নারী ও শিশু

‘তোমার তো ৮ সন্তান, দুটি না থাকলে কিছু হবে না`

নড়াইলের রত্নগর্ভা সফল জননী নারী মুক্তিযোদ্ধা অপর্ণা রানী বিশ্বাস বর্তমানে মেরী স্টোপস নড়াইল ক্লিনিকে প্যারামেডিক পদে কর্মরত আছেন। তিনি অগ্রণী ব্যাংকসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। অপর্ণা রানী বিশ্বাস বিভিন্ন কৃতিত্বের জন্য ইতোমধ্যে জয়িতা, রত্নগর্ভা নারী, সফল জননীসহ একাধিক পুরষ্কার অজর্নের গৌরবে ভূষিত হয়েছেন। ৮ মার্চ ১৯৫৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন অপর্ণা দাস। নড়াইল শহরে বাবা মৃত পঞ্চানন দাস ও মা মৃত মাখন বালা দাসের ৭ মেয়ে, ১ ছেলের মধ্যে চতুর্থ তিনি। তিনি ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে বৃত্তি নিয়ে শিবশংকর বালিকা বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে লেটার মার্কসহ এসএসসি ও নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাশ করেন। অপর্ণা দাস বলেন, দারিদ্রতার জন্য উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে পারিনি বলে আমার অপ্রাপ্তিগুলো আমার সন্তানদের দিয়ে পূর্ণ করেছি।তিনি জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত থাকা অবস্থায় এ্যাডভোকেট অরবিন্দু দাদার নিকট জানতে পরলাম ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ভয়াল কালো রাতের কথা। শরীরের ভীতর শিহরিয়ে উঠলো তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম দেশ মাতাকে রক্ষা করতে হবে, বাঁচাতে হবে দেশকে, দেশের মানুষকে। আমরা তখন লোহাগড়ার কুন্দসী গ্রামের তুলসীদের বাড়িতে। মাকে বোঝালাম, তোমার ৮টি সন্তান ২টি না থাকলে কিছু হবেনা। এই বলে রওনা হই ভারতের উদ্দেশ্যে। ভারতের গোবরা ক্যাম্পে সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বে মহিলা মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে যোগদান করে ৩ মাস নার্সিং প্রশিক্ষণ এবং আত্মরক্ষার জন্য রাইফেল প্রশিক্ষণ শেষে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবার লক্ষ্যে আগরতলা ক্যাম্পে আমরা মোট ৪০ জন রওনা হই এবং অনেক আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলি।অপর্ণা রানী দাসের ১ মেয়ে ও ২ ছেলে। মেয়ে ডালিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স মাস্টার্সসহ পিএইচডি করে বর্তমানে ইউএনডিপিতে ঢাকায় কর্মরত আছেন। বড় ছেলে পল্লব দাস (এমবিএ ফাস্টক্লাস) বর্তমানে স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকে কর্মরত এবং ছোট ছেলে পাভেল দাস ইংরেজিতে অনার্স মাস্টার্স করে বাগেরহাটে সহকারী তথ্য অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন।৩ সন্তান জন্মদানের পর স্বামী বাবু দ্বিজেন্দ্রনাথের সঙ্গে বিরোধের পর ৩ সন্তানকে সুশিক্ষিত করার জন্য বাবার বাড়িতে বসবাস শুরু করেন তিনি। কিন্তু সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার সময়ই বঞ্চিত হন পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে। বর্তমানে তিনি নড়াইল শহরের কুড়িগ্রাম মৌজায় ৫ শতক সরকারি জমিতে ডিসিআর কেটে বসবাস করছেন।হাফিজুল নিলু/এফএ/এবিএস