মতামত

সমন্বিত চেষ্টায় এগিয়ে যাবে নারী

জন্মের পর থেকেই বঞ্চনার শিকার নারী। একই পরিবারে সচেতনতায় ও খেয়াল খুশিতেও মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের উপর চোখ বেশি থাকে পরিবারের। মাছের বড় টুকরাটি কে খাবে? ছেলে। ভালো স্কুলে পড়বে কে? ছেলে। দীর্ঘদিনের এই কুসংস্কার এখনো ভাঙেনি পুরুষতান্ত্রিক সমাজে। আর এ কারণেই পুরুষ ও নারীতে বৈষম্য বিদ্যমান।আজ (মঙ্গলবার) বিশ্ব নারী দিবস। প্রতিপাদ্য ‘অধিকার মর্যাদায় নারী পুরুষ সমানে সমান’। রক্তে মাংসে গড়া নারী ও পুরুষে কোনো বিতর্ক থাকতে পারে না। পুরুষ যা পারে নারীও তাই পারে। কিন্তু সে সুযোগ নারীকে দেয়া হয় না। সুযোগের অভাবে নারীরা পিছিয়ে পড়াদের দলে।এমন নয় যে বাংলাদেশে নারীদের অবস্থানগত উন্নতি ঘটেনি। বেশ পরির্তন এসেছে। ব্যবসায় নারী, রাজনীতিতে নারী ও শিক্ষাক্ষেত্রে নারীদেরতো মাতৃতুল্য ভাবছে সরকার। সংসদে সরকারি ও বিরোধী দলীয় নেত্রী নারী। এমনকি স্পিকারও নারী। পড়ালেখাতেও এগিয়েছে নারীরা।কিন্তু সামগ্রিক চিন্তা-চেতনায় পুরুষতান্ত্রিকতা রয়ে গেছে। যার উত্তোরণে শুধু পুরুষের মানসিকতায় পরিবর্তন নয়, নারীদেরও মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। এতো কিছুর মধ্যেও এখনো যৌতুক রয়ে গেছে। একটি মেয়েকে বিয়ের সময় পরিবারকে যৌতুকের ভার বহন করতে হয়। অথচ ধর্মীয় দিক থেকেও নারীরা পুরুষের কাছ থেকেই পাওয়ার কথা!নারীদের মেধা বিকাশে প্রধান বাধা আসে নিজ পরিবার থেকেই। ছেলেদের ভালো খাওয়ানো ও ভালো স্কুলের ব্যবস্থা করা হলেও মেয়েদের বেলায় তা করা হয় না। আর সেসব কারণ কোনোভাবে তুচ্ছ নয়। বরং মনে বড় রকমের ছায়া ফেলে। নারীও সেই ছোটবেলা থেকে সংকীর্ণতা দেখে দেখে নিজের মন সংকীর্ণ করে ফেলে।যেসব পরিবারের নারীরা ভালো অবস্থানে গেছে- খোঁজ নিয়ে দেখা যাবে এর পেছনে পরিবারের শতভাগ সহযোগিতা রয়েছে। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার ঊর্ধ্বে যেতে না পারলে জাতি হিসেবে আমাদের পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি।কর্মক্ষেত্রেও নারীদের সমান সুযোগ এখনো হয়নি। যদিও নিজে ভালো পরিবেশে কাজ করছি। পরিবারে কিংবা কর্মক্ষেত্রে পুরুষতান্ত্রিকতা নেই। কিন্তু সব পরিবার ও জব সেক্টর এক নয়। পুলিশে এখনো চ্যালেঞ্জিং পদে কিংবা কাজে নারীদের দায়িত্ব দেয়ার আগে সাত/পাঁচ ভাবতে নয়। পারবে কি পারবে না এমন দোলাচলে ভুগতে দেখি ঊর্ধ্বতনদের। অথচ পুরুষদের বেলায় তেমন চোখে পড়ে না। এমন মানসিকতা বদলাতে হবে। নারীরা আজ কোথায় নেই। সবখানে নারীরা মেধার পরিচয় দিচ্ছে। তবে সমানতালে সম-সুযোগ পেলেই সব নারীর পক্ষে উঠে আসা সম্ভব।উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে তাকালে নারীদের অবস্থান অনেক বেশি উন্নত। কারণ একটাই সেখানে বৈষম্যহীন সমাজে নারী ও পুরুষ সমানে সমান। তাই সেখানে পুরুষ যা পারে নারীরাও তাই। বাংলাদেশেও সে চেষ্টা চলছে। তবে সবকিছুর আগে দরকার মানসিকতার পরিবর্তন। মানসিকতায় পরিবর্তন না আসলে শুধু স্লোগানে ও বক্তৃতায় নারীদের ভাগ্য বদলাবে না। নারীদেরও নিজেদের অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে চেতনা ও দায়িত্ববোধ জাগ্রত করতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিজের অধিকার আদায় করে নিতে হয়। নারীদের অধিকার আদায় করার এটাই সময়।লেখক : মিনা মাহমুদা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পিবিআই)পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে ২৫তম বিসিএস দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও র্যাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।জেইউ/এসএইচএস/এআরএস/আরআইপি