভাবে বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে যারা এখনো রাজনীতিতে রয়েছেন তাদেরকে সাধুবাদ জানাই। আমি চাই রাজনীতিতে আরো বেশি মেয়েরা আসুক। তবে ফেভারিট বলতে সুনির্দিষ্ট কেউ নেই।জাগো নিউজ : নারী দিবসে কোনো বিশেষ বার্তা রয়েছে কিনা বা আপনার প্রত্যাশা কি?শামা ওবায়েদ : নারীর ক্ষমতায়ন শুধু মুখে বললে হবে না। এর মধ্যে একটা কথা বলি আমাদের অনেক নারী ভাইস-চেয়ারম্যান রয়েছেন, কিন্তু তাদের কোন ক্ষমতা নেই। পুরুষ ভাইস-চেয়ারম্যানরা যা বলে বা এলাকার এমপি যা বলে পুতুলের মতো তাই করতে হয়। দায়িত্বও দেয়া হয় না। নিজেদের পয়সা কড়ি খরচ করে নারীরা ঠিকই ভাইস-চেয়ারম্যান হচ্ছেন, কিন্তু তাদেরকে দিয়ে কোন কাজ করানো হচ্ছে না। তাহলে ভাইস- চেয়ারম্যান হয়ে লাভ টা কি? কতজন নারী ভাইস-চেয়ারম্যান রয়েছেন সে সংখ্যা দিয়ে নারীর ক্ষমতায়ন বিচার করা যাবে না। নারীর ক্ষমতায়ন বিচার হবে তখনই যখন তাদের যোগ্যতা, শিক্ষা অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ দেবেন। নারীর ক্ষমতায়ন তখনই হবে যখন একজন পুরুষের পাশাপাশি নারী সিদ্ধান্তের জায়গাটায় শক্ত ভূমিকা রাখতে পারবে। আশা করবো যারা নারী রাজনীতিবিদ আছেন, তারা আরো জোরালো ভুমিকা রাখবেন। জাগো নিউজ : সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।শামা ওবায়েদ : আপনাকে ও জাগো নিউজকে ধন্যবাদ।এমএম/ এমএমজেড/এএইচ/এমএস