নওগাঁয় গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গ্রাম উন্নয়ন কর্মের (গাক) মাঠকর্মী মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীরা অফিসে গিয়ে হট্টগোল করলে তাদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়।
সোমবার (১ মে) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সংস্থার কার্যালয় শহরের বালুডাঙ্গা শাখায় (চকমুক্তার মহল্লা) এ ঘটনা ঘটে। মাঠকর্মী মিজানুর রহমান ১৯ মাস আগে এ শাখায় যোগদান করেন। তার বাড়ি বগুড়ায়।
ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, শহরের চকপ্রসাদ মহল্লার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম, গৃহবধূ জেমি, মরিয়ম ও তার মেয়ে নুরজাহান। কয়েকমাস আগে এ চার গ্রাহকের মাধ্যমে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা (জনপ্রতি ৬০ হাজার টাকা) সংস্থা থেকে উত্তোলন করেন মাঠকর্মী মিজানুর রহমান। পরে সংস্থায় টাকা পরিশোধের শর্তে টাকাগুলো তাদের কাছ থেকে নিয়ে নেন তিনি। এখন টাকা পরিশোধে গড়িমসি শুরু করেছেন মিজানুর রহমান। টাকা নেননি বলে গ্রাহকদের কাছে অস্বীকার করেছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন গ্রাহকরা।
সোমবার বিকেল ৩টার দিকে মিজানুরকে তার ভাড়া বাসা থেকে ডেকে নিয়ে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা সংস্থার কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে প্রায় দুই ঘণ্টা উত্তেজনা চলে শাখার ম্যানেজারের সামনে। মিজানুর কিছু টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। পরে ম্যানেজার সমঝোতার আশ্বাস দিলে গ্রাহকরা চলে যান। ১০-১২ গ্রাহকের প্রায় পাঁচ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী গৃহবধূ মরিয়ম বলেন, সংস্থা থেকে লেনদেনের সুবাদে মাঠকর্মী মিজানুর রহমানের সঙ্গে পরিচয় হয়। তার টাকার প্রয়োজন হওয়ায় আমাকে দিয়ে টাকা উত্তোলন করান। তিনি সপ্তাহে দেড় হাজার টাকার কিস্তি দিতেন। এখনো প্রায় ২০ হাজার টাকা সংস্থাটির পাওনা আছে। এরমধ্যে এলাকায় মিজানুর রহমান আর আসেন না। ফোন করলেও ঠিকমতো ধরেন না। এখন টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করছেন।
আরেক ভুক্তভোগী গৃহবধূ জেমি বলেন, মাঠকর্মী মিজানুর রহমান আমাকে দিয়ে ৬০ হাজার টাকা তুলিয়েছেন। তিনি নিজে সপ্তাহে দেড় হাজার টাকা কিস্তি দিতে চেয়েছিলেন। কয়েকটা কিস্তির টাকা জমা দিয়েছেন। কিন্তু ঈদের আগে থেকে আর টাকা দিচ্ছেন না। এভাবে বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে টাকা তুলে নিয়ে হয়রানি করছেন।
একই গ্রামের আরেক ভুক্তভোগী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তার (মাঠকর্মী মিজানুর রহমান) মা গুরুতর অসুস্থতার কথা বলে আমাকে টাকার প্রয়োজনের কথা জানান। পরে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুতে ৬০ হাজার টাকা উত্তোলনের পর অর্ধেক করে ভাগ করে নেওয়া হয়। আরও ১২ হাজার টাকা আমার কাছে ধার নেন। মোট ৪২ হাজার টাকা নিয়েছেন তিনি। বিনিময়ে আমাকে জনতা ব্যাংকের একটি ফাঁকা চেক দেন।’
গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে মাঠকর্মী মিজানুর রহমান বলেন, আগামী ৭ মে টাকা পরিশোধ করা হবে।
এ বিষয়ে এনজিও গাকের নওগাঁ বালুডাঙ্গা শাখা ব্যবস্থাপক সাফিউল আলম বলেন, গত ৮ মার্চ এ শাখায় যোগদান করেছি। যোগদানের পর বুঝতে পারি গ্রাহকের সঙ্গে মাঠকর্মী মিজানুর রহমানের কিছু সমস্যা হচ্ছে। পরে তদন্ত করে দেখা যায়, গ্রাহকদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক বেশি হওয়ার কারণে ঋণ তুলে উভয়ের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেন। কিন্তু গ্রাহকদের সঙ্গে ব্যক্তিগত কোনো লেনদেন করা যাবে না। সত্যতা পাওয়ার পর গত ১৭ এপ্রিল থেকে তাকে মাঠ থেকে তুলে নেওয়া হয়। এরপর ১০-১২ গ্রাহক আমার কাছে অভিযোগ করেন।
তিনি আরও বলেন, মিজানুর রহমান বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে কী পরিমাণ টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে এবং জমা হয়েছে কাগজপত্র না দেখলে বলা সম্ভব না।
আব্বাস আলী/এসআর/জিকেএস